ফোন এল মোদীর, বাবুল তৈরি থেকো

শেষ মুহূর্তে মত বদলের শঙ্কা রাজনীতিতে থাকেই। কিন্তু তেমনটা না ঘটলে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় এ বার ঠাঁই পেতে পারেন বাংলার মুখ। রবিবার রাইসিনা হিলসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নিতে পারেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ সুপ্রিয় বড়াল (পড়ুন বাবুল সুপ্রিয়)। বাবুল ছিলেন দুবাইয়ে। সবে মুম্বই ফিরেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে খবর, আজ প্রধানমন্ত্রী নিজেই ফোন করেন বাবুলকে।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৭
Share:

শেষ মুহূর্তে মত বদলের শঙ্কা রাজনীতিতে থাকেই। কিন্তু তেমনটা না ঘটলে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় এ বার ঠাঁই পেতে পারেন বাংলার মুখ। রবিবার রাইসিনা হিলসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নিতে পারেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ সুপ্রিয় বড়াল (পড়ুন বাবুল সুপ্রিয়)।

Advertisement

বাবুল ছিলেন দুবাইয়ে। সবে মুম্বই ফিরেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে খবর, আজ প্রধানমন্ত্রী নিজেই ফোন করেন বাবুলকে। রবিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ তথা শপথগ্রহণের দিন তাঁকে দিল্লিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। দুপুর ১টায় হবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। তার আগে, সকালেই সম্ভাব্য নতুন মন্ত্রীদের চায়ের নিমন্ত্রণ জানাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। সে জন্যও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে বাবুলকে।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে এর আগে দু’জন বিজেপি নেতা কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছিলেন। অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে তপন শিকদার এবং সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় মন্ত্রী হন। তবে তখনকার পটভূমি ছিল আলাদা। তখন রাজ্যে বিজেপির শরিক ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু এখন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র লড়াইটাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আসন্ন বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রীর তখ্ত থেকে মমতাকে টেনে নামাতে চান নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা। এ জন্য সারদা কাণ্ড, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ, তৃণমূলের সঙ্গে জঙ্গি ও জামাত যোগের প্রশ্ন তুলে প্রতিদিন সুর চড়াচ্ছে বিজেপি। তাতে রাজনৈতিক ওজন দিতে দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের বারবার রাজ্যে পাঠিয়েছেন অমিত শাহ। এ বার পশ্চিমবঙ্গেরই একজন বিজেপি নেতাকে সেই রাজনৈতিক উচ্চতা দিতে চাইছেন তাঁরা। ঠিক যে ভাবে একদা হাওড়া থেকে লোকসভা ভোটে জেতার পর প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে কেন্দ্রে প্রতিমন্ত্রী করেন রাজীব গাঁধী।

Advertisement

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে বাবুল নিজে কী বলছেন?

আসানসোলের সাংসদ বলেন, “আমি কিছুই জানি না। আমি দলের পদাতিক সেনা মাত্র। দল এবং প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন, সেটাই করব।”

বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার কথায়, “এ দেশের রাজনীতিটা অনেকটাই সংসদীয় ব্যবস্থাকেন্দ্রিক। কোনও নেতা মন্ত্রী হলে রাজনৈতিক গুরুত্ব পান। রাজ্যের জন্য কিছু কাজ করার সুযোগ তৈরি হয় তাঁর সামনে। দলের সঙ্গে সরকারের যোগসূত্রও হয়ে উঠতে পারেন তিনি। বাবুলের কাজটাও তাই হবে।” সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় রাজনৈতিক প্রচারের কাজে বাবুলকে যে চরকির মতো ঘুরতে হবে, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন ওই নেতা।

যদিও দলীয় সূত্র এও জানাচ্ছে, বাবুলকে মুখ্যমন্ত্রী পদের ছায়াপ্রার্থী এখনই করা হচ্ছে না। তা কাকে করা হবে, সে বিষয়ে উচিত সময়ে ভাবনাচিন্তা হবে। বাবুলের ‘প্লাস পয়েন্ট’ হল, প্রথমত তাঁর কম বয়স। তার উপর সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে দীর্ঘদিনের পরিচিতির সুবাদে বাংলার ঘরে ঘরে পরিচিত মুখ। আর এখন আসানসোলে শাসক দলের ওজনদার প্রার্থীকে হারানোর পরে ‘লড়াকু নেতা’ হিসেবে একটা পরিচিতি গড়ে উঠেছে তাঁর। রাজনীতিতে হাত পাকানোর পাশাপাশি তিনি নানা বিষয়ে গুছিয়ে কথাও বলতে পারেন। ফলে সাধারণ মানুষ এবং যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে তিনি সহজেই ‘কানেক্ট’ করতে পারছেন।

বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা জানান, কেন্দ্রে সরকার গঠনের সময়ই বাবুলকে মন্ত্রী করার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু তখন কৌশলগত ভাবে মন্ত্রিসভার বহর ছোট রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তা ছাড়া সাংসদ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাবুলকে মন্ত্রী করা হলে রাজ্যে বাকি বিজেপি নেতাদের মনে হতে পারতো যে, তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন। তাই হুড়োহুড়ি না করে কিছুটা সময় নেওয়া হল। এবং বাবুলও রাজ্যে সরকার-বিরোধী আন্দোলনে লেগে থেকে রাজনীতি বুঝে ওঠার কিছুটা সময় পেলেন।

বাংলা থেকে বাবুলের তুলনায় অভিজ্ঞ রাজনীতিক তথা বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াও তো আছেন। সুরেন্দ্র-র জন্ম আসানসোলে। তা ছাড়া তাৎপর্যপূর্ণ হল, দার্জিলিং থেকে লোকসভা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর সুরেন্দ্র সম্প্রতি লোকসভায় সব বক্তৃতা বাংলাতেই দিচ্ছিলেন। তাই প্রশ্ন উঠছেই, এত কিছু যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে মন্ত্রী করা হচ্ছে না কেন? জবাবে বিজেপি নেতারা বলছেন, অনেকে ভাবতে পারেন সুরেন্দ্র যে হেতু সুষমা স্বরাজের ঘনিষ্ঠ, তাই তাঁকে মন্ত্রী করা হচ্ছে না। কিন্তু ঘটনা তা নয়। আসলে ওঁকে মন্ত্রী করা হলে এই ধারণা তৈরি হতে পারে যে, বিজেপি বিমল গুরুঙ্গদের দাবিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। তাতে সমতলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাও তাদের আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে পারে। বাবুলের ক্ষেত্রে সেই আশঙ্কা নেই। তা ছাড়া আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বাবুল এ বার নিজেদের ক্ষমতায় জিতেছেন। তার গুরুত্বই আলাদা।

বাবুলকে বিজেপি-র প্রার্থী করার নেপথ্যে যোগগুরু রামদেব ও সঙ্ঘ পরিবারের ভূমিকা ছিল। সূত্রের খবর, সম্প্রতি আরএসএস নেতাদের সঙ্গে অনেক বার বৈঠক হয়েছে বাবুলের। তাঁরা বাবুলকে বুঝিয়েছেন, বিজেপি ঠিক কী কৌশলে পশ্চিমবঙ্গে সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছে। মূলত দু’টি বিষয় নিয়ে এগোতে চাইছে বিজেপি। এক, সারদা-কাণ্ড তথা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরকার-বিরোধী আন্দোলন। আর দুই, জাতীয়তাবাদ। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ, তৃণমূলের সঙ্গে জঙ্গি ও জামাতের যোগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এ বার আরও আগ্রাসী হয়ে মেরুকরণের রাজনীতি করতে চান অমিত শাহরা।

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা হলেও বাংলায় জনসঙ্ঘ বা তার উত্তরসূরি বিজেপি-র ভিত কিন্তু কোনও দিনই তেমন শক্ত ছিল না। হরিপদ ভারতী জনসঙ্ঘের নেতা হিসেবে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে একটা পরিচিত নাম হলেও তার কোনও রেশ তিনি রেখে যেতে পারেননি। রাম মন্দির আন্দোলনের সময় পশ্চিমবঙ্গে কিছুটা আলোড়ন তৈরি হলেও তা ছিল নেহাতই সাময়িক। পরবর্তী কালে লালকৃষ্ণ আডবাণী দলের নেতাদের পরামর্শ দেন, কট্টর হিন্দুত্বের পথে না হেঁটে বাংলায় নরম হিন্দুত্ব করুক বিজেপি। রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দকে সামনে রেখে এমন রাজনীতি করা হোক, যা বাঙালির জাতীয়তাবাদকে স্পর্শ করে। সেই কৌশলও কাজে লাগেনি। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, মেরুকরণের রাজনীতির সুযোগ এ বার মমতাই তাঁদের করে দিয়েছেন। তার সম্পূর্ণ ফায়দা নেওয়াটাই উচিত। সামনে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন। তার আগে থেকেই মমতা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাত্রা বাড়াতে চাইছে বিজেপি।

বাবুল সুপ্রিয়কে কেন্দ্রে মন্ত্রী করার সিদ্ধান্তের প্রাসঙ্গিকতা সেখানেই।

বাবুল প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ অবশ্য সোজা কথায় কোনও উত্তর আজ দেননি। তিনি হেসে বলেন, “দলের জেনারেল হিসেবে উচিত পরামর্শই প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমার জায়গায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকলেও এটাই করতেন!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন