পাকিস্তান বাগড়া দেওয়ার ফলে বহু বছর ধরে থমকে রয়েছে সার্ক-এর যাবতীয় সন্ত্রাস-বিরোধী উদ্যোগ এবং কর্মসূচি। বিকল্পের সন্ধানে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে জঙ্গি মোকাবিলার মঞ্চ তৈরি করতে সক্রিয় কেন্দ্র।
আগামী ৩০ অগস্ট কাঠমান্ডুতে শুরু হচ্ছে বিমস্টেক-এর শীর্ষ সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও সেখানে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মায়ানমার-সহ ৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আবেদন জানাবেন বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলকে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির ‘সাধারণ নিরাপত্তা অঞ্চল’ হিসেবে গড়ে তোলার। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই দু’দিনের সম্মেলন শেষ হওয়ার পরেই পুণেতে বিমস্টেকভুক্ত রাষ্ট্রগুলির সেনাপ্রধানদের সম্মেলন হবে। যার প্রধান বিষয় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযানকে আরও সংঘবদ্ধ করা। সেখানে যৌথ সামরিক মহড়া হওয়ারও কথা রয়েছে।
বিমস্টেক-এর মতো অর্থনীতি-কেন্দ্রিক বহুপাক্ষিক গোষ্ঠীকে কেন সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতার মঞ্চ হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে নয়াদিল্লি? নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এর কারণ মূলত দু’টি। প্রথমত দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা প্রশ্নে যে উদ্যোগ গত কয়েক বছর ধরে (তা সে কেন্দ্রে যে সরকারই থাকুক না কেন) নিতে চাইছে কেন্দ্র, তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ইসলামাবাদের বাধায়। ফলে বিমস্টেক-কে কাজে লাগিয়ে (যার অনেক দেশই সার্ক-এরও সদস্য) সেই উদ্যোগগুলিতে সিলমোহর লাগাতে চাইছে ভারত। দুই, ইমরানের নতুন সরকারকে ধাতস্থ হতে দেওয়ার আগেই আঞ্চলিক ভূকৌশলগত রাজনীতিতে বাড়তি প্রভাব তৈরি করে রাখা।
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ রুখতে সহযোগিতা, বন্দি প্রত্যর্পণ, মাদক চোরাচালান, আন্তঃসীমান্ত সংগঠিত অপরাধ দমন, অপরাধের ক্ষেত্রে পারস্পরিক আইনি সহায়তা সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলি কাঠমান্ডুর বৈঠকে সামনে নিয়ে আসতে চলেছে নয়াদিল্লি। এগুলি নিয়ে সার্কের মঞ্চে বহু লড়াই করেছে মনমোহন সরকারও। পারস্পরিক আইনি সহায়তার ব্যাপারে সার্ক শেষ পর্যন্ত একটি প্রস্তাব পাশ করে ঠিকই। কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত হয়নি পাকিস্তান সরকারের অসহযোগিতায়।
এমন একটি সময়ে বিমস্টেক-এর আসর বসছে যখন পাকিস্তানে ইমরান সরকার নিজ দেশে সার্ক-এর আয়োজন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। ৯ নভেম্বর সার্ক-এর সম্ভাব্য বৈঠক। ভারত যাতে তাতে যোগ দেয় তার জন্য চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে ইসলামাবাদের তরফ থেকে। এর আগে ভারত-বিরোধী নাশকতার (উরি হামলা) কারণেই সার্ক বয়কট করেছিল ভারত। শুধু নিজেরা বয়কটই নয়, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দেশগুলিকেও পাক-নিন্দায় শামিল করা হয় সেই সময়ে।