AIIMS Delhi

হৃদ্‌রোগী বাবাকে নিয়ে এমসের লাইনে দিনরাত

পল্লবের বাবা অনিলকুমার সিংহ গত ১৫ সেপ্টেম্বর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। তাঁর তিনটি ধমনীতে ব্লকেজ ধরা পড়ে এবং জানা যায়, মাত্র ২০ শতাংশ কাজ করছে হৃদ্‌যন্ত্র।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:২৩
Share:

অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস, দিল্লি। —ফাইল চিত্র।

‘বাবা মারা যাবে। তাড়াতাড়ি, অথবা খুব তাড়াতাড়ি।’

Advertisement

ফরাসি সাহিত্যিক আলব্যের কামুর বিখ্যাত উপন্যাসের প্রথম লাইনের মতো শোনাচ্ছে? সেই যে, ‘‘মা মারা গিয়েছে। আজ অথবা গত কাল...।’’ কিন্তু বাবাকে নিয়ে লেখা এই লাইনগুলোয় আদতে কোনও সাহিত্য নেই। আছে মধ্যবিত্ত ঘরের এক ছেলের অসহায়তা। তিনি লিখছেন, ‘আমি জানি আমি কী বলছি। এটা লিখছি দিল্লির এমস হাসপাতালের লাইনে দাঁড়িয়ে।’ এক্সের সেই থ্রেডেই অনেকগুলো পোস্টে নিজের ঘটনা লিখেছেন উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়ার পল্লব সিংহ। সেই পোস্ট ঘিরে এখন ইন্টারনেট তোলপাড়। নড়ে বসেছে ‘দেশের গর্ব’ এমসও।

পল্লবের বাবা অনিলকুমার সিংহ গত ১৫ সেপ্টেম্বর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। তাঁর তিনটি ধমনীতে ব্লকেজ ধরা পড়ে এবং জানা যায়, মাত্র ২০ শতাংশ কাজ করছে হৃদ্‌যন্ত্র। নভেম্বরের শেষে গোরক্ষপুর থেকে বাবাকে দিল্লি এমসে আনেন পল্লব। ২৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে এক হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পান। অনিলের ইকো-কার্ডিয়োগ্রাম আগে হয়ে থাকলেও এমস ফের ওই পরীক্ষা করিয়ে আসতে বলে। তাতে সাত দিন পেরোয়। পল্লবের দাবি, এ বার আরও ২৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পরে পদ্ম-সম্মানে ভূষিত এক চিকিৎসক তাঁর বাবাকে দেখেন। ওষুধ দিয়ে বলেন, হৃদ্‌যন্ত্র দুর্বল। পরে আসতে হবে।

Advertisement

পল্লব লিখছেন, ‘আমরা ফিরে এলাম। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম, অবস্থা গুরুতর এবং দ্রুত অস্ত্রোপচার দরকার। জানি না কেন ওই ডাক্তারবাবু কোনও শল্যচিকিৎসকের কাছে আমাদের পাঠালেন না। ৪৫ দিন ধরে বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে বুঝলাম, সে সব জায়গায় অস্ত্রোপচার করাতে হলে আমাদের যথাসর্বস্ব বেচে দিতে হবে।’ অগত্যা আবার এমস। ওই ডাক্তার তখন ছুটিতে। কবে ফিরবেন, কেউ জানে না। ১৫ দিন পরে তিনি আসেন। আরও ২৪ ঘণ্টা লাইন দেওয়া অনিলকে পরীক্ষা করে শেষ পর্যন্ত সার্জনকে দেখানোর কথা লিখে দেন। এমসে সে দিনই বেলা ২টোয় শল্যচিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পান পল্লবেরা। কিন্তু তিনি আসেন সন্ধ্যা ৬টায়। এই চার ঘণ্টা ধরে ঠান্ডায় একটা লোহার চেয়ারে ঠায় বসে থাকতে হয় গুরুতর অসুস্থ অনিলকে! পল্লব জানাচ্ছেন, সার্জন তাঁদের কাগজপত্র রেখে যেতে বলেন। আসতে বলেন পরের দিন। সে দিন ছিল শুক্রবার। হাসপাতালে গিয়ে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষার পরে তাঁরা শোনেন, ওই শল্যচিকিৎসক কাগজপত্র দেখে উঠতে পারেননি। সোমবার আবার আসতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই পল্লবের পোস্ট। তিনি মনে করছেন, সার্জন আরও কিছু পরীক্ষা করাতে দিলে সে সব পাট চুকিয়ে অস্ত্রোপচার হতে হতে বছরখানেক লেগে যাবে। এ দিকে তাঁর মা স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত। দু’বছর ধরে তাঁরও চিকিৎসা চলছে এমসে। পল্লব বলছেন, ‘যদি মন্ত্রী হতাম, এই হাসপাতালই আমার পিছনে দৌড়ত। আমি তো ভোটার মাত্র— যে ভোটের সময়ে রাজা। তার পরে কেউ না!’

তবে পল্লবের পোস্ট ভাইরাল হতেই এগিয়ে এসেছে অনেকের হাত। তাঁদের মধ্যে আছেন সমাজসেবী-অভিনেতা সোনু সুদও। সোনু লিখেছেন, ‘আপনার বাবাকে মারা যেতে দেব না ভাই। নিজের নম্বর পাঠান।’ হৃদ্-শল্যচিকিৎসক প্রশান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘মুম্বই আসুন। সায়ন হাসপাতালে তিন-চার দিনের মধ্যে অস্ত্রোপচার করব নিখরচায়। আর যদি এতটা আসতে না পারেন, অন্য হাসপাতালে যান। চাঁদা তুলে টাকা জোগাড় করব।’

দিল্লি এমসের দাবি, পল্লবের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছে। এক্সে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিখেছেন, ‘আমরা জেনেছি, রোগী দেওরিয়াতে নিজের গ্রামে আপাতত ভাল আছেন। এখন ওঁদের কোনও সাহায্যের দরকার নেই। কোনও অসুবিধা হলে ওঁকে এমসে আনা হবে। টুইটের (এক্স) পরেই আমাদের হেল্পলাইন নম্বর ওঁদের দেওয়া হয়েছে।’ এমস যে যোগাযোগ করেছে, তা জানিয়েছেন পল্লবও। সেই বিষয়ে এক্সে তিনি লিখেছেন, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার পরিস্থিতিতে তিনি নেই। অনেক পথ বাকি। সংবাদ সংস্থা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন