National News

পাকিস্তানের থেকে মুক্তি চেয়ে তুমুল বিক্ষোভ অধিকৃত কাশ্মীরে, চলছে সেনা পীড়ন, বাইরে এল ভিডিয়ো

পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, স্থানীয় বাসিন্দারা ওই পদযাত্রা বয়কট করেছিল। কিন্তু ইমরান ভাড়াটে লোকজন নিয়ে জোর করে সেই পদযাত্রা করেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ১৬:৩৮
Share:

প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন সংগঠন এবং রাজনৈতিক দল। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

বিক্ষোভে ফুটছে কাশ্মীর। তবে সেই বিক্ষোভ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। মুজফ্ফরাবাদের রাস্তায় স্বতঃস্ফূর্ত এই বিক্ষোভই এখন কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠছে ভারতের।

Advertisement

মঙ্গলবার কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখতে শ্রীনগর পৌঁছেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল। সেই সফরের কয়েক ঘণ্টা আগেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফ্ফরাবাদ। পাক সংবাদ মাধ্যম ওই বিক্ষোভ নিয়ে নীরব থাকলেও, পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় সোমবারের বিক্ষোভের বিভিন্ন ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে।

সেই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে— শুধু মুজফ্ফরাবাদই নয়, রাওয়ালকোট এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন ছোট-বড় শহরে রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার কাশ্মীরবাসী। তাঁদের মুখে পাক সরকার বিরোধী স্লোগান। তাঁরা পাক আধিপত্য থেকে মুক্তি চাইছেন। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন সংগঠন এবং রাজনৈতিক দল ওই প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভে শামিল।

Advertisement

সোমবারের বিক্ষোভের ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজনৈতিক দল জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের নেতা সর্দার সাঘির ভাষণ দিচ্ছেন। তিনি ওই জনসামাবেশে বলেন, ‘‘এই প্রতিবাদ আরও তীব্র করে তুলতে হবে। পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং গিলগিট-বালটিস্তানকে নিয়ে স্বাধীন এবং সার্বভৌম দেশ চাই আমরা। সাত দশক ধরে পাকিস্তানের অপশাসন, অত্যাচার এবং দমন থেকে মুক্তি চাই।”

কাশ্মীর পরিস্থিতির উপর নজর রাখা বিশেষজ্ঞদের মতে— সাম্প্রতিক এই বিক্ষোভের তীব্রতা বৃদ্ধির পিছনে রয়েছে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সেপ্টেম্বর মাসের পদযাত্রা। ১৩ সেপ্টেম্বর মুজাফ্ফরাবাদে পদযাত্রা করেন ইমরান।

বিক্ষোভকারীদের উপর যথেচ্ছ লাঠি চালানো থেকে শুরু করে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলিও চালায় পাক সেনা ও আধা সেনা। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, স্থানীয় বাসিন্দারা ওই পদযাত্রা বয়কট করেছিল। কিন্তু ইমরান ভাড়াটে লোকজন নিয়ে জোর করে সেই পদযাত্রা করেন। ইমরানের উপস্থিতি মানতে পারেননি কাশ্মীরের স্থানীয় মানুষ। তাঁরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখালে, পাক সেনা-পুলিশ-আধাসেনা চূড়ান্ত দমনপীড়ন চালায় বিক্ষোভকারীদের উপর। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, বিক্ষোভকারীদের উপর যথেচ্ছ লাঠি চালানো থেকে শুরু করে, বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলিও চালাচ্ছে পাক সেনা এবং আধা সেনা।

আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরে ইউরোপীয় সাংসদরা, ‘গণতন্ত্রের অপমান’, কটাক্ষ বিরোধীদের

ইউনাইটেড কাশ্মীর পিপলস্ ন্যাশনাল পার্টির মুখপাত্র নাসির আজিজ খান একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘প্রতি দিন পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের। তাঁরা পাকিস্তানের হাত থেকে মুক্তি চান।” তিনি বলেন, ‘‘ইমরানের পদযাত্রার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য অনেক বিক্ষোভকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাঁদের এখনও কোনও হদিশ নেই। আমরা অবিলম্বে ওই আন্দোলনকারীদের মুক্তি চাই। আমরা রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহলে গোটা বিষয়টা জানাব। পাকিস্তান কী ভাবে কাশ্মীরের মানুষের উপর দমন নীতি প্রয়োগ করছে তা সবিস্তারে তুলে ধরব।”

আরও পড়ুন: মোদীর বিমানে আপত্তি পাকিস্তানের, হস্তক্ষেপ করতে নারাজ আইসিএও

সোমবারের বিক্ষোভ সমাবেশে সর্দার সাঘিরও বলেন, ‘‘ইসলামের নামে ৭৩ বছর ধরে কাশ্মীরের মানুষকে বোকা বানিয়েছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান আমাদের ব্যবহার করছে নিজেদের স্বার্থে।”

আরও পড়ুন: ওসামা বিন লাদেনের মতো সমুদ্রে সমাধি দেওয়া হল আইএস প্রধান বাগদাদির দেহাংশ

গত এক মাসের বেশি সময় ধরে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের এই পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন ভারতীয় গোয়েন্দারাও। সূত্রের খবর, আন্তর্জাতিক মহলে কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের তোলা বিভিন্ন অভিযোগ উড়িয়ে দিতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষদের এই পাক-বিদ্বেষ বড় হাতিয়ার হবে ভারতীয় কৃটনীতিবিদদের।

মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট সদস্যরা কাশ্মীর সফরের আগে, তাঁদের উপত্যকা নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি বোঝান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। সূত্রের খবর, সেই ‘ব্রিফিং’-এর সময়েও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন