হলুদ শাড়ি, সানগ্লাস পরে হাসিমুখে হেঁটে যাচ্ছেন এক মহিলা। দু’হাতে ধরা ইভিএমের বাক্স। এ বারের লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন এমনই একটি ছবি সামনে আসে। রাতারাতি সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশন হয়ে ওঠেন তিনি।
ছবি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়ে যায় ওই মহিলাকে নিয়ে। কে ইনি? কীই বা তাঁর পরিচয়? ছবি দেখে বোঝাই যাচ্ছিল তিনি এক জন ভোটকর্মী। প্রথমে জানা যায় মহিলার নাম নলিনী সিংহ। জয়পুরের বাসিন্দা, সমাজকল্যাণ বিভাগের এক জন আধিকারিক।
পরে জানা যায়, নলিনী সিংহ নয়, মহিলার নাম রিনা দ্বিবেদী। বয়স ৩২। রীনার একটি ছেলে রয়েছে। সে নবম শ্রেণিতে পড়ে। নাম অদিত।
জয়পুরের নন, রিনা উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের বাসিন্দা। সেই রাজ্যেরই পিডব্লিউডি বিভাগের জুনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট পদে কর্মরত।
লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফার ভোটে দায়িত্ব পড়েছিল রিনার। লখনউ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে মোহনলাল গঞ্জে ভোটের কাজে গিয়েছিলেন তিনি। পরনে ছিল হলুদ শাড়ি, সানগ্লাস। গলায় ঝুলছিল পরিচয়পত্র। মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় তাঁর সেই ছবি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়েছে, যে বুথে রিনার দায়িত্ব পড়েছিল সেখানে প্রায় ১০০ শতাংশ ভোট হয়েছে। যখন এই খবর ছড়িয়ে পড়েছে, রিনা সহাস্যে জানান, আমার কারণে এত ভোট পড়েছে কি না জানি না, তবে ভোটারদের উপস্থিতি ভালই ছিল। ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে ওই কেন্দ্রে।
তাঁর ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে এটা কি তিনি জানেন? এ প্রসঙ্গে রিনা জানান, বেশ কয়েক জন তাঁকে ফোন করে জানান কথাটা। প্রথম যখন জানতে পারি, বিষয়টা খুব অস্বস্তি দিচ্ছিল। কিন্তু এখন বেশ ভালই লাগছে।
রিনা আরও বলেন, অনেকেই তাঁকে ইতিমধ্যে সিনেমায় নামার পরামর্শ দিয়েছেন।
নিজেও সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ অ্যাকটিভ রিনা। “অল্প বয়সেই আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে নিজের কেরিয়ার তৈরি করেছি। লোকে আমায় বেশ পছন্দ করছে, এটা ভেবেই ভাল লাগছে। উপভোগ করছি বিষয়টিকে। কে চায় না সকলের নজরে আসতে? আমি খুব খুশি।” মুচকি হেসেই বললেন দেওরিয়ার এই সরকারি আধিকারিক।
‘এই জন্যই বুথে ১০০ শতাংশ ভোটারদের উপস্থিতি’— রিনার ছবি দিয়ে এমনই মন্তব্য ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। রিনা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এই প্রথম নয়, এর আগেও ভোটের দায়িত্ব পড়েছিল। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচন, ২০১৭-র বিধানসভা নির্বাচনেও কাজ করেছি। কিন্তু এ বার যে এক ক্লিকেই রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে যাব ভাবতে পারিনি।”
রিনা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে যার প্রতিক্রিয়া সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে, সে হল আমার ছেলে অদিত। বলেন, “অদিত আমাকে এসে বলল ওর বন্ধুদের ভিডিয়ো কল করতে। তারা না কি কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইছিল না, যে ছবিটা ভাইরাল হয়েছে সেটা ওর মা।”
২০১৩-য় পিডব্লিউডি-র জুনিয়ার অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন রিনা। কাজ করেছেন ইনসিওরেন্স সেক্টরেও।
যথেষ্ট ফিটনেস ও ডায়েট কনসাস রিনা। বলেন, “বেসরকারি সংস্থার কর্মসংস্কৃতি যথেষ্ট শৃঙ্খলা রয়েছে। আমিও শৃঙ্খলা মেনে চলি। আর সেই ধারাটাকেই বর্তমান কাজের জায়গায় নিয়ে এসেছে। সম্ভবত আমার এই শৃঙ্খলার জন্যই বসেরা প্রশংসা করে।”
আগামী ১৯ মে দেওরিয়াতে ভোট। স্বামী সঞ্জয়ের সঙ্গেই সেখানে ফিরে যাবেন ভোট দিতে। এ প্রসঙ্গে রিনা বলেন, “ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রতি আমার যথেষ্ট আস্থা আছে। তাই ভোট দেওয়ার দায়িত্ব থেকে নিজেকে কখনও বিরত রাখিনি।”
গুগল ট্রেন্ডের ডেটা অনুযায়ী, ইউজাররা গুগলে রিনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ও টিকটক অ্যাকাউন্ট নিয়ে বিপুল পরিমাণে সার্চ করেছেন।
বিদেশেও লোকেরা রিনা দ্বিবেদিকে নলিনী সিংহ নামে গুগলে সার্চ করেছেন। কাতার ও সৌদিতে রিনাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি সার্চ করেছেন ইউজাররা।