উত্তর নেই ১১ বছর পরেও! মক্কা-তদন্ত যেন দস্যু মোহনের গল্প

বিস্ফোরক নিয়ে আসায় অভিযুক্ত সেই দুই ব্যক্তিই বছরের পর বছর ছিলেন তদন্তকারীদের হেফাজত এবং জেলে। অথচ অপরাধের কোনও প্রমাণ নেই!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:৪৮
Share:

মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণ। ফাইল চিত্র।

পাকা অপরাধী নয়। পেশায় খেতমজুর এবং রাজমিস্ত্রী, এমন দুই ব্যক্তি মধ্যপ্রদেশ থেকে সড়়ক ও রেলপথে দুই ব্যাগ ভর্তি বিস্ফোরক (আইইডি) এনে রেখেছিলেন হায়দরাবাদের খ্যাতনামা মক্কা মসজিদে। প্রার্থনার ‘তখ্‌ত’-এর নীচে রাখা ব্যাগে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ৯ জনের। প্রার্থনাকারীদের ব্যাগের সারির মধ্যে রেখে দেওয়া অন্য ব্যাগটি বিস্ফোরণের আগেই উদ্ধার করে অকেজো করে দেয় পুলিশ। বিস্ফোরক নিয়ে আসায় অভিযুক্ত সেই দুই ব্যক্তিই বছরের পর বছর ছিলেন তদন্তকারীদের হেফাজত এবং জেলে। অথচ অপরাধের কোনও প্রমাণ নেই!

Advertisement

মক্কা মসজিদ মামলায় এনআইএ-র বিশেষ আদালত অভিযুক্ত পাঁচ জনকে নির্দোষ ঘোষণা করার ৪৮ ঘণ্টা পরেও হায়দরাবাদ জুড়ে ভূরি ভূরি প্রশ্ন! এনআইএ-র পেশ করা চার্জশিট দেখে তেলঙ্গানার বিভিন্ন আইনজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলছেন, এত কিছুর পরেও কোনও প্রমাণ নেই— এ তো মহারহস্য! তেমনই রহস্যজনক, রায় ঘোষণার পরেই বিচারক রবীন্দর রেড্ডির ইস্তফা।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের আগে মক্কা মসজিদ ঘুরে দেখে গিয়েছিলেন রাজেন্দর চৌধুরী (খেতমজুর) ও অমিত ওরফে প্রিন্স নামে এক জন। পরে রাজেন্দর ফের সেখানে আসেন তেজরাম পারমারকে (রাজমিস্ত্রী) সঙ্গে নিয়ে। এর পরে ২০০৭ সালের মে মাসে ইনদওর থেকে বিস্ফোরক সমেত মারুতি ভ্যানে তাঁদের ভোপাল স্টেশনে পৌঁছে দেন রামজি নামে এক ব্যক্তি। ট্রেনের অসংরক্ষিত কামরায় চেপে বিস্ফোরক পৌঁছয় হায়দরাবাদ। বাস টার্মিনাস, চারমিনার-সহ কয়েক জায়গা ঘুরে মক্কা মসজিদে বিস্ফোরক রেখে আসেন রাজেন্দর ও তেজরাম। মোবাইলের ডিটোনেটর দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় নমাজের সময় বেছে নিয়ে।

Advertisement

এই গোটা কাহিনি শুনে আইনজীবীদের প্রশ্ন ১: মারুতির চালক এবং ঘটনাস্থল দেখতে আসা দুই ব্যক্তির সন্ধান ১১ বছরেও পাওয়া গেল না কেন?

প্রশ্ন ২: মধ্যপ্রদেশ থেকে তৎকালীন অন্ধ্র্প্রদেশ পর্যন্ত ছড়়িয়ে থাকা চক্রান্তের জালের কোনও প্রমাণ কেন নেই? নিদেনপক্ষে ট্রেন বা বাসের টিকিট?

প্রশ্ন ৩: স্বামী অসীমানন্দ নিজে এবং মোট ২২৬ জনের মধ্যে বেশ কিছু সাক্ষী বয়ান বদলেছেন এবং দাবি করেছেন, তাঁদের প্রথম বয়ান পুলিশ এবং সিবিআই জোর করে তৈরি করেছিল। প্রথমটাই শুধু জোর করে, পরেরটা নয়— এটা প্রতিষ্ঠিত হল কী করে?

প্রশ্ন ৪: বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি এন হরিনাথ আগে ইডি বা সিবিআইয়ের হয়ে মামলা লড়়লেও খুনের মামলায় তাঁর কোনও অভিজ্ঞতাই ছিল না। উজ্জ্বল নিকমের মতো প্রথিতযশা আইনজীবীদের প্রশ্ন, হরিনাথকে এমন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় এনআইএ কেন নিয়োগ করল?

অভিযুক্তদের অন্যতম আইনজীবী বি রাজবর্ধন রেড্ডির ব্যাখ্যা, ‘‘গোটা মামলা সাজানো হয়েছিল অভিযুক্ত এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের ভিত্তিতে। কিন্তু তাকে প্রতিষ্ঠা করার মতো কোনও তথ্যপ্রমাণ তদন্তকারীরা দিতে পারেননি।’’

মক্কা মসজিদ লাইব্রেরির সহকারী গ্রন্থাগারিক সৈয়দ মহম্মদ সফির প্রশ্ন, ‘‘অভিযুক্তেরা যদি দোষী না হয়, তা হলে আসল অপরাধী কারা?’’

প্রশ্ন অনেক। উত্তর নেই! ১১ বছর পরেও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন