শনিবার নয়াদিল্লিতে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই এ বার ভোটের রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগ তুললেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। নাম না করলেও তাঁর মূল নিশানা অবশ্যই কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গাঁধী।
উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের বিভিন্ন অংশে ঘটে চলা সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস এখন কাঠগড়ায় তুলছে বিজেপিকে। চেনা ভাবমূর্তি ভেঙে রাহুল সম্প্রতি নিজে লোকসভার ওয়েলে নেমে স্লোগানও দিয়েছেন এ নিয়ে। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরতন্ত্রের ও লোকসভার স্পিকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনেছেন সংসদে ও সংসদের বাইরে। মোদীর নির্দেশে অরুণ জেটলি দিনের দিনই ব্যক্তিগত ভাবে বিঁধেছিলেন রাহুলকে। প্রাসাদে অভ্যুত্থানের কথা বলে রাহুলের যোগ্যতা নিয়ে কংগ্রেসে যে বিতর্ক চলছে সে কথাই খুঁচিয়ে তুলেছিলেন মোদীর অন্যতম সেনাপতি জেটলি।
কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব এ ভাবে রাহুলকে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও, দমছে না কংগ্রেস। দলের বিভিন্ন নেতাই সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনাগুলি ও কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে সরব। রাহুল নিজেও এ নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছেন সংবাদপত্রে। ফলে এ নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর ছিলই। কিন্তু বিপক্ষের অস্ত্রকে নিজের হাতিয়ার করে তোলার ব্যাপারে দক্ষ মোদী আজ কংগ্রেসের আক্রমণের মুখ রাহুলকেই বিঁধলেন সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার অভিযোগে। দলের জাতীয় পরিষদের বৈঠকে মোদী আজ বলেন, “যে ধরনের হিংসার ঘটনা দেশে হচ্ছে, বিজেপি তা সমর্থন করে না। কারণ, শান্তি ও সম্প্রীতির বাতাবরণই হচ্ছে অগ্রগতির পূর্বশর্ত।” আর তার পরেই মোদী বলেন, “ভোটে গোহারা হয়েও অনেকের শিক্ষা হয়নি। এখনও ভোট-ব্যাঙ্কের রাজনীতি করছেন। দেশের সম্প্রীতির পরিবেশকে নষ্ট করছেন।”
জেটলির পরে মোদী খোদ নিজেই এ ভাবে পাল্টা আক্রমণে নামার কারণ কী? বিজেপি-কংগ্রেস, দুই শিবিরের নেতারাই মনে করছেন, রাহুল থামছেন না দেখেই আসরে নেমেছেন মোদী। সংসদে শোরগোল ফেলার পরে গত কালও রাহুল সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, “উত্তরপ্রদেশে যে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলছে, তা ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘটানো হচ্ছে।” রাহুল অবশ্য স্পষ্ট করে বিজেপির নাম করেননি। কিন্তু তিনি যে বিজেপিকেই দায়ী করতে চাইছেন, সেটা স্পষ্টই। এ-ও মনে করা হচ্ছে, বিজেপির জাতীয় পরিষদের বৈঠকের দিনেই যাতে খবরের কাগজে সাম্প্রদায়িক হিংসা নিয়ে এই বিবৃতি প্রকাশ পায় সেটাও মাথা রেখেছিলেন রাহুল।
দলের সহসভাপতি এ ভাবে মুখ খোলার পর কংগ্রেসের শীর্ষ সারির অন্য নেতারাও একে একে আজ বিজেপি সরকারকে নিশানা করতে নেমে পড়েন। সূত্রের খবর, সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়ার পর সোমবার সংসদেও এ বিষয়ে মোদীর বিরুদ্ধে সরব হতে পারেন রাহুল। কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় ফেলতে এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে?
আমেরিকা সফরের আগে কংগ্রেস এটাই তুলে ধরতে চায় যে, প্রধানমন্ত্রী হয়েও মোদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতিই করে যাচ্ছেন। কিন্তু তার চেয়েও বড় কারণ হল, জমি খোয়ানোর আশঙ্কা। ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, লোকসভা ভোটে ধর্মীয় মেরুকরণের ফায়দা পেয়েছে বিজেপি। এ বার হিন্দিবলয় ও দেশের অন্যত্রও সেই একই কায়দায় রাজনৈতিক লাভের আশা দেখছেন অমিত শাহরা। সে জন্যই উত্তরপ্রদেশে যে ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে, বেছে বেছে সেখানে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত এ ধরনের ৬০০টি ঘটনা ঘটেছে দেশে। স্বাভাবিক ভাবেই এই মেরুকরণের পরিবেশে আরও জমি হারানোর আশঙ্কা করছে কংগ্রেস।
দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা অজয় মাকেন আজ বলেন, বিজেপির এই বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে মানুষের চোখ খুলে দেওয়াটাই কংগ্রেসের লক্ষ্য। কংগ্রেস তোষণের রাজনীতি করছে না। সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় দু’সম্প্রদায়েরই ক্ষতি।
মাকেন এ-ও বলেন, “বিজেপির জাতীয় পরিষদের বৈঠকে মোদী যে ভাবে বারবার কংগ্রেসের সমালোচনা করেছেন, তা দেখে মনে হচ্ছে বিজেপি এখনও কেন্দ্রে বিরোধী দল। মোদী ভুলেই গেছেন উনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।” কংগ্রেসকে আক্রমণ করে মোদী মূল বিতর্কের মুখ ঘোরাতে চাইছেন বলে মনে করেন মাকেন। তাই মোদীর উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, “কংগ্রেস-মুক্ত ভারতের কথা বন্ধ করে, সাম্প্রদায়িক হিংসা-মুক্ত ভারত গড়তে ও মূল্যবৃদ্ধি থেকে দেশকে মুক্তি দিতে মোদী কী পদক্ষেপ করবেন, সেটা বলুন।”