Indian Navy

চিনের মোকাবিলায় এখনই নয় তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী, সিদ্ধান্ত বদল করল ভারতীয় নৌসেনা

২০২০ সালে ভারতীয় নৌসেনার তৎকালীন প্রধান অ্যাডমিরাল হরি কুমার ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার কারণে তৃতীয় বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:১২
Share:

ভারতীয় নৌসেনার বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ। ছবি: আইএএনএস

নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটনকে একসঙ্গে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ধারাবাহিক নৌশক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে চিন। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় নৌসেনাকে তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। কিন্তু ভাবনাচিন্তার পরে সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে বলে ‘দ্য প্রিন্ট’ প্রকাশিত একটি খবরে দাবি।

Advertisement

২০২০ সালে ভারতীয় নৌসেনার তৎকালীন প্রধান অ্যাডমিরাল হরি কুমার ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার কারণে তৃতীয় বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ কেনার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। সে সময় প্রাথমিক সম্মতি মিলেছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে। কিন্তু তাঁর উত্তরসূরি অ্যাডমিরাল দীনেশকুমার ত্রিপাঠী এ ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো’ নীতির পক্ষপাতী। তাই আইএনএস বিক্রমাদিত্য অবসর নেওয়ার পরে ভারতীয় নৌসেনা আর একটি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ পাবে বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪-র জানুয়ারি মাসে রাশিয়ার থেকে ২৩০ কোটি ডলারে (প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা) বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রমাদিত্য কিনেছিল ভারত। সে সময় এর নাম ছিল অ্যাডমিরাল গোর্শকভ। ২০১৮ সালে বিমানবাহী এই যুদ্ধজাহাজে বসানো হয় ‘মেরিন হাইড্রলিক সিস্টেম’। এর ফলে অনেক সহজে এই রণতরী থেকে যুদ্ধবিমান ওঠানামা করতে পারে। ২৮৪ মিটার লম্বা এবং ৬০ মিটার চওড়া এই যুদ্ধজাহাজটি ২০ তলা বাড়ির সমান উঁচু। ওজন ৪০ হাজার টন। বিক্রমাদিত্যের ডেকে ৩০টি যুদ্ধবিমান এবং ৬টি হেলিকপ্টার রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।

Advertisement

২০২২ সালের জুলাইয়ে কারওয়ার বন্দর ছেড়ে সমুদ্রযাত্রার সময় আগুন লেগেছিল বিক্রমাদিত্যে। আগুন নেভাতে গিয়ে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় এক নৌসেনা অফিসারের। ওই ঘটনার পরেই বিক্রমাদিত্যের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়। এর পরে ২০১৯ সালের এপ্রিলে কারওয়ার বন্দরে ঢোকার মুখে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছিল আইএনএস বিক্রমাদিত্য। সেই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল নৌসেনার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ডিএস চৌহানের। এই পরিস্থিতিতে বিক্রমাদিত্যের কর্মক্ষমতা নিয়ে সংশয় রয়েছে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

ভারতীয় নৌসেনার অন্য বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত ভারতেই নির্মাণ করা হয়েছে। চূড়ান্ত ‘সি ট্রায়াল’ শেষে গত বছর নৌসেনায় যোগ দিয়েছে বিক্রান্ত। ২৬২ মিটার লম্বা, ৬২ মিটার চওড়া এবং ৫৯ মিটার উঁচু আইএনএস বিক্রান্তে ১,৭০০-রও বেশি নৌসেনা এবং অফিসারের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে মহিলা অফিসারদের থাকার জন্য পৃথক ব্যবস্থা। সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২৮ নট (প্রায় ৫২ কিলোমিটার)। রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৯০ মিটারেরও বেশি। ফলে ‘অ্যারেস্টেড হুক’ ব্যবহার করে তেজসের মতো আধুনিক যুদ্ধবিমানও ওঠানামা করতে পারবে এই বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ থেকে।

প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জন্য তৈরি করা বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ হারকিউলিস, পঞ্চাশের দশকে কিনেছিল ভারত। নাম দেওয়া হয়েছিল আইএনএস বিক্রান্ত। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে উজ্জ্বল ভূমিকা ছিল ভারতীয় নৌসেনার সেই বিক্রান্তের। প্রায় চার দশক কাজ করার পরে নব্বইয়ের দশকের শেষ পর্বে বিক্রান্ত অবসর নেয়। ভেঙে ফেলা হয় জাহাজটি। কিন্তু তারই স্মৃতিতে তৈরি হয়েছে প্রথম ‘ভারতীয়’ বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজটি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement