যাব কি যাব না, এই দোলাচলে অনেক দলই ধোঁয়াশা তৈরি করে রেখেছে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য কোনও ‘কিন্তু’ রাখেননি। কংগ্রেস সভানেত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে দিল্লি এসে তৃণমূল নেত্রী বুঝিয়ে দিলেন, বিধানসভা ভোটের স্মৃতি পিছনে ফেলে জাতীয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ গড়তে চাইছেন তিনি। আর তার জেরে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে সিপিএমের।
মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সংসদের ভিতরে বিরোধী দলগুলি যে ভাবে একজোট হয়েছিল, সেই আন্দোলনকে সংসদের বাইরে নিয়ে যেতেই কাল একটি যৌথ অভিযানের সূচনা করতে চাইছেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। তাতে যোগ দিতেই মমতার আজ দিল্লি আসা। এর আগে সংসদ চত্বরের বিরোধী আন্দোলনে তৃণমূলের উপস্থিতি সত্ত্বেও যোগ দিয়েছিল সিপিএম। কিন্তু আজ কলকাতায় বসে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কালকের আন্দোলনে তাঁরা থাকছেন না। ঘরোয়া স্তরে সমাজবাদী পার্টি, বিএসপি-ও আসার ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে। কংগ্রেসের মঞ্চে যেতে রাজি নন অরবিন্দ কেজরীবালও। নীতীশ কুমারের দল জেডি (ইউ) গোড়া থেকেই নোট নাকচের পক্ষে। তবু বিহারের জোটসঙ্গীকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল কংগ্রেস। জেডি (ইউ) প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, তাদের যাওয়ার ইচ্ছা নেই।
তবে এ সবের পরোয়া না করেই আজ দিল্লি পৌঁছে আগামী কালের বৈঠক নিয়ে তৎপর হয়েছেন মমতা। মোদী-বিরোধী সব শক্তিকে একজোট হওয়ার যে আবেদন তিনি বিধানসভায় করেছিলেন, তা মাথায় রেখেই টেলিফোনে কথা বলেন লালুপ্রসাদ, কেজরীবালের সঙ্গে। আহমেদ পটেলের সঙ্গেও আলোচনা করেন তিনি।
তবে সংসদের বাইরে বিরোধীদের নিয়ে এই প্রথম যৌথ কর্মসূচিতে যে ভাবে এক এক করে বিরোধী দলগুলি আপত্তি তুলছে, তার পরে কালকের অনুষ্ঠানে সনিয়া নিজে থাকবেন কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলছে না কংগ্রেস। জয়রাম রমেশের কথায়, ‘‘সনিয়া বা রাহুলের মধ্যে কে থাকবেন, তা কালই দেখা যাবে।’’ তবে দলের নেতাদের দাবি, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে বিরোধীদের একজোট করতে কালকের অনুষ্ঠান প্রথম ‘ছোট্ট’ পদক্ষেপ হবে।
কিন্তু ইয়েচুরির বক্তব্য, এ ধরনের কোনও আয়োজন করতে হলে সকলের সঙ্গে সবিস্তার আলোচনা করা উচিত। কিন্তু কংগ্রেস তা না করেই বৈঠক ডেকে ফেলেছে। ইয়েচুরি বলেন, ‘‘সংসদে ১৬টা দল মিলে যৌথ ভাবে মানুষের হয়রানির প্রতিবাদ হচ্ছিল। তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সকলের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। আরজেডি, জেডি (ইউ), এনসিপি-র মতো কয়েকটি দলের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সকলেরই বক্তব্য, সময়-তারিখ দিয়ে একটা সাংবাদিক সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হল। অথচ কী কী বিষয়ে সেখানে বলা হবে, সেটাই কেউ জানে না!’’ যদি অ-বিজেপি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের এক জায়গায় সামিল করে প্রতিবাদে অন্য মাত্রা যোগ করার হতো, তা হলে নীতীশ কুমার, অখিলেশ যাদব থেকে পিনারাই বিজয়ন, মানিক সরকারদের ডাকা যেত। কিন্তু সে সব কিছু না করে শুধু মমতাকে নিয়েই হইচই কেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন ইয়েচুরি।
জেডি (ইউ)-এর কে সি ত্যাগী বলেন, এখনও পর্যন্ত কোনও অভিন্ন কর্মসূচি নিয়েই আলোচনা হয়নি। যেমন, মমতা নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু বাকি বিরোধী দলগুলির অন্য মত। ফলে, বিরোধীদের মধ্যেই ঐক্য নেই। এরই মধ্যে ইয়েচুরি আবার উস্কে দিয়ে বলেছেন, এই মমতাই পটনায় গিয়ে নীতীশকে ‘গদ্দার’ বলে এসেছিলেন!
তবে কংগ্রেস মনে করছে, এর আগেও অনেক দল প্রথমে আপত্তি তুলেও শেষ পর্যন্ত কোনও না কোনও প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে দিয়েছে। নীতীশের আপত্তি সত্ত্বেও অতীতে শরদ যাদব এসেছেন। জয়রামের মন্তব্য, ‘‘কালকের অনুষ্ঠানে যাঁরা যোগ দেবেন না, তাঁরা ভবিষ্যতে যোগ দেবেন। এটা দীর্ঘ একটা লড়াইয়ের শুরু মাত্র।’’