মাওবাদী দুর্গে মোদীর সভা, সজাগ রক্ষীরা

বৃহস্পতিবারের সকাল। ঘড়ির কাঁটায় তখন ১০টা বেজে ৪০ মিনিট। ডালটনগঞ্জের ধর্মশালা রোডের উপর পুলিশের জটলা। এ-দিক ও-দিক ছড়িয়ে পুলিশের গাড়ি। হঠাৎ দেখলে মনে হবে, শহরে যেন মাওবাদী হামলা হয়েছে। ধর্মশালা মোড় থেকে সিঁয়াকি বিমানবন্দরের দিকে যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় কিছুটা এগোতেই রাস্তায় পলামু পুলিশের ব্যারিকেড। প্রহরীর প্রশ্ন “কোথা থেকে এসেছেন? কোথায় যাবেন? কী কাজ?”

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

ডালটনগঞ্জ শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৯
Share:

পলামুর ডালটনগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলে চলছে নিরাপত্তারক্ষীদের মহড়া। সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের ছবি।

বৃহস্পতিবারের সকাল। ঘড়ির কাঁটায় তখন ১০টা বেজে ৪০ মিনিট। ডালটনগঞ্জের ধর্মশালা রোডের উপর পুলিশের জটলা। এ-দিক ও-দিক ছড়িয়ে পুলিশের গাড়ি। হঠাৎ দেখলে মনে হবে, শহরে যেন মাওবাদী হামলা হয়েছে। ধর্মশালা মোড় থেকে সিঁয়াকি বিমানবন্দরের দিকে যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় কিছুটা এগোতেই রাস্তায় পলামু পুলিশের ব্যারিকেড। প্রহরীর প্রশ্ন “কোথা থেকে এসেছেন? কোথায় যাবেন? কী কাজ?”

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পলামু সফরের ২৪ ঘণ্টা আগে নিরাপত্তায় মোড়া ডালটনগঞ্জের ছবিটা এমনই।

দিল্লির কুর্সিতে বসার পর প্রথম বার ‘মাওবাদী দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত পলামুতে আসছেন মোদী। ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে কাল মাঠে নামছেন তিনি। দুপুর ১১টায় বিমানবন্দর লাগোয়া ময়দানের মঞ্চে উঠবেন তিনি। পরের সভা চান্দোয়াতে। স্পর্শকাতর জায়গা বলে আলো থাকতে থাকতেই সভাগুলি শেষ করতে চায় মোদীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি)।

Advertisement

২৫ নভেম্বর প্রথম দফায় পলামুর ন’টি আসন-সহ ঝাড়খণ্ডের মোট ১৩টি আসনে ভোটগ্রহণ। প্রথম দফার প্রচারে আসছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে ডালটনগঞ্জের বিমানবন্দর নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা। দফায় দফায় চলছে মহড়া। মোদীর হেলিকপ্টার যেখানে নামবে, তার ধারেকাছে যেতে দেওয়া হয়নি সংবাদমাধ্যমকেও। জেলার এসপি ময়ূর পটেল জানান, আজ দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুঁটিয়ে দেখেন এসপিজি, এনএসজি-সহ কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার অফিসাররা। মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা বলে মোদীর সফর ঘিরে বাড়তি সতর্ক রাজ্য পুলিশও। শুধু শহর এলাকাই নয়, গত কাল রাঁচি থেকে লাতেহার হয়ে পলামু পৌঁছনোর রাস্তায় কিছুটা পরপরই চোখে পড়েছে পুলিশের টহলদারি গাড়ি, সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীর রক্ষীদের আনাগোনা।

ডালটনগঞ্জ টাউন থানার এক অফিসারের মন্তব্য, “প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় না যেতে গ্রামে গ্রামে পোস্টার দিয়েছে মাওবাদীরা। লোকজনকে হুমকিও দিচ্ছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার গুমলায় বিজেপির প্রচার-গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে জঙ্গিরা। রাজ্যে এ সব ঘটনা নতুন না হলেও মোদীর সফরের আগে কিছুই হালকা ভাবে দেখতে নারাজ পুলিশ-প্রশাসন। তাই লাতেহার, পলামুর উপর দিয়ে যাতায়াতকারী ট্রেনগুলিতেও নজরদারি বাড়ানোর জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।

লোকসভা ভোটে পলামু কেন্দ্রে জিতেছে বিজেপিই। আগের বিধানসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে অবশ্য লাতেহার, মনিকা ছাড়া অন্য জায়গায় তাঁরা পিছিয়ে রয়েছে। তবে বিজেপি-র পক্ষে স্বস্তিকর যে কয়েক দিন আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ছত্তরপুরের জেভিএম বিধায়ক সত্যেন্দ্রনাথ সিংহ ও ভবনাথপুরের কংগ্রেস বিধায়ক অনন্তপ্রতাপ দেব। যদিও বিধানসভার হিসেব মানতে নারাজ প্রদেশ বিজেপি নেতারা। তাঁদের আশা, মোদীর জনসভায় ভিড় জমাবেন দেড় থেকে দু’লক্ষ মানুষ। পলামুতে দলের অন্যতম নেতা মহিন্দর সিংহ বলছেন, “নেতাদের সঙ্গে তো বটেই, মোদীজির কথা শুনতে আসবেন আশপাশের লক্ষ লক্ষ বাসিন্দা।”

মোদী-ম্যাজিকে কতটা ভিড় জমবে পলামুতে, তা দেখতেই এখন উৎসুক প্রদেশ বিজেপি নেতৃত্ব। উৎসুক বিরোধী নেতারাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন