মোদীর সফরের দিন গুনছেন ওবামা

অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ওয়াশিংটন সফরের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে। মোদী আমেরিকা যাওয়ার আমন্ত্রণ স্বীকার করার পরেই তাঁর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের তোড়জোড় শুরু করেছে ওবামা প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৪ ০৩:৪৬
Share:

অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ওয়াশিংটন সফরের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে। মোদী আমেরিকা যাওয়ার আমন্ত্রণ স্বীকার করার পরেই তাঁর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের তোড়জোড় শুরু করেছে ওবামা প্রশাসন। মোদী আমেরিকা সফরে সায় দেওয়ায় খুশি সে দেশের বণিক মহলও। সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনের সময়ই ওয়াশিংটনে ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে পারেন ওবামা। দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্রের মতে, সম্ভবত ২৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটা বা দু’টো দিন আলোচনায় বসবেন দুই শীর্ষ নেতা।

Advertisement

দেরিতে হলেও নরেন্দ্র মোদীর ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান বদলেছে আমেরিকা। ব্রিটেন বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগেই মোদীর ব্যাপারে অবস্থান বদলেছিল। পরিস্থিতি বুঝে ওয়াশিংটনের নির্দেশে ১৩ ফেব্রুয়ারি মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বরফ গলানোর ইঙ্গিত দেন ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল। ১৬ মে, লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের দিনই মোদীকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তাঁকে আমেরিকা সফরের আমন্ত্রণও জানান ওবামা। তখনই সেই আবেদনে সাড়া না দিলেও পরে আমেরিকা যাওয়ার ব্যাপারে মোদী সবুজ সঙ্কেত দিতেই মার্কিন প্রশাসনে খুশির হাওয়া বইতে শুরু করেছে। তবে মোদী কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের খুঁটিনাটি বুঝে নিতে চাইছেন। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে দু’দেশের সম্পর্ক যে ভাবে বারেবারে ধাক্কা খেয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছে সেখানে অবস্থিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত জয়শঙ্করকে। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করবেন মোদী। একই সঙ্গে এই সফরকে ওবামা পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় সফরের মর্যাদা দেন কি না, সে দিকেও নজর রাখবেন মোদী।

মোদীর এই আমেরিকা সফর কিন্তু এক দিক থেকে অভূতপূর্ব। কারণ, সাধারণ ভাবে নিউইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশন চলার সময় মার্কিন প্রশাসন চায় না ওই অধিবেশনে যোগ দিতে আসা কোনও দেশ পৃথক ভাবে রাষ্ট্রীয় সফর করুক। কারণ সে ক্ষেত্রে অধিবেশনের পূর্ণ মনোযোগ ব্যাহত হয় বলেই হোয়াইট হাউসের কর্তাদের ধারণা। তবে এর আগে এমন ঘটনা যে ঘটেনি, তা নয়। তবে তা-ও হয়েছে ভারতের উৎসাহ এবং সক্রিয়তায়। গত বছর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ নিজেই উদ্যোগী হয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের পাশাপাশি ওয়াশিংটনেও যান এবং ওবামার সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে সেটা ছিল নিছকই ‘ওয়ার্কিং ভিজিট’। ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির অন্যতম প্রণেতা মনমোহন চেয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর শেষ আমেরিকা সফরে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়াতে। এ ক্ষেত্রে কিন্তু ঘটনাটা অন্য রকম। বারাক ওবামাই আগ্রহ দেখিয়ে বৈঠক করতে চাইছেন। কেন মোদীর সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে ওবামার এত ব্যাকুলতা?

Advertisement

কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, ঘরে-বাইরে ক্রমশই চাপের মধ্যে পড়ছেন ওবামা। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় দফার মেয়াদ শেষের দিকে। তার আগে আগামী নভেম্বরে সে দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচন। তার আগে দেশকে মন্দার হাত থেকে বের করে আনতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। এই অবস্থায় ভারতের বিশাল বাজারকে পাশে পাওয়া তাঁর রাজনীতির জন্য জরুরি। বিশেষত এমন একটা সময়, যখন ভারত-মার্কিন সম্পর্ক প্রায় তলানিতে। নিউ ইয়র্কে কর্মরত ভারতীয় ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাড়ে হেনস্থার ঘটনায় গত ডিসেম্বরে উত্তাল হয়ে ওঠে ভারত। যার প্রভাব পড়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও। এতটাই যে, দু’দেশের সম্পর্কের মূল ভিতটাই কেঁপে যায়। ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে প্রকাশ্যেই ঘোষণা করে নয়াদিল্লি। পরিস্থিতি এমন হয় যে, ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতবাসের নিরাপত্তাও তুলে নেওয়া হয়। পরে উত্তেজনা কমলেও চিড় রয়েই গিয়েছে। ভারতে নির্বাচনের হাওয়া উঠে যাওয়ায় যে চিড় মেরামতের সুযোগ ওবামা পাননি। এই অবস্থায় মোদীর সঙ্গে সফল আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সহজ করতে চান ওবামা। তার হাত ধরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে চাঙ্গা করাই তাঁর লক্ষ্য। পরমাণু চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও এখনও মার্কিন সংস্থাগুলি কার্যত গালে হাত দিয়েই বসে রয়েছে। কারণ, ভারতের সংসদে পরমাণু দায়বদ্ধতা বিল এমন ভাবে পাশ হয়েছে যে, ক্ষতিপূরণের দায় লগ্নিকারী সংস্থার কাঁধেই বিরাট ভাবে চাপবে। এর আগে মনমোহন সরকারের উপর দফায় দফায় চাপ সৃষ্টি করেও বিলে সংশোধন আনতে পারেনি আমেরিকা। এ ক্ষেত্রেও তারা কতটা সফল হবে, সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরেই সেই চেষ্টা পুরোদমে শুরু করতে চাইছেন ওবামা। পাশাপাশি মোদী যে পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে জোর দিচ্ছেন, সে দিকে বড় বিনিয়োগের কথাও ভাবতে শুরু করেছে তারা।

আমেরিকার নজরে মোদীর এশিয়া নীতিও। মোদী দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে চিন এবং জাপানের মতো রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য-বন্ধুত্ব বাড়াচ্ছেন। অন্য দিকে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যও তিনি প্রথম থেকেই সক্রিয়। কূটনীতিকদের অনেকেই মনে করেন, এই সব কারণেই ভারতকে কাছে টানাটা আমেরিকার কাছে এত জরুরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement