প্রতীকী ছবি।
অপরাধের হদিস পেতে সমাজের অন্ধকার জগতে নজরদারি থাকে পুলিশের। সরকারি ভাষায় তাকে বলা হয়, ‘ইন্টেলিজেন্স’ বা গোয়েন্দাগিরি। নেট দুনিয়াতেও এখন গোয়েন্দাগিরি প্রয়োজন বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এই মর্মে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে দিল্লি। সোশ্যাল মিডিয়ার উপরেও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। সাইবার বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই নজরদারির জন্য উন্নত প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষণ জরুরি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব কুমার অলোকের পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ডিপ ওয়েব’ বা ‘ডার্ক ওয়েবে’ বিভিন্ন ধরনের বড় মাপের অপরাধের পরিকল্পনা এবং লেনদেন হয়। নজরদারি থেকে পাওয়া তথ্য জোগাড় করে থেমে থাকলে হবে না, তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিতে হবে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘জঙ্গি হানা বা অন্য কোনও অপরাধ রুখতে আইবি যেমন কাজ করে, এ ক্ষেত্রেও তেমন করার কথাই বলা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের প্রোফাইলের তালিকা তৈরি করতেও বলা হয়েছে।’’
ডিপ ওয়েব কী? সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেট দুনিয়ার গুগল বা অন্য কোনও সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করলে যা দেখা যায়, তা সাদা জগত। কিন্তু এর বাইরে এক কালো জগত রয়েছে। যেটা এই সব সার্চ ইঞ্জিনে ধরা প়ড়ে না। সেখানে ব্যবহারকারীর পরিচয় পুরোটাই গোপন থাকে। সাইবার অপরাধ দমনে অভিজ্ঞ গোয়েন্দারা বলছেন, এই অন্ধকার জগতেই দুনিয়ার তাবড় জঙ্গি সংগঠন, মাদক পাচারকারী, অস্ত্র কারবারিরা নিজেদের কাজ সারে। সম্প্রতি সল্টলেক থেকে নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো এক মাদক কারবারিকে ধরেছে। সে-ও এই ডার্ক ওয়েবেই ব্যবসা চালাত। সেই কারণে তদন্তও কার্যত থমকে গিয়েছে বলে খবর।
নেট দুনিয়ার আঁধার জগতে নজরদারি করে কাজ হাসিল করা কতটা সম্ভব? সাইবার বিশেষজ্ঞ এবং ইন্ডিয়ান স্কুল অব এথিক্যাল হ্যাকিংয়ের অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্তের মতে, নজরদারি করা যেতেই পারে। কিন্তু অপরাধ সম্পর্কে খোঁজ পেলেও অপরাধীর পরিচয় জানা মু়শকিল।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘অপরাধের খোঁজ পাওয়াটাও কম নয়। নারী ও শিশু পাচার, শিশু-পর্নোগ্রাফির মতো অপরাধ চক্রের হদিস পেতে এ ব্যাপারে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।’’ সাইবার বিশেষজ্ঞ রাজর্ষি রায়চৌধুরীর মতে, এই নজরদারি শুরু হলে পুলিশ ও অপরাধীদের মধ্যে সাইবার লড়াই শুরু হবে। কারণ অপরাধীরা চাইবে নিজেদের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে এবং গোয়েন্দাদের কাজ হবে সুরক্ষাবলয় ভেঙে তথ্য বের করে আনা।