শেষযাত্রা: সুকমায় মাওবাদীদের গুলিতে নিহত সিআরপি জওয়ান অরূপ কর্মকারের দেহ পৌঁছল কলকাতায়। মঙ্গলবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
দিন দশেক আগে আশিস মাকে ফোন করে বলেছিলেন, দুই ছেলেকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আগামী ৩০ এপ্রিল থেকেই লম্বা ছুটিতে সে বাড়ি আসছে। তবে নির্দিষ্ট দিনের পাঁচ দিন আগেই ঝাড়খণ্ডের গঢ়বার গড়নাহার বাড়িতে ফিরলেন ২৭ বছরের আশিস সিংহ। কফিন-বন্দি হয়ে।
দৃশ্য-২। বিহারের শেখপুরার ফুলছোড় গ্রাম। দিন পাঁচেক আগেই চার বছরের বিকাশের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন রঞ্জিত কুমার। বলেছিলেন খুব শীঘ্রই বাড়ি যাবেন। সঙ্গে নিয়ে যাবেন খেলনা। এর মধ্যে ছুটির দরখাস্তও করে দিয়েছিলেন তিনি। ২৮ মে থেকে ছুটি। বছর তিরিশের রঞ্জিত তাঁর ছুটি শুরুর এক মাস আগেই ফিরে এলেন গ্রামে। তবে তিনিও কফিন-বন্দি হয়েই।
গত কাল ছত্তীসগঢ়ের সুকমায় নিহত ২৫ সিআরপি জওয়ানের নামের তালিকায় রয়েছে আশিস, রঞ্জিতের নাম।
দুই রাজ্যের দু’টি গ্রামের, দুই বাড়ির ছবি কমবেশি একই রকম। গঢ়বার গ্রামে সকাল থেকেই চার বছরের আরভ ও দু’বছরের অনুভবকে নিয়ে পথের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায় আশিসের স্ত্রী আশা দেবী। তাঁর বাবা বাড়ি আসছেন, তার জন্য বাড়িতে এত ভিড় কেন বুঝতে পারছে না আরভ। অনুভবের তো সেই বোধই নেই। আশা দেবীর আক্ষেপ, ‘‘আরভকে কী করে বোঝাই!’’
আরও পড়ুন: জামিন পেলেন সাধ্বী প্রজ্ঞা
শেখপুরার গ্রামে রঞ্জিতের বাড়িতে স্ত্রী সুনীতা দেবী বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। বৃদ্ধ বাবা-মা চিৎকার করে কাঁদছেন। বাড়িতে ভেঙে পড়েছে গ্রাম। এর মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে চার বছরের বিকাশ। বাবা আসবে। সকলে এমন কেন করছে, তা বুঝতে পারছে না সে।
সুকমার হামলায় রঞ্জিত ছাড়াও বিহারের বাসিন্দা, আরও পাঁচ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। সাসারামের কৃষ্ণকুমার পাণ্ডে, বৈশালীর অভয় কুমার, দ্বারভাঙার নরেশ যাদব, দানাপুর ক্যান্টনমেন্টের সৌরভ কুমার ও ভোজপুরের অভয় মিশ্র রয়েছেন তালিকায়। এই শোকতাপের মধ্যে ব্যতিক্রমী দ্বারভাঙার নরেশ যাদবের বাবা, রামনারায়ণ যাদব। তিনি ছেলের জন্য গর্বিত। দাবি তাঁর একটাই, ‘‘সরকার মাওবাদীদের সমূলে বিনাশ করুক।’’