প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। ছবি : পিটিআই।
ঘরোয়া আলোচনার মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের কাছে পৌঁছে যখন কাশ্মীর-পরিস্থিতি শান্ত করতে চাইছে সরকার, সেই সময়ে আন্তর্জাতিক স্তরে কাশ্মীর-ইস্যুকে আরও তাতিয়ে তুলতে চাইছে পাকিস্তান।
কাশ্মীরে কার্ফুর ৫০তম দিনে আজ দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। এই বৈঠকে আলোচনা হয়, কাশ্মীরের পরিস্থিতি শান্ত করতে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। তার জন্য এমন ব্যক্তিদের বাছতে হবে, যাঁরা এই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন। এর পাশাপাশি একটি সর্বদল প্রতিনিধি পাঠিয়েও সমাজের সব অংশের সঙ্গে আলোচনা দরকার। বিচ্ছিন্নতবাদী নেতারা যে গরিব যুবকদের কাজে লাগাচ্ছেন, তাঁদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে দুর্বল করতে হবে এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের। কিন্তু এরই মধ্যে পরিস্থিতিকে আরও উস্কে দিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ২২ জন সাংসদকে বিশেষ দূত হিসেবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জে। যাতে সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপুঞ্জের বার্ষিক সাধারণ সভায় কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে পারে পাকিস্তান।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রের মতে, এই মুহূর্তে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ মদতেই কাশ্মীরের হুরিয়ত নেতারা লাগাতার উপত্যকার যুবকদের তাতিয়ে আক্রমণ করে যাচ্ছেন। ক্রমাগত তাঁরা নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পের উপর আক্রমণের নির্দেশ দিচ্ছেন। ফলে কাশ্মীরের পরিস্থিতি শান্ত করতে এখন যেটি প্রয়োজন, তা হল এই সব নিরীহ যুবকের পাশে দাঁড়িয়ে বিচ্ছিন্নতবাদী নেতাদের আলাদা করা। যে কারণে হুরিয়তের দুই বড় নেতা সইদ আলি গিলানি ও মীরওয়াইজ উমর ফারুককে আটক করা হয়েছে। আর এক নেতা ইয়াসিন মালিক আগেই জেলে রয়েছেন। স্থানীয় আরও চারশো নেতাকে ধরা হয়েছে প্ররোচনার জন্য। কিন্তু এঁদের আটক করার পর অশান্তি যাতে না বাড়ে, তার জন্য ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে আজ ফের আবেদন করেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। তিনি হুরিয়ত নেতাদের কাছে আবেদন করেন, ‘‘আমাদের গরিব যুবকরা যাতে মারা না যায়, তার জন্য হুরিয়ত নেতাদেরও সাহায্য চাইছি। কার্ফু লাগানো হয়েছে শুধুমাত্র এই গরিব যুবকদের বাঁচানোর জন্য। কিন্তু নিরন্তর যদি তাঁদের হামলা করার জন্য প্ররোচনা দেওয়া হয়, তাতে কার লাভ? হুরিয়ত নেতাদের নিজেদের ছেলেমেয়েরা তো এতে সামিল হচ্ছে না। হচ্ছে গরিব ঘরের যুবকরা।’’
আরও পড়ুন: মোদী-মুফতি বৈঠক আজ, ছররা বন্দুকের পরিবর্তে উপত্যকায় ‘পাভা শেল’?
প্রশ্ন হল, খোদ হুরিয়ত নেতারা কি এই ডাকে সাড়া দিচ্ছেন?
গত ৮ জুলাই থেকেই সঈদ আলি গিলানি, মীরওয়াইজ উমর ফারুক, ইয়াসিন মালিকদের মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা যৌথ প্রতিবাদ করে আসছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সকলের সঙ্গে কথা বলার আবেদন করলেও এই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা তাতে সাড়া দেননি। এমনকী, মীরওয়াইজ উমর ফারুকের মতো নেতারা এখন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনাতেও বসতে ভয় পান। অতীতে এ ধরনের আলোচনা করে তাঁর দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ফজল-উল-হকের উপর সন্ত্রাসবাদীরাই হামলা চালায়। ফজল-উল-হক একসময় কেন্দ্রের সঙ্গে গোপন আলোচনা করতেন। সে কারণে এখন তাঁরাও পাকিস্তানের সুরে সুর মিলিয়ে বলছেন, আলোচনা হলে হবে রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে অথবা যে আলোচনায় জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে পাকিস্তান সামিল হবে।
এই জটিল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্যই আজ মোদী-মেহবুবা বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে ট্র্যাক টু-র মাধ্যমে কথা হোক। এমন একটি দল তৈরি করা হোক, যারা এই হুরিয়ত নেতাদের কাছেও গ্রহণযোগ্য হবে। কাশ্মীর থেকেই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এ জন্য বাছাই করা হবে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন প্রধানমন্ত্রী। সামনের সপ্তাহের শেষে সর্বদল পাঠানো নিয়ে একটি ভাবনাচিন্তা হয়েছে। তার আগেই এই ট্র্যাক-টু আলোচনার জন্য টিম তৈরি হয়ে যাবে। কাশ্মীরের এক নরমপন্থী হুরিয়ত নেতা আজ বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি শান্ত করার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু যুবকরা যে ভাবে উত্তেজিত হয়ে রয়েছে, তা আমাদের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। এখন কেন্দ্রের সঙ্গে কোনও আলোচনা আত্মঘাতী পদক্ষেপ হবে।’’