বিজ্ঞাপনে মোদী সবাইকে ছাপিয়ে

নরেন্দ্র মোদী নিজেই নিজের ঢাক পেটাতে পারেন সাবলীল ভাবে। বিরোধী দলের নেতাদের কথাবার্তায় প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন কটাক্ষ শোনা যায় সব সময়েই। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকারি কাজকর্মের প্রচারে খরচও নেহাত কম করেননি!

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৫৯
Share:

নরেন্দ্র মোদী নিজেই নিজের ঢাক পেটাতে পারেন সাবলীল ভাবে।

Advertisement

বিরোধী দলের নেতাদের কথাবার্তায় প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন কটাক্ষ শোনা যায় সব সময়েই। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকারি কাজকর্মের প্রচারে খরচও নেহাত কম করেননি! সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত পুরো পরিসংখ্যান দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু যে টুকু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে স্পষ্ট বিজ্ঞাপন বাবদ মোদী সরকারের খরচ রীতিমতো রেকর্ড করতে চলেছে।

সংবাদপত্র, টেলিভিশন কিংবা রেডিওতে দেখা যায় সরকারি বিজ্ঞাপন। কখনও ‘স্বচ্ছ ভারত’, কখনও ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’। বিজ্ঞাপন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিনব পন্থাও দেখা গিয়েছে। যেমন হয়েছে ‘যোগ দিবস’ পালনের সময়ে— মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে ওই অনুষ্ঠানে সামিল হওয়ার আর্জি এসেছিল তখন। তবে এত সব কিছু তো আর এমনি এমনি হবে না! খরচও আছে বিস্তর।

Advertisement

তথ্যের অধিকার আইনে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মোদী সরকার এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞাপন বাবদ কত টাকা খরচ করেছে? জবাবে মন্ত্রকের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র সংবাদপত্রে দেওয়া বিজ্ঞাপনের হিসেব দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়নি টেলিভিশন, রেডিওতে বিজ্ঞাপনের খরচ। কিন্তু তাতেই দেখা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন বাবদই ৪৭৩ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়ে গিয়েছে। ইউপিএ জমানার শেষ বছরে এই খরচ হয়েছিল ৪৫৬ কোটি টাকা। এক শীর্ষ স্থানীয় সরকারি সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, যে কোনও সরকার তাদের কাজের প্রচারের জন্য নিয়মিত বিজ্ঞাপন দেয় ঠিকই, কিন্তু দেখা যায়, সরকারের কাজের শুরুর দিকে তা কম থাকে। তবে মেয়াদ শেষে ভোটে যাওয়ার সময়ে বিজ্ঞাপনের বহর বেড়ে যায়। অনেকেই মনে করেন, সেই হিসেবে মনমোহন সিংহের সরকারও ভোটের আগে বিজ্ঞাপনে খরচ বাড়িয়েছিল। কিন্তু ইউপিএ জমানার শেষ বছরে যত বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, শুরু থেকেই মোদী সেই অঙ্ককে ছাপিয়ে যেতে চাইছেন।

মন্ত্রকের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, ২০১৪ সালের মে মাসে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকারি বিজ্ঞাপনের খরচে রাশ টানার চেষ্টা হচ্ছে। চলতি আর্থিক বছরের দশ শতাংশ কম খরচ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের এক বছর পার হতে না হতে যে ভাবে হাত খুলে বিজ্ঞাপনে খরচ শুরু হয়েছে, তাতে লক্ষ্যপূরণ হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত মন্ত্রকেরই একাংশ। কারণ, টেলিভিশন বা রেডিওতে বিজ্ঞাপনে কত খরচ হয়েছে, তার হিসেব সামনে আনেনি সরকার। অনেকেই মনে করছেন, সে ক্ষেত্রে খরচের অঙ্কটা অনেক বেশি হবে।

২৬ মে সরকারের এক বছর পূর্তির আগে থেকেই ‘সাফল্য’ প্রচারে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে মোদী সরকার। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের কর্মসূচি ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর প্রচারের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ১০০ কোটি টাকা। ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নিজের বক্তব্য নিয়মিত প্রচার করেন। কিন্তু দেশের মানুষকে মোদীর ‘মন কি বাত’ শোনানোর জন্যও যে ঢালাও প্রচার হয়েছে, তার জন্যও সরকারি কোষাগার থেকে খরচ হয়ে গিয়েছে সাড়ে আট কোটি টাকা। এবং সেটি মাত্র ছ’মাসে। এই হিসেব এ বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত।

শুধু কি তাই? ‘যোগ দিবস’-এর সময় এসএমএস-এর মাধ্যমে যে অভিনব প্রচার করা হয়েছিল, তার পিছনে খরচ হয়েছে ষোলো কোটি টাকা।

কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মাকেন বলেন, ‘‘মোদী সরকার কাজই শুরু করতে পারল না, অথচ স্বচ্ছ ভারত আর অসংখ্য প্রকল্পের নামে খরচ শুরু করল।’’ অভিযোগের জবাব দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীবপ্রতাপ রুডির মন্তব্য, ‘‘নরেন্দ্র মোদী শুরু থেকেই কাজ করছেন। আর বিজ্ঞাপনে যা খরচ হয়েছে, তা মানুষকে সচেতন করার জন্যই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন