সে দিন: নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মেহুল চোক্সী। —ফাইল চিত্র।
মেহুল চোক্সীর গবেষণার বিষয় ছিল, বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা সত্ত্বেও কী ভাবে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পদে ফিরে আসেন নরেন্দ্র মোদী! শুনে চোক্সীকে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘‘তোমার নিজের মতো নিরপেক্ষ গবেষণা করো। গবেষণায় যেমন ফল মিলবে, তেমনই প্রকাশ করবে।’’
নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে মেহুল চোক্সীর গবেষণা শেষ হয়েছে। এখন তিনি ‘ডক্টর’ মেহুল চোক্সী।
আরও চমকে ওঠার আগে বলে দেওয়া যাক। ইনি নীরব মোদীর মামা, অলঙ্কার ব্যবসায়ী মেহুল চোক্সী নন। ইনি ব্যাঙ্কের কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে, নকল হীরে বেচে লোক ঠকিয়ে অ্যান্টিগাতেও পালিয়ে যাননি। ইনিও গুজরাতি। তবে সুরাতের আইনজীবী মেহুল চোক্সী। নরেন্দ্র মোদীর প্রশাসনিক নেতৃত্ব নিয়ে গবেষণা করে সদ্য ডক্টরেট হয়েছেন।
মোদীকে নিয়ে গবেষণা, তায় গবেষকের নাম মেহুল চোক্সী। তাই রাজনীতিকদের অনেকেরই মুখে মুচকি হাসি। দেশ ছেড়ে পালানোর আগে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে মেহুলকে নরেন্দ্র মোদী-র ‘মেহুলভাই’ বলে সম্বোধনের স্মৃতিও ফিরে এসেছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সুরাত থেকে ফোনে মেহুল বলেন, ‘‘ওই মেহুল চোক্সী যখন পালিয়ে গেলেন, তখন টুইটার-ফেসবুকে অনেকেই আমাকে গালমন্দ করেছেন। ট্রোল-বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যতবারই ওই মেহুল খবরে আসেন, ততবারই এমন হয়। আমি শান্ত ভাবে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি, আমি প্রতারক মেহুল চোক্সী নই।’’ কিন্তু তা বলে নরেন্দ্র মোদীর প্রশাসন নিয়ে গবেষণার ইচ্ছে হল কেন? মেহুলের জবাব, ‘‘এলএলবি পাশের পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে এমএ পড়ার সময়ে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়েছিল। সময়টা ২০০৭ থেকে ২০০৯। তখন নরেন্দ্র মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু দেখতাম, খাতায়-কলমে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা সত্ত্বেও উনি বারবার ভোটে জিতে গদিতে ফিরে আসছেন। তখনই এ নিয়ে গবেষণার সিদ্ধান্ত নিই।’’
বীর নর্মদ দক্ষিণ গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘লিডারশিপ আন্ডার গভর্নমেন্ট—এ কেস স্টাডি অব নরেন্দ্র মোদী’ নামক গবেষণাপত্রে মেহুল জানিয়েছেন, যদি কেউ জনমুখী নীতি নেন তাহলে সময়ের সঙ্গে স্বাভাবিক নিয়মে তৈরি হওয়া প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতাকে টেক্কা দেওয়া সম্ভব। নানা পেশার ৪৫০ জনকে প্রশ্ন করে মেহুলের সমীক্ষা বলছে, ৪৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন মোদীর রাজনৈতিক বিপণনের দক্ষতা সকলের থেকে ভাল। আর ২৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, মোদীর বক্তৃতাই তাঁকে বাকিদের থেকে এগিয়ে রাখে।
মেহুল এখন সুরাতে বিজেপির আইনজীবী শাখার সদস্য। লোকসভা ভোটের মুখে তাঁর এই গবেষণা প্রকাশও ‘রাজনৈতিক বিপণন’ কি না, প্রশ্ন উঠেছে। মেহুলের জবাব, ‘‘আমার সঙ্গে সুরাতে প্রধানমন্ত্রীর দেখা হয়েছিল। আমার গাইড অধ্যাপক নীলেশ জোশীই মোদীজিকে আমার গবেষণার বিষয় জানান। উনি বলেন, নিরপেক্ষ গবেষণা করবে। যা পাবে, তা-ই প্রকাশ করবে। এর সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই। আমি তো ডিসেম্বরে থিসিস জমা দিয়েছিলাম। গত সপ্তাহেই ডিগ্রি মিলেছে।’’