নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
ইমরান খানের নেতৃত্বে ‘সন্ত্রাসমুক্ত’ নয়া পাকিস্তানের জন্ম হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত কাল একাধিক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া ই-মেল সাক্ষাৎকারে মোদী জানান, ইমরান জমানায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বরফ গলার আশা রাখেন তিনি।
একই সঙ্গে চিনকেও বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েছেন মোদী। সরাসরি ডোকলামের নাম না-করেও বলেছেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় মাঝেমধ্যে সমস্যা হওয়া সত্ত্বেও যথেষ্ট পরিণতমনস্কতা দেখিয়েছে দুই দেশ। গত চার দশকে কেউ কারও দিকে একটিও গুলি ছোড়েনি। শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক পথেই মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে সমস্যা। অবশ্য মোদীর এই মন্তব্যের পরেই প্রকাশ্যে এসেছে লাদাখে ভারতীয় ও চিনা সেনার নতুন টানাপড়েনের খবর।
পাকিস্তান থেকে চিন, আমেরিকা, রাশিয়া, নেপাল, মলদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা— সব নিয়েই প্রশ্ন করা হয়েছিল মোদীকে। ইমরানকে নিজে ফোন করেছিলেন তিনি। ভাবী পাক প্রধানমন্ত্রীর হাতে বিরাট কোহালিদের সই করা ব্যাট তুলে দিয়েছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার। এ বছর ইসলামাবাদে সার্ক শীর্ষ বৈঠকে ভারত যোগ দেবে কি না, স্পষ্ট করেননি মোদী। শুধু বলেছেন, ‘‘আমরা বারবার বলে এসেছি, পড়শির সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। আশা রাখব, ইমরানের নেতৃত্বে পাকিস্তান এ বার এশিয়ার এই অঞ্চলকে সন্ত্রাসমুক্ত, নিরাপদ এবং স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে এগোবে।’’
চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিঙের সঙ্গে সাম্প্রতিক অতীতে বার তিনেক সাক্ষাৎ হয়েছে মোদীর। কংগ্রেসের বরাবরের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী কখনওই ডোকলাম নিয়ে চিনকে কড়া কথা শোনাননি। উপরন্তু শশী তারুরের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির খসড়া রিপোর্টে বলা হয়েছে— ভারতের উচিত, ডোকলামে চিনা সেনাকে রুখতে ভুটানকে আরও বেশি সেনা মোতায়েন করতে বলা।
মোদী অবশ্য বার্তা দিয়েছেন যে, আগামী বছরে চিনা প্রেসিডেন্টের ভারত সফর ও ঘরোয়া বৈঠকের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘গত এপ্রিলে উহানে প্রেসিডেন্ট চিনফিঙের সঙ্গে ঘরোয়া শীর্ষ বৈঠক আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নিজেদের সমস্যা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে পেরেছি। বহুজাতিক সম্মেলনগুলির ফাঁকে আমাদের নিয়মিত দেখা দেখা হচ্ছে। আস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এমন যোগাযোগ খুব জরুরি।’’
পাকিস্তানকে মদত দেওয়ার পাশাপাশি নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মলদ্বীপের মতো দেশগুলিতে প্রভাব বাড়িয়েছে চিন। এ প্রসঙ্গে মোদীর মত, চিন কারও সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতেই পারে। নেপালের সঙ্গে ভারতের যোগ রাম-সীতা-বুদ্ধের আমল থেকে। দিল্লি-কলম্বো সম্পর্কও তৃতীয় কোনও রাষ্ট্রের উপরে নির্ভরশীল নয় বলে জানান তিনি। শ্রীলঙ্কার ভারতীয় বংশোদ্ভূত চা-শ্রমিকদের জন্য ৬০ হাজার বাড়ি বানাচ্ছে ভারত। প্রথম পর্যায়ের বাড়িগুলি আজই উদ্বোধন হয়েছে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ে।
জরুরি অবস্থার মলদ্বীপে গণতন্ত্র ফেরানোর আর্জি জানিয়েছেন মোদী। তাঁর দাবি, আমেরিকা-চিন বা আমেরিকা-রাশিয়া টানাপড়েন সত্ত্বেও তাঁর সরকার সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম। আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গত কয়েক বছরে ‘অভাবনীয় রকম’ নিবিড় হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।