গোটাটাই যেন একটা থ্রিলার! প্রেমিকাকে খুন করে তাঁর দেহ নিয়ে ১৫ ঘণ্টা ঘুরলেন এক ব্যক্তি। পাঁচ দিন নিজের বাড়িতে প্রেমিকার দেহ লুকিয়ে রাখার পর অবশেষে উদ্ধার হল দেহ। উত্তর-পশ্চিম দিল্লির গুরমাণ্ডি এলাকার ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের নাম নবীন ক্ষত্রি। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আরজু সিংহের সঙ্গে নবীনের প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বহু দিন আগে। এমনকী সেই সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। জেরায় পুলিশকে নবীন জানিয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টি ফাঁস করে দেবেন বলে অনেক দিন ধরেই আরজু তাঁকে হুমকি দিচ্ছিলেন। বিষয়টা এমন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছয় যে, তিনি আরজুকে খুন করতে বাধ্য হন। নবীন বলেন, “ওঁর হুমকিতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই একেবারেই চুপ করিয়ে দিয়েছি।”
কী ভাবে ধরা পড়লেন নবীন?
নবীন পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন আরজুকে ডাকেন। আরজুর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তাঁর। আরজু ফের তাঁকে হুমকি দেন। নবীন সদ্য বিয়ে করেছেন। আর আরজুর সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ছিল। সেটা মেনে নিতে পারেননি আরজু। পরিবারকে তাঁদের সম্পর্কে কথা জানানোর জন্য নবীনকে চাপ দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। বার বার এই ঘটনায় বিরক্ত হয়ে খুনের পরিকল্পনা করেন নবীন। প্রথমে আরজুর পার্সটি মুখে জোর করে ঢুকিয়ে দেন যাতে তিনি চিত্কার করতে না পারেন। ওই অবস্থায় অনেক ক্ষণ লড়াই করার পর আরজু নেতিয়ে পড়েন। তার পর তাঁকে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করেন নবীন। আরজুর মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসলে নবীন ভয় পেয়ে যান। তার পর নিজেকে সামলে গাড়িতে রাখা টিস্যু পেপার দিয়ে আরজুর রক্ত পরিষ্কার করে গাড়িতে বসান। সিল্ট বেল্ট বেঁধে আরজুকে এমন ভাবে বসিয়ে দেন যেন মনে হবে তিনি ঘুমোচ্ছেন। তার পর গাড়ি চালিয়ে রাজপুরা যান। নবীন বলেন, “দেহ লোপাটের কথা মাথাতেই আসেনি। শুধু মনে হয়েছিল কখন বাড়িতে পৌঁছব।”
বাড়ি থেকে ঠিক কয়েক কিলোমিটার দূরে ক্ষত্রি গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাতের অন্ধকারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। তত ক্ষণে নবীন ৬টা চাদর এবং একটা কম্বল জোগাড় করে ফের গাড়ি নিয়ে একটা অজানা জায়গায় যান। সেখানে গিয়ে আরজুর দেহকে ভাল ভাবে চাদর ও কম্বলে মুড়িয়ে গাড়িতে ভরে ফের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। বাড়ির কাছেই এক ব্যক্তিকে দিয়ে দেহটাকে সবার অলক্ষে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যান।
রাত পেরিয়ে ভোর তখন ভোর পাঁচটা। নবীন নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। দু’ঘণ্টা ধরে আরজুর দেহ আগলে কাঁদতে থাকেন। বেলা সাড়ে ৭টা নাগাদ যখন বাড়ির অন্য লোকেরা জাগেন, নবীন ঘাবড়ে যান। ঘুমোচ্ছেন ভেবে বাড়ির লোকেরা তাঁর দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন। কী করবেন ভেবে উঠতে না পেরে আরজুর দেহ ঘরের এমন জায়গায় লুকিয়ে ফেলেন যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে। এর পর বেলা বাড়তেই ঘরে তালা মেরে নবীন বেরিয়ে যান। জেরায় নবীন পুলিশকে আরও জানান, তার পর তিন দিন ওই ঘরে তিনি ঢোকেননি। পরিবারের লোকেরা জিজ্ঞেস করলে বলেছেন, প্রচুর জিনিসপত্র ঘরে ভরে যাওয়ায় ঢোকা যাবে না। কিন্তু তাঁর এই মিথ্যে ধরা পড়তে বেশি সময় লাগেনি। এরই মধ্যে নবীনের স্ত্রী সেই ঘরে ঢুকলে একটা পচা গন্ধ পান। পচা গন্ধটা কীসের? নবীনকে তাঁর স্ত্রী প্রশ্ন করলে বলেন, “ঘরের কোণে কোথাও ইঁদুর পচেছে হয়তো।” কিন্তু এই গন্ধই পরে রহস্যের উন্মোচন করে। পুলিশ গিয়ে আরজুর পচাগলা দেহ উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় নবীনকে।
আরজুর দেহ উদ্ধারের পর তাঁর সহপাঠীরাও হতবাক। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, আরজুর মতো একজন স্মার্ট মেয়ে কী ভাবে এক জন দশম শ্রেণি পাস করা ছেলেকে পছন্দ করল? আর কী ভাবেই বা নবীনের জালা ফাঁসল? তাংর সহপাঠীদের অনেকেই জানিয়েছেন, একটি লোক প্রায় দিনই কলেজে আসতেন। ক্লাস সেরে আরজু তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে যেতেন। একই কথা শিক্ষিকারাও বলেছেন। কেউ কেউ আবার বলেছেন, আরজুর মুখে তাঁর বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। কলেজের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ২ ফেব্রুয়ারি আরজুকে ওই ব্যক্তির সঙ্গে শেষ বারের মতো দেখা গিয়েছিল।
আরও পড়ুন...