মোদী সরকার একশো দিন পার করতেই ঘরের ঝগড়া বাইরে বেরিয়ে পড়ল। সৌজন্যে, পঙ্কজ সিংহ!
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের ছেলে এই পঙ্কজ। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, পঙ্কজের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, বাবার পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থের বিনিময়ে আমলাদের পছন্দসই বদলির ব্যবস্থা করছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নিজে তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে সতর্ক করেছেন বলেও খবর। রাজনাথ চাইলেও নয়ডার উপনির্বাচনে পঙ্কজকে প্রার্থী করেননি বিজেপির নতুন সভাপতি অমিত শাহ।
সংবাদমাধ্যমে বিষয়টা নিয়ে নাড়াচাড়া হতেই ফোঁস করে উঠেছেন রাজনাথ। সটান সঙ্ঘ নেতৃত্বের কাছে গিয়ে নালিশ করেছেন তিনি। সঙ্ঘের নির্দেশেই পরিস্থিতি সামলাতে মোদী ও অমিত শাহকে আজ রাজনাথের পাশে এসে দাঁড়াতে হয়েছে। দু’জনই আজ বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, পঙ্কজ সংক্রান্ত খবর স্রেফ ‘গুজব’।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্ক খুব ভাল কোনও দিনই নয়। আরএসএসের দৌলতে রাজনাথ সরকারের দু’নম্বর জায়গাটি দখল করে বসলেও তাঁর ডানা ছাঁটার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছেন মোদী। রাজনাথের পছন্দের ব্যক্তিগত সচিবকে খারিজ করে দিয়েছেন। সরকারে যাবতীয় নিয়োগের ক্ষমতাও রাজনাথের কাছ থেকে কেড়ে নিজের হাতে নিয়েছেন মোদী।
লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশীদের দুরবস্থা দেখে এত দিন মুখ বুজে সব সহ্য করে যাচ্ছিলেন রাজনাথ। কিন্তু ছেলের কেলেঙ্কারির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে আর স্থির থাকতে পারেননি। সরকারে দু’নম্বর ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও কী ভাবে তাঁকে হেনস্থা হতে হচ্ছে, সঙ্ঘ নেতৃত্বের কাছে গিয়ে তার সাতকাহন বর্ণনা করে এসেছেন। এর পরেই সঙ্ঘ নেতৃত্ব কথা বলেন অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে।
কিন্তু মোদী-অমিত যতই বিবৃতি দিন, পঙ্কজের ঘটনার মধ্য দিয়েই কিন্তু সরকারের ভিতরের ঝগড়াঝাঁটি আজ প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। রাজনাথের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, মন্ত্রিসভার শীর্ষ পর্যায়ের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যই সংবাদমাধ্যমকে খবরটা দিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে রাজনাথ নিজে আজ বিস্তর মান-অভিমানের কথা শোনান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমার বা আমার পরিবারের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণ হলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। তিনিও এই গুজবে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।”
এর পরেই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তাঁর ছেলের ব্যাপারে প্রকাশিত খবর শুধু ভিত্তিহীনই নয়, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার প্রয়াস। এর পর অমিত শাহও দীর্ঘ বিবৃতিতে রাজনাথ ও তাঁর পুত্র পঙ্কজকে ক্লিনচিট দিয়ে দলে তাঁদের অবদানের প্রশংসা করেন।
অথচ বিজেপিরই একটি সূত্রের দাবি, পঙ্কজকে ডেকে প্রধানমন্ত্রী যে সতর্ক করেছেন, সে খবর আদৌ অসত্য নয়। সঙ্ঘের চাপে রাজনাথকে মন্ত্রিসভায় দ্বিতীয় ব্যক্তি করা হলেও মোদী আসল দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন অরুণ জেটলিকেই। তা নিয়ে রাজনাথের যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। সুতরাং শুধু বিবৃতির ক্লিনচিটেই যে সব কিছু স্বাভাবিক হচ্ছে না, বিজেপি নেতৃত্ব তা জানেন। তবে কৌশলগত কারণে মোদী এই মুহূর্তে রাজনাথকে নিয়ে সঙ্ঘের সঙ্গে বিবাদে যেতে চান না। তাই আপাতত রাজনাথের পাশে এসে দাঁড়িয়ে মোদী দেখাতে চেয়েছেন, সব ঠিকঠাক চলছে।
কিন্তু অন্তর্কলহ চাপা থাকল কই? কংগ্রেসের নেতা অজয় মাকেন তাই কটাক্ষ করে বলছেন, “রাজনাথ বিষয়টি প্রকাশ্যে না আসলে তো জানাই যেত না, বিজেপির ভিতরে এত ঝড়ঝাপটা চলছে। বিরোধীরা কিচ্ছু বলেনি, কোনও প্রশ্নও তোলেনি। তার পরেও খোদ প্রধানমন্ত্রীকে কেন সাফাই গাইতে হচ্ছে?”