আগামী সোমবার সকাল ১০টা থেকে ৪ ঘণ্টার জন্য গোলদিঘি মল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মলের ব্যবসায়ীরা।
শিলচর পুরসভা পরিচালিত তিন লক্ষ বর্গফুটের এই মল আকারে উত্তর-পূর্বের সর্ববৃহত্। ২০১২ সালে এর উদ্বোধন হয়। তিন বছরেই নানা সমস্যা বাসা বেঁধেছে। নিরাপত্তা কর্মীর অভাব। শৌচাগারগুলি নিয়মিত সাফসুতরো হয় না। বিশুদ্ধ পানীয় জলের সমস্যা। এয়ার কন্ডিশনারের একটি চিলার অনেকদিন থেকেই অকেজো। লোডশেডিংয়ে অনেকটা সময় জেনারেটরই ভরসা। গোলদিঘি মল মার্চেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আরও অভিযোগ, পুরসভা যে মল ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করেছে, তাতে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি নেই। যাঁদের টাকায় মল তৈরি হয়েছে, পরিচালিত হচ্ছে, তাঁরাই কমিটির বাইরে। ফলে তাঁদের সমস্যা নিয়ে কেউ কথা বলেন না।
ব্যবসায়ীরা জানান, জেনারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, এসকেলেটর, জল সরবরাহ, বৈদ্যুতিক সামগ্রী সব কিছুরই নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামতি প্রয়োজন। সেই মেরামতির ব্যাপারটাই নেই এই মলে। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রামানুজ গুপ্ত বলেন, ‘‘এর ফলে ব্যবসায়ীদের ভুগতে হচ্ছে। গোলদিঘি মলের ব্যবসায়ীরা বার বার পুরপ্রধানের কাছে দাবিপত্র পেশ করেছেন। কিন্তু তার সুরাহায় কোনও চেষ্টা হয়েছে বলেও মনে হয়নি তাঁদের। এরই প্রতিবাদে আন্দোলনের রাস্তায় যেতে হয়েছে বলে জানান অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা স্বপন কুমার পাল, কার্তিক সাহা, পার্থ পাল, প্রণয় পাল, অনুপকান্তি দাস।
তাঁরা বলেন, প্রথম পর্যায়ে তাঁরা সোমবার চার ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছেন। এরপরও সমস্যার হাল না হলে চরম পদক্ষেপ গ্রহণে তাঁরা বাধ্য হবেন। পুরসভাকে মল পরিচালনা থেকে হাত গুটিয়ে নিতে বলেন তাঁরা। দাবি করেন, ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্ত করে মল ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে স্বশাসিত করা হোক। পুরসভা যে মল উন্নয়নের টাকা অন্য খাতে সরিয়ে দেয়, তারও সমালোচনা করেন ব্যবসায়ীরা। রামানুজবাবু, অনুপবাবুরা জানান, এই ক্ষেত্রে কংগ্রেস-বিজেপিতে কোনও ফারাক নেই। কংগ্রেসের তমাল বণিক সভাপতি থাকার সময় পুর এলাকার রাস্তা সংস্কারে এই তহবিল ব্যবহার করেছেন। এ বার নীহাররঞ্জন ঠাকুর দায়িত্ব নিয়েই মল ফান্ডের টাকায় পুরকর্মীদের বেতন মিটিয়েছেন। সমস্যা সমাধানে অনীহার বেলায়ও কংগ্রেস ও বিজেপি-র পুরসভা একই পথের পথিক। মল ম্যানেজমেন্ট কমিটি করা হয়েছে, মলে তাদের অফিসও রয়েছে। আছেন কর্মীরা। কিন্তু পুরপ্রধানের অনুমোদন ছাড়া একটি বাল্বও বদলাতে পারেন না তাঁরা।
শিলচর শহর কংগ্রেসের নেতা শৈবাল দত্ত অবশ্য রাস্তা সংস্কারে তমাল বণিকের মল ফান্ড ভাঙার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি ব্যবসায়ীদের সমস্যার প্রতি আন্তরিক মনোভাব প্রকাশ করেন। শৈবালবাবু বলেন, ‘‘এই বনধের প্রতি আমাদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে। কংগ্রেস আমলে মল ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে ব্যবসায়ীদের না ঢোকানোর পিছনে তাঁদের যুক্তি, মল পরিচালনার জন্য উপবিধিটি রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট নিয়মকানুন মেনে তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ব্যবসায়ীদের কমিটিতে রাখার কোনও সংস্থান নেই।’’ শৈবালবাবুর দাবি, ‘‘কংগ্রেস পুরসভায় নেই এক বছর হতে চলেছে। ফলে মল দেখভালে যে কাজগুলি নিয়মিত করা হত এক বছর ধরে সেগুলি বন্ধ। সে জন্যই সমস্যা তীব্র হয়েছে।’’
বিজেপি পুর পরিষদীয় দলের মুখপাত্র রাজেশ দাস এই সময়ে ব্যবসায়ীদের বনধ ডাকার খবরে বিস্মিত। তিনি বলেন, যে সব সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, ‘‘সব ক’টিই কংগ্রেস আমলের। মল ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে ব্যবসায়ীদের না রাখার মতো উপবিধি সুস্মিতা দেব তৈরি করেছিলেন। এইচআরডি নামে যে নিরাপত্তা এজেন্সির বিরুদ্ধে বহু সংস্থার অভিযোগ, তাদের মলে নিয়োগ করেছেন তমালকান্তি বণিক। ফলে ব্যবসায়ীদের উচিত মল বন্ধ না করে সুস্মিতা দেব, তমালকান্তি বণিকদের বাড়ির সামনে গিয়ে ধরনা দেওয়া।’’ তাঁর মতে, ব্যবসায়ীদের প্রতিটি দাবিই ন্যায়সঙ্গত। তা উপলব্ধি করে তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। উপবিধি সংশোধনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। সেখানে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হচ্ছে। পরবর্তী সভায় সংশোধিত উপবিধির চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। এ ছাড়া, সমস্ত কিছু নিয়মিত দেখভালের জন্য পৃথক টেন্ডার ডাকা হয়েছে। নিরাপত্তা এজেন্সি এইচআরডি-কে এরই মধ্যে তাঁরা সরিয়ে দিয়েছেন। নতুন নিয়োগের জন্যও টেন্ডার ডেকেছে পুরসভা। সোমবার টেন্ডার খোলা হবে। অস্থায়ী ভাবে টাইগার সিকিউরিটি এজেন্সিকে মলের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘শীঘ্রই তাঁরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।’’ বিজেপি-র পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের মল বন্ধ না করার অনুরোধ করা হয়েছে।’’