uday project

বিদ্যুতে মোদীর উদ্যোগ, আপত্তি মমতার

রাজ্যের স্বার্থে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে এ বার নতুন বিতর্কের পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিতর্ক যে প্রকল্পটি নিয়ে, তার নাম ‘উদয়’। পুরো কথাটা উজ্জ্বল ডিসকম অ্যাসিওরেন্স যোজনা।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৭
Share:

রাজ্যের স্বার্থে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে এ বার নতুন বিতর্কের পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

বিতর্ক যে প্রকল্পটি নিয়ে, তার নাম ‘উদয়’। পুরো কথাটা উজ্জ্বল ডিসকম অ্যাসিওরেন্স যোজনা। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রী পীযূষ গয়াল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেছেন এই প্রকল্প মেনে নেওয়ার জন্য। এক সাক্ষাত্কারে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, “অধিকাংশ রাজ্যই এই প্রকল্প মেনে নিয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ এখনও মউ সই করেনি। অথচ এই প্রকল্প মেনে নিলে রাজ্যে বিদ্যুতের দাম কম করা সম্ভব হবে। সাধারণ মানুষেরও সুবিধে হবে।’’ গয়াল জানান, এই প্রকল্প মেনে নিলে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ এবং সিইএসসি কেন্দ্রের থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ সাহায্য পাবে। তা ছাড়া, সরকারি এবং বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি বাজারে বন্ড ছেড়ে টাকা তুলতে পারবে।

কিন্তু গয়ালের প্রস্তাব কোনও ভাবেই মেনে নিচ্ছেন না মমতা। বরং তিনি কেন্দ্রের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছেন। তাঁর মতে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে আসলে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে কেন্দ্র। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সমীকরণ ধাক্কা খাচ্ছে। কেননা, রাজ্য তার বিদ্যুৎ পর্ষদ নিয়ে কী করবে, সেটা তার অধিকারের ক্ষেত্র। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অভিযোগ, উদয়ের প্রস্তাব না মানলে বিদ্যুতের জন্য কয়লা বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে কেন্দ্র। এতেই চটেছেন মমতা। গয়ালকে চিঠি লিখে তিনি জানিয়েছেন কী কারণে কেন্দ্রের প্রস্তাবে আপত্তি জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। বিষয়টি নিয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘পীযূষ গয়ালের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক একই রকম থাকবে। কিন্তু রাজ্যের বিষয়ে কোনও দিন আপস করিনি, করবও না। এই প্রকল্পে বেশ কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সমীকরণ ব্যাহত হচ্ছে।’’

Advertisement

আগামী কাল ও পরশু, মঙ্গল ও বুধবার সব রাজ্যের মুখ্যসচিব ও বিদ্যুত্সচিবদের নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মেলন হবে দিল্লিতে। এ জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব এবং বিদ্যুৎসচিব দিল্লি আসছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আজ রাতে রাজধানীতে পৌঁছেছেন। পাশাপাশি, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও দিল্লি এসেছেন শিল্প সম্মেলন উপলক্ষে। পীষূষ গয়াল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর এ বারের দিল্লি সফরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। আলোচনা হবে পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎমন্ত্রী, মুখ্যসচিব ও বিদ্যুৎসচিবের সঙ্গেও। আশা করছি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বুঝতে পারবে এ প্রকল্পে রাজ্যেরই লাভ।” রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ও বিদ্যুৎ দফতরের উপদেষ্টা, প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রী মনীশ গুপ্তকে এই বিতর্কের মধ্যে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছেন মমতা।

উদয় প্রকল্পটি আসলে কী? কেনই বা নরেন্দ্র মোদী সরকার এ নিয়ে এত জোর দিচ্ছে?

কেন্দ্রের ব্যাখ্যা হল, এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করা যেতে পারে, যাতে তারা উত্পাদনশীলতা বাড়াতে আরও সক্রিয় হয়। সে জন্য তাদের কাজকর্ম ও কাঠামো পুনর্বিন্যাসেরও দরকার হতে পারে। সেটা করতে পারলে তাদের আর্থিক খরচ কমবে। ফলে এক দিকে যেমন লোকসান কমবে, অন্য দিকে বিদ্যুতের দাম তুলনায় কম বাড়িয়ে কিছুটা সুবিধে গ্রাহকদের কাছেও পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। এই সব যুক্তি সামনে রেখেই কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করছে, প্রকল্পটি গ্রহণ করলে আসলে রাজ্যের মানুষেরই লাভ।

উদয় নিয়ে কেন্দ্রের যুক্তি হল, প্রাথমিক ভাবে সব চেয়ে বড় সুবিধে হতে পারে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্যুৎ পর্ষদগুলির। তাদের বকেয়া ঋণ এখন অনেক। সে জন্য খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদগুলিকে। যেমন কোল ইন্ডিয়া জানিয়ে দিয়েছে, তারা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের কাছে থেকে এখনই বকেয়া ১ হাজার কোটি টাকা চায়। অন্য দিকে, ডিভিসি-ও ঝাড়খণ্ড সরকারের থেকে বকেয়া ৫ হাজার কোটি টাকা চেয়ে বসেছে। অথচ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদগুলির এত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই।

কেন্দ্র জানাচ্ছে, উদয় প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির বকেয়া ঋণের ৫০ শতাংশ তারা কিস্তির ভিত্তিতে চুকিয়ে দেবে। আর বাজারে বন্ড ছেড়ে নতুন ঋণ নিয়ে বকেয়ার ২৫ শতাংশ মেটাতে পারবে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ পর্ষদ কেন্দ্রের কাছ থেকে বছরে কার্যত ৩০০ কোটি টাকা পাবে। সিইএসসি পাবে ৩০-৪০ কোটি টাকা। সিইএসসি-র কর্ণধার, শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েন্কা বলেন, “আমরা কেন্দ্রের প্রস্তাব সমর্থন করছি। রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ কেন্দ্রের কাছে যে পরিমাণ আর্থিক সাহায্য পাবে, তার তুলনায় আমরা অনেক কম পাব। তবু মনে হয়, রাজ্য বিদ্যুৎ পরিকাঠামো পুনর্গঠন করার সময় এসেছে।”

ওড়িশার মতো রাজ্য এই প্রকল্পে যোগ দিতে সম্মত হয়েছে। তবে তারা এ-ও জানিয়েছে, তাদের রাজ্যের বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাই এখন কী-ই বা আর করার রয়েছে? কেননা, বেসরকারি সংস্থার উপর তাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।

সুতরাং, এই প্রকল্প কার্যকর করার ব্যাপারটা পুরোপুরি রাজ্য সরকারের হাতে নেই। এই কারণে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বেসরকারি সংস্থাগুলিও যাতে উদয় প্রকল্প রূপায়ণ করে, সে জন্য কিছু দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রকল্পটির সংশোধিত রূপ নিয়ে আসা হবে। প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের জন্য তা সংসদে পেশ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন