মোবাইলে রসরাজের সাহিত্য

লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার সাহিত্যকর্মের জন্য আর বইয়ের সন্ধানে দৌঁড়তে হবে না। হাতে স্মার্টফোন থাকলেই হল। ‘অ্যাপে’ আঙুল ছোঁয়ালেই স্ক্রিনে হাজির হবে সুরভি, জোনবিরি, সাধুকথার কুকি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫৪
Share:

লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার সাহিত্যকর্মের জন্য আর বইয়ের সন্ধানে দৌঁড়তে হবে না। হাতে স্মার্টফোন থাকলেই হল। ‘অ্যাপে’ আঙুল ছোঁয়ালেই স্ক্রিনে হাজির হবে সুরভি, জোনবিরি, সাধুকথার কুকি।

Advertisement

সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের জামাই, লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া অসমে জোনাকি যুগের পতাকাবাহক ছিলেন। ১৮৬৪ সালে নগাঁও ঘেঁষা আহতগুড়িতে লক্ষ্মীপূর্নিমার রাতে, ব্রহ্মপুত্রের বুকে নৌকায় তাঁর জন্ম। বাবা দীননাথ বেজবরুয়া ছিলেন ইংরেজ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মী। অসম সাহিত্যসভা তাঁকে রসরাজ উপাধি দেয়। কলকাতার স্কটিশ চার্চ (তখন জেনারেল অ্যাসেম্বিজ ইনস্টিটিউশন) থেকে স্নাতক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও বিএল ডিগ্রি পান। ১৮৯১ সালে প্রজ্ঞাসুন্দরীদেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের চার মেয়ের মধ্যে সুরভি পাঁচ বছর বয়সে মারা যায়, অরুণার বিয়ে হয় সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে, রত্নার সঙ্গে রোহিনীকান্ত বরুয়ার বিয়ে হয়। ছোট মেয়ে দীপিকা খ্রিস্টান যাজক হয়ে যান। ১৯৩৮ সালে রসরাজের মৃত্যু হয়।

শিশু সাহিত্য থেকে রম্যরচনা, গীত-কাব্য সব শাখায় অবাধ যাতায়াত ছিল তাঁর। কদম কলি ও পদুম কলি কাব্যগ্রন্থ, জোনবিরি, সুরভি, সাধুকথার কুকি নামে ছোট গল্পের সঙ্কলন, বুড়ি আইয়ের সাধু, ককাদেউতা আরু নাতিলড়া, জুনুকা নামে লোককাহিনী ও শিশুপাঠ্যের সঙ্কলন, লিটিকাই, জয়মতী কুঁয়ারি, নোমাল-এর মতো সাতটি নাটক, বরবরুয়ার ভাবর বুরবুরোনি, কৃপাবর বরুয়ার ওভাতানি'র মতো প্রহসন, শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ও মাধবদেবের জীবনী, অসমে বৈষ্ণবধর্ম নিয়ে ইংরেজি বই, বিস্তর প্রবন্ধ, গান, কবিতা লিখেছেন লক্ষ্মীনাথ। তাঁর লেখা ‘ও মুর আপনার দেশ’ অসমের রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃত।

Advertisement

কিন্তু রাজ্যের নতুন প্রজন্মে বই পড়ার আগ্রহ কমছে। লক্ষ্মীনাথের লেখার সঙ্গেও কমছে তাদের যোগাযোগ। পাশাপাশি বইয়ের দামও বেশি। তাই, একটি ওয়েবসাইট নতুন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রসরাজের বই সকলের কাছে পৌঁছে দিতে ‘অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন’ তৈরির উদ্যোগ নেন। গুয়াহাটির হিমজ্যোতি তালুকদার, শান্তনু কৌশিক বরুয়া, অঞ্জল বরারা বেজবরুয়ার সাহিত্যকর্ম ‘ডিজিটালাইজ’ করার কাজ করেন। ওয়েব ডেভেলপ করার দায়িত্ব নেন দিল্লির বিমান বোরা। ‘অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ’ তৈরি করেন ডিব্রুগড়ের হীরক হাজরিকা ও রাকেশ গগৈ আর গুরগাঁওয়ের আশিস বাত্রা। আরও নজনের সাহায্য নিয়ে বেজবরুয়ার সাহিত্যকর্ম মোবাইলের উপযোগী করে ডিজিটালাইজড করা হয়। সঙ্গে বেজবরুয়া পরিবারের দুষ্প্রাপ্য ১৫টি ছবিও।

হিমজ্যোতি, হীরকরা জানান— মাত্র ১৫ মেগাবাইটের অ্যাপটি ডাউনলোড করতে মিনিট দু’য়েক লাগবে। তারপরেই মোবাইলবন্দি হবে রসরাজের অমূল্য সৃষ্টি। এমনকী অফলাইন থাকলেও অ্যাপটি খুলে লেখা পড়া যাবে। তাঁরা লেখাগুলি কম্পিউটারে তোলার সময় বানান অপরিবর্তিত রেখেছেন। এই সব লেখাগুলি ও সাহিত্যরথীর জীবন নিয়ে তাঁরা সাহিত্যরথী নামে একটি ওয়েবসাইটও খুলেছেন। পেশায় চিত্রনির্মাতা তালুকদার জানান যেহেতু বেজবরুয়ার সাহিত্যকর্ম শতবর্ষ প্রাচীন, তাই সেগুলির কপিরাইট নেই। রসরাজের লেখার বিরাট সম্ভার থেকে আপাতত অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপে মাত্র ৩০ শতাংশ তুলে দিতে পেরেছেন তাঁরা। ধীরে বাকি অংশও আপলোড করা হবে। সেই মতো অ্যাপ আপডেট করে নিলেই চলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন