COVID-19 Vaccine

COVID-19 Vaccination: অঙ্কের ভুল আর দূরদর্শিতার অভাব, তৃতীয় ঢেউয়ের আগে টিকাকরণের গতি নিয়ে বাড়ছে চিন্তা

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে শুরু করে ব্রাজিলও বিভিন্ন সংস্থাকে অনেক আগে থাকতে টিকার বরাত দিয়েছিল। অভিযোগ, এখানেও দেরি করেছে ভারত।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২১ ০৫:৫৭
Share:

টিকাকরণের গতি বাড়াতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ছবি: পিটিআই।

করোনার তৃতীয় ঢেউ দরজায় দাঁড়িয়ে আছে বুঝতে পেরে টিকাকরণের গতি বাড়াতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তার জন্য টিকা নির্মাতারা আগের তুলনায় বেশি টিকা উৎপাদন করছে। সরকারও তাদের বড় অঙ্কের বরাত দিয়েছে। কিন্তু টিকাকরণের কাঙ্ক্ষিত গতি ছোঁয়া তো দূরের কথা, এখনও পর্যন্ত তার ধারেকাছেও পৌঁছনো যায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, গোড়া থেকেই পরিকল্পনায় গলদ, দূরদর্শিতার অভাব, টিকা সংস্থাগুলিকে টাকা না-জোগানো, আগে থাকতে টিকার বরাত না-দেওয়া— এ সবেরই আজ খেসারত দিতে হচ্ছে কেন্দ্রকে।

Advertisement

গোড়ার দিকে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নীতিতে শুধুমাত্র দেশজ দু’টি সংস্থার টিকা দিয়ে টিকাকরণ কর্মসূচি চালানোর কথা ভেবেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের সংস্থার থেকে প্রতিষেধক কেনা সব সময়েই আর্থিক ভাবে যুক্তিযুক্ত। কিন্তু ১৪০ কোটি জনতার জন্য দু’ডোজ়ের টিকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জোগানোর মতো ক্ষমতা শুধু সিরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেকের রয়েছে কি না, সেই পর্যালোচনায় গাফিলতি ছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফাইজ়ার বা মডার্নার মতো সংস্থা প্রথমে ভারতকে টিকা বিক্রি করতে আগ্রহী হলেও তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ এ দেশে না-হলে তাদের টিকাকে ছাড়পত্র দেওয়া সম্ভব নয়। পরে টিকার প্রবল ঘাটতি দেখা দেওয়ায় নীতি পাল্টে ভারত সরকার বলে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছাড়পত্র থাকলেই টিকার অনুমোদন মিলবে। কিন্তু তত দিনে অধিকাংশ সংস্থাই জানিয়ে দেয়, আপৎকালীন ভিত্তিতে ভারতকে বিপুল পরিমাণ টিকা সরবরাহ করা সম্ভব নয়। কাজেই প্রশ্ন উঠেছে, বিদেশি সংস্থার জন্য দরজা খুলতে এত দেরি কেন?

Advertisement

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে শুরু করে ব্রাজিলও বিভিন্ন সংস্থাকে অনেক আগে থাকতে টিকার বরাত দিয়েছিল। অভিযোগ, এখানেও দেরি করেছে ভারত। ভারত বায়োটেককে যেমন কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধকের বরাত দেওয়া হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে তৃতীয় দফার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হওয়ার পরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভ্যাক্সিনের দ্বিতীয় দফায় সফল প্রয়োগের অর্থই হল ওই প্রতিষেধকটি নিরাপদ। সে সময়েই বরাত দেওয়া উচিত ছিল। আজ অবশ্য কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন মিলিয়ে ৬৬ কোটি টিকার বরাত দিয়েছে কেন্দ্র। তার জন্য ধার্য হয়েছে ১৪,৫০০ কোটি টাকা।

অনেকের মতে, এই কাজটিই বহু আগে শুরু করতে পারত কেন্দ্র। দুই সংস্থাকে টিকার বরাত দিয়ে ঋণ হিসেবে টাকা দেওয়া যেত। সেই টাকা উৎপাদন বাড়ানোর খাতে তারা ব্যবহার করতে পারত। চুক্তি হলে উৎপাদক সংস্থাগুলি সিংহভাগ টিকা সরকারকেই দিতে বাধ্য থাকত। কিন্তু তার বদলে ভারত বায়োটেক নিজস্ব অর্থ দিয়েই গবেষণা ও উৎপাদন শুরু করতে বাধ্য হয়। ফলে কোনও ভাবেই তাদের উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ছুঁতে পারেনি।

সিরাম ইনস্টিটিউট কোভিশিল্ড তৈরিতে নিজেদের ২০১২ কোটি এবং বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন থেকে পাওয়া ২২৩৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। বিদেশি বিনিয়োগের ফলে পঞ্চাশ শতাংশ প্রতিষেধক বিদেশের বাজারের জন্য দিতে বাধ্য হয় সিরাম। বিরোধীদের অভিযোগ, লগ্নির শর্তমাফিক এই টিকা পাঠানো হলেও মোদী বিষয়টিকে এমন ভাবে তুলে ধরেছিলেন, যেন বিশ্বের স্বার্থে তিনিই বিভিন্ন দেশকে টিকা পাঠাচ্ছেন। গত নভেম্বরে নতুন টিকা তৈরির গবেষণা খাতে বরাদ্দ করা হয় ৯০০ কোটি টাকা, যে অর্থ সিরাম-বায়োটেককেই উৎপাদন বাড়ানোর কাজে দেওয়া যেতে পারত বলে অনেকের মত। শেষ পর্যন্ত গত এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে সিদ্ধান্ত হয়, সিরামে ৩১০০ কোটি এবং ভারত বায়োটেকে ১৫০০ কোটি টাকা লগ্নি করবে সরকার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যাবতীয় বিষয়ে সরকার আগে নজর দিলে আজকের সঙ্কট হয়তো আসত না। এখনও রোজ নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে অন্তত ৫০ লক্ষ কম টিকাকরণ হচ্ছে। এই গতিতে টিকাকরণ চললে দেশের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ককে টিকা দিতে দিতে আগামী বছরেরও অর্ধেক পেরিয়ে যাবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়ালের বক্তব্য, ‘‘দেশে আগে যেখানে ২.৩৫ লক্ষ টিকা রোজ দেওয়া হত, সেখানে এখন সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৪০ লক্ষের কাছাকাছি।’’

তাঁর দাবি, প্রতিষেধক সংস্থাগুলির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। প্রতিটি রাজ্যকেই ১৫ দিন আগে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তারা কত টিকা পাবে। কিন্তু কোনও রাজ্য যদি প্রাপ্ত টিকা দু’সপ্তাহের পরিবর্তে দু’দিনেই খরচ করে বসে, তা হলে সেটি রাজ্যের পরিকল্পনার সমস্যা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন