জঙ্গি বা অপহরণকারী দলের সঙ্গে যোগসাজসের কথা অস্বীকার করলেন ধৃত সেনা গোয়েন্দা বিনোদ লাংথাসা। তাঁর দাবি, জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের জন্য কাজ করতে গিয়েই তাঁকে সন্দেহের জালে জড়াতে হয়েছে। চা-বাগান ম্যানেজার অপহরণ বা মজুরির অর্থ লুঠের পরিকল্পনার কথা তাঁর জানা নেই। পুলিশ অবশ্য তার দাবি মানতে নারাজ।
৪ ও ৫ জুন দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে কাছাড় পুলিশ মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে পার্থজিৎ থাওসেন পুলিশের চাকরি ছেড়ে ডিএইচডি অ্যাকশন গোষ্ঠীতে নাম লেখায়। পবিত্র বাটারি তার সহযোগী। পঙ্কজ ফুকন ও চন্দ্রমোহন রাজবংশী আলফার প্রাক্তন ক্যাডার। জনেশ হোজাই ডিএইচডি জুয়েল গোষ্ঠীর আত্মসমর্পণকারী সদস্য। মৃন্ময় চৌধুরী বিক্রমপুর চা বাগানের কর্মী। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে বিনোদ লাংথাসার গাড়িচালক দেবাশিস রাজোয়ারও।
আজ আদালত প্রাঙ্গণে বসে বিনোদ লাংথাসা বলেন, বিভাগীয় নির্দেশে অনেকের সঙ্গে সেনা গোয়েন্দাদের গোপনে যোগাযোগ রাখতে হয়। আত্মসমর্পণকারী ডিএইচডি জনেশ-কে তিনি ইনফর্মার হিসেবে কাজে লাগাতেন। তার সূত্রেই পার্থজিৎ ও পবিত্রকে আত্মসমর্পণে রাজি করানো হয়েছিল। সে জন্য তাদের সঙ্গে মোবাইলে ঘনঘন কথা হচ্ছিল। কিন্তু আত্মসমর্পণের আগেই অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে এরা ধরা পড়ে যায়। জনেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্কও বেরিয়ে আসে। গ্রেফতার করা হয় তাকে। পরে তাদের মোবাইলের কললিস্ট দেখে পুলিশ অহেতুক সন্দেহ করে তাঁকেও গ্রেফতার করেছে বলে দাবি বিনোদের। আশা করছেন, তাঁকে নির্দোষ প্রমাণে সেনা বিভাগ সব ধরনের সাহায্য করবে। তাঁর স্ত্রী অজন্তা হোজাইয়েরও দাবি, তাঁর স্বামী নির্দোষ। ১২ বছরের বিবাহিত জীবনে তিনি সব সময় দেখেছেন, বিনোদ জঙ্গি কার্যকলাপের চরম বিরোধী।
কাছাড়ের পুলিশ সুপার রজবীর সিংহ জানান, আলফা ও ডিএইচডি-র প্রাক্তন জঙ্গিরা মিলেমিশে অপহরণ চক্রটি গড়ে তোলে। মূল মাথা আলফার প্রাক্তন ক্যাডার পঙ্কজ ফুকন। ডিএইচডি (অ্যাকশন)-র বর্তমান জঙ্গিরাও এতে সামিল হয়।
মাস দুয়েক আগে উমরাংশুর এক বাগান ম্যানেজারকে অপহরণ করে তারা। পরে মুক্তিপণ নিয়ে ছাড়া হয় তাকে। সেই থেকে ডিমা হাসাওয়ে পুলিশের নজরদারি বেড়ে যায়। তার ফলে তারা সেখানে নতুন কোনও অপহরণ না করে কাছাড়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তখনই বিক্রমপুর বাগানের ম্যানেজারকে অপহরণের ছক কষেছিল। কিন্তু সে দিন তিনি কলকাতা চলে যাওয়ায় তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তবে সে পরিকল্পনার কথা গোপন থাকেনি। নিজস্ব সূ্ত্রে পুলিশ তা জেনে যায়। শুরু হয় তাদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ। জানা যায়, বিক্রমপুর বাগানের মজুরির টাকা ব্যাঙ্ক থেকে নিয়ে যাওয়ার পথে ছিনতাইয়ের ছক কষা হয়েছে। রজবীর সিংহের কথায়, সেদিন পুলিশের লোক ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বাগানের ওই গাড়িতে। দুষ্কৃতীদলটিও কম যায় না। তারা বিষয়টি আঁচ করে ফেলে। সেদিন আর গাড়ি আটকায়নি। পরে ৪ জুন রংপুরের এক ব্যবসায়ীকে তুলে নেওয়ার ছক কষে।
তার আগেই অবশ্য সাতজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তুলে আনা হয় সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা হাবিলদার বিনোদ লাংথাসাকেও। দীর্ঘক্ষণ জেরার পর বিনোদের জঙ্গি সংস্রব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে কাছাড়ের পুলিশ সুপার জানান। ধৃত পার্থজিৎ থাওসেন ও মৃন্ময় চৌধুরীকে আদালত আগেই জেলে পাঠিয়ে দিয়েছিল। অন্যদের সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে পঙ্কজ ফুকন অসুস্থ হয়ে এখন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বিনোদ লাংথাসা-সহ বাকি পাঁচজনকে আজ আদালতে তোলা হয়। বিচারকের নির্দেশে পরে তাদের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়।