২৬/১১ আবার হতে পারে, আশঙ্কা মোদীর

প্রতিবেশী দু’দেশের সরকারের মধ্যে গত কালও বিনিময় হয়েছে বন্ধুত্বের বার্তা। বাস্তব ছবিটা উঠে এল তার পর দিনই! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ আশঙ্কা জানালেন, সাগর পথে এসে আবার হামলা চালাতে পারে জঙ্গিরা। ২৬/১১-র মুম্বই হামলার ধাঁচেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:৩৬
Share:

প্রতিবেশী দু’দেশের সরকারের মধ্যে গত কালও বিনিময় হয়েছে বন্ধুত্বের বার্তা। বাস্তব ছবিটা উঠে এল তার পর দিনই! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ আশঙ্কা জানালেন, সাগর পথে এসে আবার হামলা চালাতে পারে জঙ্গিরা। ২৬/১১-র মুম্বই হামলার ধাঁচেই। আর এ দিনই বিদেশনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে পাক প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শদাতা সরতাজ আজিজ আর এক দফা খুঁচিয়ে রাখলেন কাশ্মীর প্রসঙ্গ। রেডিও পাকিস্তানে ঘোষণা করলেন, ‘‘কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করাটাই ইসলামাবাদের প্রাথমিক লক্ষ্য।’’

Advertisement

নওয়াজ শরিফের সরকার যেন কাশ্মীর নিয়ে তাদের দায়বদ্ধতা না ভোলে— সদ্যই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী তথা জইশ-ই-মহম্মদের প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদ। আর তার পরপরই পাক সরকারের তরফে ওই ঘোষণা। ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বের বার্তা বিনিময় ও শান্তি-আলোচনা চালিয়ে গেলেও সীমান্ত পারের সন্ত্রাস নিয়ে ভারতের বিপদ যে মোটেই কমছে না সেটা স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী মোদী আজ সেই হুঁশিয়ারিই দিলেন বিশাখাপত্তনমে, আন্তর্জাতিক নৌমহড়ার অনুষ্ঠানে। তাঁর কথায়, ‘‘সমুদ্রপথে এখনও জঙ্গি হানার আশঙ্কা রয়েছে। অতীতে ভারত যার শিকার হয়েছে। যা আঞ্চলিক ও বিশ্বের শান্তিকে বিঘ্নিত করছে।’’ জলপথে জঙ্গি হানা রোখা এবং সমুদ্রে জলদস্যুদের, বিশেষ করে সোমালি জলদস্যুদের মোকাবিলা— এই দু’‌টোই এখন নৌবাহিনীর কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

পঠানকোট হামলার স্মৃতি এখনও তাজা। প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, মুম্বইয়ের মতোই ওই হামলার ক্ষেত্রেও হাত রয়েছে পাকিস্তানের। উভয় ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রমাণ তুলে দেওয়া সত্ত্বেও তাদের গ্রেফতার করা তো দূর, পাকিস্তানের মাটিতে তারা স্বাধীন ভাবে ঘোরাফেরা করছে বলেই তথ্য এসেছে ভারতের হাতে। গত সপ্তাহেই জঙ্গি সংগঠন জামাত-উদ দাওয়ার প্রধান হাফিজ সইদ পাক অধিকৃত কাশ্মীরে দাঁড়িয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ফের নাশকতার হুমকি দেন। রাষ্ট্রপুঞ্জ বা মার্কিন প্রশাসন যতই হাফিজকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী বলে চিহ্নিত করুক না কেন, যে ভাবে হাফিজ পাকিস্তানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাতে ভারত স্পষ্ট বুঝতে পারছে সে দেশে সন্ত্রাসবাদীদের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ আলগা হয়েছে পাক প্রশাসনের। যার ফলে আগামী দিনে ভারত নতুন করে এক প্রস্ত নাশকতার শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে নয়াদিল্লি। সেই আশঙ্কাই এ দিন উঠে এল মোদীর মুখে।

Advertisement

এরই মধ্যে সংশয় বেড়েছে পিছিয়ে যাওয়া দু’দেশের বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক নিয়েও। হাফিজ সইদ পাক অধিকৃত কাশ্মীরে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসের বার্তা দেওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই আইনসভায় দাঁড়িয়ে ভারতের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ। বলেছিলেন, ‘‘দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় কাশ্মীর-সহ ভারতের সঙ্গে সব মতপার্থক্য মিটে যাবে।’’ ভারত এই বক্তব্যকে স্বাগত জানায়। কিন্তু পুরো উল্টো সুরে গাইতে এ বারও ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় নেয়নি পাকিস্তান। নওয়াজের উপদেষ্টা সরতাজ আজ রেডিও বক্তৃতায় দাবি তোলেন, ‘‘কাশ্মীর নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের যে সমাধান সূত্র রয়েছে, তা রূপায়ণ করতে এগিয়ে আসুক আন্তর্জাতিক মহল।’’

কাশ্মীর প্রসঙ্গে ফের এ ভাবে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের দাবি তোলায় সাউথ ব্লক ক্ষুব্ধ। কেন্দ্র আজ স্পষ্ট করে দিয়েছে, পঠানকোট কাণ্ডে অভিযুক্ত পাকিস্তানিদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা কম। নীতিগত ভাবে ভারত বৈঠকের বিপক্ষে নয়। সেই কারণে পঠানকোট কাণ্ডের পরে বৈঠক বাতিল না করে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাউথ ব্লক মনে করছে, এখন যা পরিস্থিতি তাতে ইসলামাবাদ আস্থাবর্ধক কোনও পদক্ষেপ না করা পর্যন্ত ওই বৈঠক অর্থহীন। নয়তো ঘরোয়া রাজনীতিতেও সরকারকে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হবে। আর বাজেট অধিবেশনের সময় এ রকম কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় মোদী সরকার।

ভারত এত দিন আন্তর্জাতিক মঞ্চে বলে এসেছে পাকিস্তানই হল বিশ্বের সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর। সেই দাবির জোরালো সমর্থন মিলেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে। সে দেশের একটি প্রথম সারির সংবাদপত্রে লেখা হয়েছে, শুধু তালিবান সমস্যাই নয়, পাক প্রশাসন তথা তাদের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই সম্ভবত ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর উত্থানের জন্যও দায়ী। যাদের দমন করতে গিয়ে কার্যত ঘুম ছুটেছে আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেনের মতো বড় দেশগুলির। প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়েছে, পাকিস্তান প্রকাশ্যে বারবার বলে এসেছে, তারাই আসলে সন্ত্রাসের শিকার। কিন্তু ঘটনা হল, পাক প্রশাসন দীর্ঘ সময় ধরে পরিকল্পিত ভাবে দেশীয় ও বিদেশি মুসলিম (মূলত সুন্নি) জঙ্গিদের সাহায্য করে আসছে। যে সব তালিবান ও আল কায়দা জঙ্গি তাদের নীতি মানতে রাজি নয়, একমাত্র তাদেরই খতম করছে পাকিস্তান। মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য উদ্ধৃত করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাক সীমান্তের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় জঙ্গিদের প্রয়োজন ফুরনোয়, ইসলামাবাদ প্রায় ৩০০ জন পাক জঙ্গিকে সিরিয়ায় পাঠিয়েছে, কাতার ও অন্যান্য দেশের সুন্নি জঙ্গিদের সঙ্গে জেহাদে অংশ নিতে।

একাধিক কুখ্যাত জঙ্গি নেতা কী ভাবে পাকিস্তানে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে প্রতিবেদনে। যেমন, l হক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজুদ্দিন হক্কানি। তালিবানের মধ্যে পদমর্যদায় দ্বিতীয়। সম্প্রতি আইএসআইয়ের রাওলপিন্ডির দফতরে গিয়ে বৈঠক করেছেন তিনি। l তালিবানের নতুন নেতা মোল্লা আখতার মহম্মদ মনসুর। সম্প্রতি তালিবান জঙ্গিদের সঙ্গে কোয়েটায় একটি জনসভা করেছেন। l আল কায়দা নেতা আয়মান আল-জওয়াহিরি। পাক প্রশাসন শুধু যে তাকে নিরাপত্তাই দেয় তা নয়, দক্ষিণ-পশ্চিম বালুচিস্তানের ওই নেতাকে দক্ষিণ আফগানিস্থানে প্রশিক্ষণ শিবির খোলার জন্যও সব ধরনের সাহায্য করছে ইসলামাবাদ। এবং পাক সীমান্তের মাদ্রাসাগুলি হল এক-একটি মগজধোলাইয়ের কারখানা। সেখান থেকে বেরনো যুবকদের ব্যবহার করা হচ্ছে উত্তর আফগানিস্থানে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর কাজে। শুধু তাই নয়, এদের পরবর্তী নিশানা পশ্চিম চিন, মধ্য এশিয়া ও মুসলিম অধুষিত সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া। ওই এলাকাতেও নিজেদের প্রভাব বাড়াতে সক্রিয় রয়েছে পাক গোয়েন্দা সংস্থা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন