নরেন্দ্র মোদীর সরকারের পতন ঘটাতে জোট গঠনে কংগ্রেসকে বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা সম্পূর্ণ খারিজ করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কাল সন্ধ্যায় সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বৈঠক সেরে আজ কলকাতা ফেরার আগে এক সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘একের বিরুদ্ধে এক আসন সমঝোতার সূত্র মানে হল এনডিএ-র বিরুদ্ধে যতটা সম্ভব জোট-প্রার্থী দেওয়া। এটা বিজেপির সঙ্গে আর একটি রাজনৈতিক দলের সংঘাত নয়। এটা জোটের সংঘাত।’’
উদাহরণ দিয়ে মমতা আরও বলেন, ‘‘একের বিরুদ্ধে এক মানে কিন্তু এই নয় যে, যে রাজ্যে কংগ্রেস শক্তিশালী নয়, সেখানে তারা প্রার্থী দেবে না। যেমন বিহারে কংগ্রেস লালুপ্রসাদের সঙ্গে রয়েছে। ওই রাজ্যে লালুপ্রসাদের সঙ্গে কথা বলেই জোটের প্রার্থী দেবে কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ-মায়াবতীর সঙ্গে থাকলে ওঁদের সঙ্গে কথা বলেই কংগ্রেস আসন পেতে পারে। অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নায়ডু, কর্নাটকে দেবগৌড়ার সঙ্গেও কংগ্রেস কথা বলতে পারে।’’
তৃণমূল শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেস প্রার্থী দিলে তাদের আপত্তি নেই। এ রাজ্যে কংগ্রেসের চার জন লোকসভার সাংসদ রয়েছেন। সেই আসনগুলি নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করতে তৃণমূল রাজি।
গত কাল মমতার বক্তব্য শোনার পরে সনিয়া গাঁধী বলেছিলেন, কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে তিনি কথা বলবেন। আজ কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেছেন, ‘‘আসন সমঝোতা যাই হোক, সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে ইউপিএ-র শরিক হিসাবে তাঁরা মমতাকে দেখতে চান।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যুব কংগ্রেসের নেত্রী থেকে শুরু করে আজ মমতা এই জায়গায় এসেছেন। তিনি কংগ্রেসের মতাদর্শ ভালই বোঝেন।’’ কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল আজ বলেন, ‘‘মোদী যদি প্রথম ফ্রন্ট হন, তা হলে আমরা সবাই মিলে হব দ্বিতীয় ফ্রন্ট। কাজেই লড়াইটা হবে এনডিএ বনাম ইউপিএ। অন্য ফ্রন্ট হওয়া মানে বিজেপির হাত শক্তিশালী করা।’’
মূল প্রশ্নটি হল, রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে ইউপিএ, নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত ফেডারাল ফ্রন্ট? রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘রাহুলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল। ভবিষ্যতে কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গেও আলোচনায় বসতে আমার কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু সনিয়া গাঁধী কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে অবসর নিলেও তিনি এখনও আছেন। আমি তাঁকে বলেছি, যাতে তিনি আরও কিছু দিন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় থাকেন।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোনও ব্যক্তিগত বাসনা নেই। কিন্তু দেশের সামনে সাম্প্রদায়িকতার বিপদ এসেছে। বাংলাতেও বিজেপি সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করার চেষ্টা করছে। এই অবস্থায় ইগো বিসর্জন দিয়ে আমাদের একজোট হতে হবে। বিভিন্ন রাজ্যে যার যেখানে শক্তি সে সেখানে লড়বে।’’
তবে আসন্ন লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে তৃণমূল। মমতার মতে, ‘‘একের বিরুদ্ধে এক লড়াই একটি আদর্শ পরিস্থিতি। কিন্তু বিরোধী দলগুলি নিজেরা আলোচনা করে কিছু আসনে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে পারে। একে বলা যেতে পারে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই। বিরোধীরা একত্রিত হলে তাদের ঝুলিতে যে শতকরা ৭০ ভাগ ভোট রয়েছে তার দু’-তিন শতাংশ বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের স্বার্থে আপস করাই যেতে পারে।’’ আহমেদ পটেলকে পুরো বিষয়টি বুঝিয়েছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নেতা মনোনয়ন পরে হবে। আগে হোক আসন সমঝোতা।’’