জম্মু ও কাশ্মীরে ধ্বংসযজ্ঞের ছবি। ছবি: পিটিআই।
ভারী বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত জম্মু ও কাশ্মীর। গোটা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে বন্ধ ৫,০০০-এরও বেশি সড়ক। অন্য দিকে, ধস নেমে বিপর্যয়ের জেরে মঙ্গলবারই বন্ধ হয়ে গিয়েছে বৈষ্ণোদেবী যাত্রা। বৃহস্পতিবার বেলা পর্যন্ত আরও কয়েকটি দেহ ধ্বংসাবশেষের নীচ থেকে উদ্ধার হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১।
গোটা ঘটনায় বৈষ্ণোদেবী যাত্রার অনুমতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সরকার। উল্লেখ্য, বৈষ্ণোদেবী মন্দির পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন লেফ্টেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিংহ। বৃহস্পতিবার জম্মু ও কাশ্মীরের উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুরেন্দ্র চৌধুরী লেফ্টেন্যান্ট গভর্নরকে সরাসরি আক্রমণ করে বলেন, ‘‘যখন জম্মু সম্পূর্ণরূপে ডুবে গিয়েছিল, তখন উনি বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে কর্মসূচি পরিচালনা করছিলেন। যখন পহেলগাঁও হামলা হয়, তখন উনি ছিলেন দিল্লিতে! মচৈল যাত্রা থেকেও উনি কোনও রকম শিক্ষা নেননি। যখন বৈষ্ণোদেবীতে আগে থেকেই দুর্যোগের সতর্কতা জারি ছিল, তখন কেন সেখান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হল না? এরা ইচ্ছাকৃত ভাবে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’’ বুধবার জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। দুর্যোগের সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও আধিকারিকেরা কেন বৈষ্ণোদেবী যাত্রা বন্ধ রাখেননি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। উপ-মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়েছেন, বৈষ্ণোদেবীতে এত বড় দুর্ঘটনা অতীতে কখনও ঘটেনি। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের আসলে হত্যা করা হয়েছে। এটি একটি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র। এর সঙ্গে জড়িত সমস্ত আধিকারিকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা উচিত।’’
মঙ্গলবার মেঘভাঙা বৃষ্টি ও ভূমিধস নামে জম্মু-কাশ্মীরের ডোডার ভাদেরওয়ায়। সেখানে চার জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যাওয়ার পথে জম্মুর রেইসি জেলায় অর্ধকুঁয়ারীতেও ধস নামে। সেখানে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই পুণ্যার্থী। তাঁদের মধ্যে পঞ্জাব, দিল্লি, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দারাও রয়েছেন। নিহতদের পরিবারপিছু ৯ লক্ষ আর্থিক সহায়তারও ঘোষণা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে যাঁরা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা, তাঁদের পরিবারের জন্য চার লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
ইতিমধ্যে জম্মু-কাশ্মীরে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার অন্তত ৩০০০ রাস্তা ভেসে গিয়েছে। সড়ক বিভাগের ২১০০ রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত। শ্রীনগরে ঝিলম নদীর জলস্তর প্রায় বিপদসীমা ছুঁইছুঁই। ভারী বৃষ্টিতে জম্মুর বেশ কিছু জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উদ্ধার অভিযানে নেমেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দল, পুলিশ এবং সেনা। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাগুলি থেকে এখনও পর্যন্ত পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কাশ্মীর জুড়ে বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ।