দুর্নীতি ঠেকাতে ওয়েবসাইট চালু করলেন শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পাল। তাঁর দাবি, এতে সমস্ত হিসেব নিয়মিত প্রকাশ পাবে। কাজের হিসেব, টাকার হিসেব। কোন প্রকল্পের অধীনে কী কী প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, কোনগুলি মঞ্জুরি পেয়েছে, সবই মিলবে তাঁর ওয়েবসাইটে।
দিলীপবাবু বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার হলেও ওয়েবসাইটে যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করবেন শিলচরের বিধায়ক হিসেবে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, পুরসভার সভাপতি নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নিত্যভূষণ দে, শিলচর শহর কমিটির সভাপতি দীপায়ন চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে আজ ওয়েবসাইটটি চালু করে দিলীপবাবু ঘোষণা করেন, তাঁর ১ কোটি টাকার বিধায়কদের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে খরচের জন্য এরই মধ্যে তিনি ৫০টি প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। কোথায় কোন প্রকল্পের বাস্তবায়ন তিনি চেয়েছেন, এক ক্লিকে যে কেউ জানতে পারেন। আনটাইড ফান্ডের ৫০ লক্ষ টাকারও হিসেব দেন তিনি। আজ ওই ওয়েবসাইট উদ্বোধনের পর দিলীপবাবু জানান, ২৫ লক্ষ দিয়েছেন চেংকুড়ির শিলচর কলেজে, ১৫ লক্ষ সরস্বতী বিদ্যানিকেতনে এবং ১০ লক্ষ টাকা ইটখলা বিবেকানন্দ বিদ্যালয়ে।
কিছুদিন ধরে এলাকা উন্নয়ন তহবিল নিয়ে কানাঘুষো চলছিল। বিরোধী দল বা কোনও অরাজনৈতিক সংগঠন নয়, দলের মধ্যেই ক্ষোভ-আক্ষেপ চলছিল। বিশেষ করে, একাংশ পুরসদস্য বলছিলেন, তাঁদের এলাকায় একটি টাকাও দেননি বিধায়ক। এক সাংবাদিক সম্মেলনে পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুরের কাছে জানতে চাইলে তিনিও বলেছিলেন, তাঁর ওয়ার্ড বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবে সে নিয়ে তিনি সেদিন ক্ষোভ ব্যক্ত করেননি। আশা প্রকাশ করেন, পরে পেতে পারেন। পুরসদস্য রাজেশ দাস, অভ্রজিত চক্রবর্তীরাও বলছিলেন, বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল সম্পর্কে তাঁরা পুরো অন্ধকারে। এ দিন দিলীপবাবু সে প্রসঙ্গ না টেনেই কৌশলে সকলকে ওয়েবসাইটে সব তথ্য জেনে নিতে বলেন। এমএসডিপি দ্বাদশ পরিকল্পনায় যে সব প্রকল্প জমা করেছেন, তাও ওয়েবসাইটে রয়েছে বলে জানান তিনি।
দিলীপবাবু জানান, তাঁর প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য দুর্নীতি নিবারণ। সে জন্য শুধু ওয়েবসাইট নয়, যা যা করতে হয়, সব তিনি করতে প্রস্তুত রয়েছেন। এই জায়গায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তিনি আদর্শ হিসেবে তুলে ধরেন। দলের অন্য বিধায়কদেরও দিলীপবাবু আর্থিক স্বচ্ছতা বজায় রাখার আহ্বান জানান। এমএলএ-দের যে এলাকাবাসীর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য আরও ৫০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে, সে কথা জানিয়ে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘মাধ্যমিক উত্তীর্ণ, মেধাবী, দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের ওই তহবিলে সাহায্য করা হবে। সে জন্য ওয়েবসাইটেই ফর্ম পাওয়া যাবে।’’ কেউ ওয়েবসাইট থেকে ফর্ম নিতে না পারলে তাঁর বাড়ি থেকেও সংগ্রহ করতে পারেন বলে জানিয়ে দেন।
কিন্তু সরকারি বহু বিভাগের ওয়েবসাইট রয়েছে। সেগুলি ঘটা করে চালু করা হলেও পরে আর তাতে কোনও তথ্য যোগ করা হয় না। কেউ কেউ যোগ করলেও করেন তা অনেক দেরিতে। দিলীপবাবু এ সব ব্যাপারে অবগত রয়েছেন। তাই নিজেই জানিয়ে দেন, তাঁর ওয়েবসাইট নিয়মিত আপলোড করা হবে। শুধু তাই নয়, অভিযোগ ও মন্তব্যের জন্যও সুযোগ থাকবে। কোন প্রকল্পে কারা উপকৃত হচ্ছেন, তাও সেখানে প্রকাশ করতে আজ সভায় উপস্থিত অনেকে বিধায়ককে পরামর্শ দেন।