— ফাইল চিত্র।
এক ঢিলে অনেক পাখি ঘায়েল করলেন নরেন্দ্র মোদী।
তবে ঠিক ঢিল নয়। প্রধানমন্ত্রীর অস্ত্র এক্ষেত্রে টুইটার। শুক্রবার সকাল থেকে মাত্র কয়েকটি টুইটে দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দে সমীকরণ বেশ খানিকটা বদলে দিয়েছেন মোদী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত অন্তত তেমনই।
বরাবরই বিজেপি’র অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মোদী বিরোধী শিবিরে ছিলেন সুষমা স্বরাজ। ২০১৪-এ বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত সুষমা ছিলেন আডবাণীর ঘনিষ্ঠ। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আডবাণী যত অপ্রাসঙ্গিক হয়েছেন, ততই সুষমা হয়ে উঠেছেন মন্ত্রিসভায় মোদী বিরোধী শিবিরের প্রধান মুখ। সেই সুষমাকে হঠাৎ এত প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন মোদী!
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা মোদীর মাস্টারস্ট্রোক। সুষমা স্বরাজকে বিদেশমন্ত্রী করলেও মোদী কখনোই ক্যাবিনেটে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে দেননি তাঁকে। তাতে মোদীর প্রতি সুষমার ক্ষোভ বেড়েছে বই কমেনি। কিন্তু, ললিত মোদীকে আইনের ফাঁস এড়িয়ে বিদেশে যেতে সাহায্য করার অভিযোগ ওঠার পর বিরোধীরা যখন সম্মিলিত ভাবে সুষমার তুমুল বিরোধিতায় নেমেছেন, ঠিক তখনই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে হঠাৎ সুষমাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এর মাধ্যমে সুষমার আনুগত্য আদায় করে নিলেন মোদী, বলছে রাজনৈতিক শিবির। দলীয় সমীকরণে সুষমা এখন শক্তিশালী তো ননই। ললিত কাণ্ডের পর থেকে সরকারেও তিনি কোণঠাসা। এমন দুর্বল সুষমা স্বরাজকে রাজনৈতিক ভাবে বধ করে যে খুব বেশি লাভ নেই, কুশলী রাজনীতিক মোদী তা ভালই জানেন। তাই সুষমার আনুগত্য আদায় করে দল ও সরকারে নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করলেন তিনি। বিরোধীদের তুমুল আক্রমণ উপেক্ষা করে তিনি প্রথমে সুষমাকে ক্যাবিনেটে বহাল রেখেছেন। এ বার ভূয়সী প্রশংসা করে সুষমার মাথায় চাপিয়ে দিলেন কৃতজ্ঞতার ভার।
বিরোধীদের আক্রমণের ধারকেও বেশ খানিকটা ভোঁতা করলেন নরেন্দ্র মোদী, বলছে ওয়াকিবহাল মহল। সুষমার ইস্তফা দাবি করে আগের অধিবেশনে সংসদ অচল করে রেখেছিল বিরোধীরা। রাষ্ট্রপুঞ্জে সুষমার ভূমিকাকে শুক্রবার মহিমান্বিত করে দেখিয়ে সুষমার ভাবমূর্তি এক ধাক্কায় অনেকটা উজ্জ্বল করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদের আসন্ন অধিবেশনে সুষমাকে আক্রমণ করার আগে এ বার কিন্তু বারকয়েক ভাবতে হবে বিরোধীদের।
শুধু সুষমা কিন্তু নয়, সম্প্রতি রাজনাথ সিং-এরও প্রশংসা শোনা গিয়েছে মোদীর মুখে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সুষমা এবং রাজনাথের গুরুত্ব বাড়াতেই মোদীর এই শংসাবাক্য। সরকারে অরুণ জেটলির প্রভাব দিন দিন যে ভাবে বাড়ছে, তা নাকি এখন মোদীর না-পসন্দ্। তিনি নাকি এখন ভারসাম্য আনতে চাইছেন। জেটলিকে অন্যদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব এক সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেই দিয়েছিলেন। কিন্তু, তাতে রাজনৈতিক লাভ এখনও তেমন চোখে পড়েনি মোদীর। তাই সুষমা, রাজনাথদের গুরুত্ব বাড়িয়ে জেটলির বিশেষত্ব খর্ব করছেন মোদী, খবর সাউথ ব্লক সূত্রের।
শুক্রবার সকালের পর পর কয়েকটি টুইট তা হলে এত তাৎপর্যপূর্ণ! নর্থ ব্লক, সাউথ ব্লকের আনাচে কানাচে গুঞ্জন অন্তত সে রকমই।