Mamata Banerjee

যে রাজ্যে যার শক্তি বেশি, সেই রাজ্যে আসন রফা নিয়ে সেই দলই শেষ কথা বলবে, চাইছেন মমতা

বৈঠকের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে তৃণমূলের শীর্ষ সূত্রে জানানো হচ্ছে, এর আগের বৈঠক অর্থাৎ ১ সেপ্টেম্বরে বেঙ্গালুরুতে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল যে, ‘যত দ্রুত সম্ভব’ আসন রফার নিষ্পত্তি করা হবে।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:২২
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

প্রায় সাড়ে তিন মাস পরে আগামী মঙ্গলবার বৈঠকে বসতে চলেছে বিরোধীদের মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’। সেখানে সম্ভবত নিজেদের পুরনো সূত্রকেই ফের নতুন করে সামনে আনতে চলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

দলীয় সূত্রে খবর, বৈঠকে কংগ্রেস-সহ বাকি বিরোধী দলগুলির নেতা-নেত্রীদের উদ্দেশে মমতার বার্তা হবে, যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী, সেই রাজ্যে আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে সেই দলকেই শেষ কথা বলতে দিতে হবে। কোন বিরোধী দল কত আসনে লড়বে, তা স্থির করবে সেই রাজ্যের প্রধান (ভোটে প্রাপ্ত আসন সংখ্যার নিরিখে) দলটি। তৃণমূলের দাবি, অধিকাংশ বিরোধী দলই মমতার এই সূত্রে সহমত। যদিও কংগ্রেসের মতো সর্বভারতীয় দল কী ভাবে এই ‘ফর্মুলা’ মেনে নেবে বা আদৌ মেনে নেবে কি না, সে বিষয়ে এখনও সংশয় যথেষ্ট। কারণ, সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অনেক রাজ্যেই নামমাত্র আসনে প্রার্থী দিতে পারবে রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খড়্গের দল।

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ‘ইন্ডিয়া’র দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্বকে আসন সমঝোতার জন্য রাজ্য নেতৃত্বকে সময় দিতে হবে। তবে তা অনির্দিষ্ট কালের জন্য নয়। চলতি বছরের মধ্যে (৩১ ডিসেম্বর) তা সেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেই সূত্রের খবর। পাশাপাশি, ওই বৈঠকে ‘ইন্ডিয়া’র একটি সচিবালয় তৈরি এবং এই বিরোধী মঞ্চের মুখপাত্রদের নিয়ে একটি প্যানেল তৈরির বিষয়েও কথা হবে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

বৈঠকের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে তৃণমূলের শীর্ষ সূত্রে জানানো হচ্ছে, এর আগের বৈঠক অর্থাৎ ১ সেপ্টেম্বরে বেঙ্গালুরুতে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল যে, ‘যত দ্রুত সম্ভব’ আসন রফার নিষ্পত্তি করা হবে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তখনই কংগ্রেস নেতৃত্বকে স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব’ কথাটিকে বদলে দিয়ে একটি তারিখ নির্দিষ্ট করা হোক। সেই সময়সীমা ৩০ সেপ্টেম্বর অথবা খুব বেশি হলে ১৫ অক্টোবর রাখারও অনুরোধ ছিল তাঁর। তৃণমূলের যুক্তি ছিল, তা হলে চব্বিশের ভোটের আগে জেলায়-জেলায় লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে অনেকটা বেশি সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু তাতে রাজি
হয়নি কংগ্রেস।

তৃণমূল সূত্র জানাচ্ছে, বিষয়টিতে সব থেকে বেশি আপত্তি জানিয়েছিলেন সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি। অন্য দিকে, পাঁচ রাজ্যের বিধানসভায় খুবই ভাল ফলাফল হবে বলে আশা ছিল রাহুল গান্ধীর দলের। সে ক্ষেত্রে আসন রফায় অন্য বিরোধী দলের তুলনায় অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা যাবে, এমনটাই হিসাব ছিল কংগ্রেসের।

এখন রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ডিসেম্বরে পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলের পরে কংগ্রেসের দরকষাকষির জায়গাটি অনেকটাই সঙ্কুচিত। এর আগের পটনা, মুম্বই এবং বেঙ্গালুরুর বৈঠকে যে ‘দাপট’ নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীরা বসেছিলেন, তা এই মুহূর্তে কার্যত অন্তর্হিত। বেশির ভাগ রাজ্যেই কংগ্রেসের শক্তিক্ষয় হয়েছে। যেখানে তারা ‘একের সামনে এক’ হিসেবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে উদ্যত (রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্য) সেখানে এখন কংগ্রেস হীনবল। অন্য কোনও আঞ্চলিক দলের উপস্থিতি এই রাজ্যগুলিতে না থাকলেও, অর্থাৎ ওই সমস্ত রাজ্যে লোকসভার প্রায় সব আসনে নিজেদের প্রার্থী দিলেও, সাম্প্রতিক পরাজয়ের ধাক্কা এত দ্রুত কংগ্রেস কতখানি কাটিয়ে উঠতে পারবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের বড় অংশেই প্রবল সংশয় রয়েছে।

তৃণমূল নেত্রীর আসন রফার সূত্র মান্যতা পেলে, বিহারে নীতীশ কুমার ও তেজস্বী যাদব, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তামিলনাড়ুতে এম কে স্ট্যালিন, মহারাষ্ট্রে উদ্ধবপন্থী শিবসেনা এবং এনসিপি, উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ সিংহ যাদব, পঞ্জাব এবং দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরীওয়ালই আসন রফার ক্ষেত্রে শেষ কথা বলবেন সংখ্যার আধিক্যের জন্য। ফলে সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস যদি আঞ্চলিক দলের চাপে কর্নাটক, তেলঙ্গানার মতো রাজ্যগুলির বাইরে সর্বত্র তাদের প্রার্থী ছড়িয়ে দিতে না পারে, তা হলে দীর্ঘমেয়াদি ভাবে দলের অস্তিত্বের সঙ্কট নিশ্চিত। এমতাবস্থায় কংগ্রেস মঙ্গলবারের বৈঠকে কতটা সমঝোতায় যেতে রাজি থাকে, এখন সেটিও দেখার।

সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশে যেমন মোট ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৮ থেকে ১০টির বেশি আসন কংগ্রসকে ছাড়তে রাজি নন এসপি নেতা অখিলেশ। অথচ কংগ্রেস চাইছে ২২টি আসন। গোবলয়ে সম্প্রতি বিধ্বস্ত রাহুল গান্ধীর দল এসপি এবং অন্যান্য শরিক দলগুলির সাহায্যে ‘ইন্ডিয়া’ মারফত উত্তর ভারতের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে (আসন সংখ্যার হিসাবে) আসনের মুখ দেখতে মরিয়া। তবে তাতে আদৌ রাজি নয় এসপি। এ বিষয়ে এসপি, আপ, জেডি(ইউ), আরজেডি-র মতো দলগুলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সূত্রে একমত।

কে কোন রাজ্যে শক্তিশালী, তার মানদণ্ড হিসাবে দলগুলির পূর্ববর্তী নির্বাচনে আসনসংখ্যা ও প্রাপ্ত ভোটই ধর্তব্যের মধ্যে রাখতে চাইছে তারা। সেই হিসেবে উত্তরপ্রদেশে ১০টির বেশি আসন কংগ্রেসকে ছাড়ার কথা নয় এসপি-র এবং পশ্চিমবঙ্গে দু’টির বেশি আসন কংগ্রেসকে ছাড়ার কথা নয় তৃণমূলেরও। সম্প্রতি তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “আমাদের সূত্র অনুযায়ী মালদহ-দক্ষিণ এবং বহরমপুর, এই দু’টি আসন কংগ্রেসকে ছাড়া হবে। বৈঠকে জানানো হবে, ওই দুই আসনে তৃণমূলের কোনও প্রার্থী দাঁড়াবেন না। কিন্তু এর বেশি আসন বাংলায় কংগ্রেসকে ছাড়া হবে না। বামদের সঙ্গে কোনও সমঝোতার প্রশ্নই নেই পশ্চিমবঙ্গে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন