দেশের চার প্রান্তে চার বড় সভা চান মমতা

নোট বাতিলের পরে জাতীয় রাজনীতিতে মোদী-বিরোধী ঐক্যের যে পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছে, ২০১৯-এ তাকে বিরোধী জোটে পরিণত করার লক্ষ্যে আসরে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:১৯
Share:

নোট বাতিলের পরে জাতীয় রাজনীতিতে মোদী-বিরোধী ঐক্যের যে পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছে, ২০১৯-এ তাকে বিরোধী জোটে পরিণত করার লক্ষ্যে আসরে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কাল সন্ধ্যায় দিল্লিতে নামা থেকে আজ কনস্টিটিউশন ক্লাবের সাংবাদিক সম্মেলন— চব্বিশ ঘণ্টায় বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে দৌত্যে নিরন্তর তৎপর থাকলেন তৃণমূল নেত্রী। রাহুল গাঁধীকে পাশে নিয়ে যে ভাবে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সরব হলেন মমতা, কে বলবে কিছু দিন আগেও পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়তে হয়েছে তাঁকে!

Advertisement

তৎপরতার শুরু গত কাল সন্ধ্যায় রাজধানীতে পৌঁছেই। সাউথ অ্যাভিনিউর বাসভবনে পৌঁছেই ফোনে মমতা কথা বলা শুরু করেন বিরোধী নেতাদের সঙ্গে। প্রথমেই ফোন আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদকে। পটনা থেকে লালু জানান, অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারছেন না। মমতা লালুকে বলেন, তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে হবে, এক সঙ্গে মাঠে নামার সময় এসেছে। এর পরেই মমতা ফোনে কথা বলেন আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে। পঞ্জাবে প্রচারে ব্যস্ত কেজরীবাল তাঁকে জানিয়ে দেন— মমতা আন্দোলনে ডাকলে তিনি সব সময়ে থাকবেন। কিন্তু কংগ্রেসের ডাকা মঞ্চে তাঁর সামিল হওয়া সম্ভব নয়। এর পর কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লার সঙ্গেও কথা বলেন মমতা। পরে মমতা বলেন, ‘‘আমি সব নেতাকেই বলেছি— শুধু দিল্লি নয়, আসুন বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা যৌথ ভাবে আন্দোলন গড়ে তুলি। সম মনোভাবাপন্ন সব দলের নেতাদের নিয়ে সভা করি।’’ তৃণমূল নেত্রী জানান, আগামী মাসে অন্তত দু’বার যাতে নোট বাতিলের বিরুদ্ধে সব নেতাদের একত্র করা যায়, সেই প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

আজ সাংবাদিক সম্মেলনের আগে বিরোধী নেতারা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে নেন। সেটাও করা হয়েছে মমতারই পরামর্শে। কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল গত কাল মমতাকে ফোনে জানিয়েছিলেন, শুধু মাত্র সাংবাদিক সম্মেলনই করা হবে। মমতা তাঁকে বলেন, তার আগে নিজেদের মধ্যে এক বার বৈঠকে বসে নেওয়াটা খুবই জরুরি। রাহুল গাঁধী এই প্রস্তাব মেনে নেন। আজ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে প্রায় ৪০ মিনিট বৈঠক করেন ৮টি দলের প্রতিনিধিরা। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে মমতা বলেন, এর পরের সভায় শুধু এই ৮টি দল নয়, বাকি বিরোধীদেরও একজোট করার চেষ্টা করতে হবে। তাঁর দ্বিতীয় প্রস্তাব, দেশের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম— এই চারটি অঞ্চলে আলাদা আলাদা করে বিরোধী দলগুলির সভা-সমাবেশ করা প্রয়োজন। তিনি যে অন্য বিরোধী নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, সে কথাও সবিস্তারে রাহুলকে জানান মমতা। পরে সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘ভোট প্রচার এবং রাজনৈতিক কাজে ব্যস্ত থাকায় কিছু দলের নেতা আসতে পারেননি। প্রত্যেকটি দলের পৃথক পৃথক কর্মসূচি রয়েছে, মতাদর্শ রয়েছে। কিন্তু আমরা সবাই একত্রে বিষয়টি নিয়ে ন্যূনতম কর্মসূচি তৈরি করেছি। সবাই মিলে কথা বলেই এগোনো হবে।’’

Advertisement

আজ নিজের বক্তব্যেও মোদীকে ঝাঁঝালো ভাষায় আক্রমণ করেছেন মমতা। কৌতুকের মোড়কে রাজনৈতিক বার্তা দিতেও ছাড়েননি। তাঁর কথায়, ‘‘নোট বাতিলের জেরে সাধারণ মানুষ অনাহারে। ১০৭ জন ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন। অনেকেই উপোস করার জন্য তৈরি হচ্ছেন। কৃষক, শ্রমিক, দোকানদার, ব্যবসায়ী— সবাই ঘোর বিপদে। অথচ কিছু বলা যাবে না। ওরা বলছেন, কিছু বললেই গব্বর চলে আসবে!’’ মমতার কথায়, গব্বরের ভয় দেখানোটা ওদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। সমবেত হাস্যরোলের মধ্যেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘তোমরাই শুধু সাদা, আর বাকিরা কালো! জানি না কোন সাবান মেখে তোমরা রাতারাতি সাদা হয়ে গেলে!’’

কে বলবে, এ বছরের গোড়ায় তিক্ততা পৌঁছেছিল চরমে? আর এক নতুন অধ্যায়ের সন্ধিক্ষণে নতুন সখ্য চোখে পড়ল রাহুল-মমতার। মোদীকে খাটো করে দেখাতে ডিজিটাল দুনিয়ায় রাজীব গাঁধীর অবদানের কথা তুলে ধরেন মমতা। আবার মমতার খেই ধরে মোদীর বিরুদ্ধে সুর চড়ান রাহুল।

সন্ধ্যায় মমতার সঙ্গে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রীর সচিব ভাস্কর খুলবে। আসেন অন্ধ্রের তেলুগু দেশম সাংসদ রামমোহন রাও-ও। কালই কলকাতায় ফিরছেন মুখ্যমন্ত্রী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement