কেম ছো, জানতে চাইলেন ওবামা

‘কেম ছো’, কেমন আছেন? গুজরাতিতে করা ছোট্ট সম্বোধনেই যেন শীর্ষ বৈঠকের সুরটা বেঁধে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ভারত-মার্কিন সম্পর্কের নয়া অধ্যায়ের শুরুতে যে তিনিও একই রকম আগ্রহী, তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সোমবার নৈশভোজের আসরেই। মঙ্গলবার শীর্ষ বৈঠকের পরে সেই সুরই শোনা গিয়েছে মোদী ও ওবামার জারি করা যৌথ বিবৃতিতেও। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকে উঠে এসেছে সন্ত্রাসদমন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা, গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান ও ইবোলা সংক্রমণ-সহ সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১১
Share:

হোয়াইট হাউসে নৈশভোজের আগে নরেন্দ্র মোদী ও বারাক ওবামা। এএফপি-র ছবি।

‘কেম ছো’, কেমন আছেন? গুজরাতিতে করা ছোট্ট সম্বোধনেই যেন শীর্ষ বৈঠকের সুরটা বেঁধে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ভারত-মার্কিন সম্পর্কের নয়া অধ্যায়ের শুরুতে যে তিনিও একই রকম আগ্রহী, তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সোমবার নৈশভোজের আসরেই।

Advertisement

মঙ্গলবার শীর্ষ বৈঠকের পরে সেই সুরই শোনা গিয়েছে মোদী ও ওবামার জারি করা যৌথ বিবৃতিতেও। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকে উঠে এসেছে সন্ত্রাসদমন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা, গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান ও ইবোলা সংক্রমণ-সহ সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই।

সন্ত্রাসদমনের ক্ষেত্রে গোড়া থেকেই মার্কিন সাহায্য পেতে আগ্রহী মোদী। এই বিষয়ে আমেরিকা-ইজরায়েল অক্ষে যোগ দিতে চান তিনি। রাষ্ট্রপুঞ্জে ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

Advertisement

মুম্বই হামলার সময়ে পাকিস্তান থেকে লস্কর-ই-তইবা নেতাদের সঙ্গে জঙ্গিদের কথাবার্তায় আড়ি পাততে সাহায্য করেছিলেন মার্কিন গোয়েন্দারা। তদন্তে সাহায্যের পরে আসে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের দলও।

কিন্তু মার্কিন লস্কর জঙ্গি ডেভিড কোলম্যান হেডলির গ্রেফতারির পরে সমস্যা দেখা দেয়। ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পারেন, মুম্বইয়ে লস্কর জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তুগুলির উপরে নজরদারি চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিল হেডলি। মুম্বইয়ে অভিনেতা রাহুল ভট্ট-সহ অনেকের সঙ্গে পরিচিতিও ছিল তার। মার্কিন গোয়েন্দারা হেডলির কাজকর্ম সম্পর্কে আগেই জানতেন বলে অভিযোগ করে কোনও কোনও শিবির। হেডলিকে জেরা করতে চেয়েও সমস্যার মুখে পড়েন ভারতীয় গোয়েন্দারা। তবে এই ধরনের সমস্যা কাটিয়ে ভারত-মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান বাড়ানো দু’দেশের স্বার্থেই প্রয়োজন বলে মনে করেন কূটনীতিকরা।

সেই সঙ্গে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার ওবামার সঙ্গে বৈঠকের আগে ব্লেয়ার হাউসে মোদীর সঙ্গে দেখা করেন মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব চাক হাগেল। অগস্টে ভারত সফরের শেষে হাগেল জানান, ভারত ও আমেরিকার যৌথ ভাবে অস্ত্র উৎপাদন করা উচিত। এখনও বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারী ভারত। মোদী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি বার বারই জানিয়েছেন, তাঁরা এই পরিস্থিতি কাটিয়ে অস্ত্র উৎপাদনে দেশকে স্বাবলম্বী করার পক্ষপাতী। সেখানেই যৌথ উদ্যোগে অস্ত্র উৎপাদনের গুরুত্ব রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অফিসাররা। হাগেলের সফরের সময়েই ট্যাঙ্কবিধ্বংসী জ্যাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্র যৌথ উদ্যোগে তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল ওয়াশিংটন। বিশ্বে একমাত্র ভারতকেই এই প্রস্তাব দিয়েছে আমেরিকা।

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের বাজার ধরতে বেশ কয়েক বছর ধরেই বিশেষ উদ্যোগী মার্কিন সংস্থাগুলি। কিন্তু ভারতীয় বায়ুসেনার ১২৬টি যুদ্ধবিমান কেনার বিপুল বরাত হাতছাড়া হওয়ায় বড় ধাক্কা খায় তারা। ওই চুক্তির জন্য এক ফরাসি প্রতিরক্ষা সংস্থার তৈরি রাফাল ফাইটার জেটকে বেছে নিয়েছিল ভারত। এখন নতুন ভাবে ভারত নিয়ে উদ্যোগী হয়েছে ওয়াশিংটন। যৌথ উদ্যোগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরকে হাতিয়ার করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজারের বড় অংশ নিজেদের কব্জায় আনতে চায় তারা।

যৌথ বিবৃতিতে আফগানিস্তানকেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন মোদী ও ওবামা। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার পরে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের মদতে ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ বাড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন দিল্লি। মোদী ক্ষমতায় আসার পরে হেরাটে ভারতীয় কনস্যুলেটে হামলা চালায় লস্কর-ই-তইবা। স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আফগান সরকারকে ভারত ও আমেরিকা সাহায্য করবে বলে জানিয়েছেন ওবামা-মোদী।

যৌথ বিবৃতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল সুর এখন ‘চলেন সাথ সাথ’, অর্থাৎ হাতে হাত মিলিয়ে চলা। সেই প্রতিশ্রুতি কত দূর পূরণ করা সম্ভব হবে তা বলবে ভবিষ্যৎ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন