সংরক্ষণ-খোঁচা ভাগবতের

দিল্লিতে সঙ্ঘের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাগবত বলেন, ‘‘বিজেপি, ভারত সরকার ও সঙ্ঘ আলাদা। সরসঙ্ঘচালকের মতের সঙ্গে তারা একমত না-ও হতে পারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৯ ০৩:১৭
Share:

সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত

বিহারে গত বিধানসভা ভোটের আগে, শিক্ষা-চাকরিতে তফসিলি জাতি-জনজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) সংরক্ষণ নীতি পর্যালোচনার কথা বলে বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। কাল সেই বিতর্ক ফের উস্কে দিলেন তিনি।

Advertisement

দিল্লিতে সঙ্ঘের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাগবত বলেন, ‘‘বিজেপি, ভারত সরকার ও সঙ্ঘ আলাদা। সরসঙ্ঘচালকের মতের সঙ্গে তারা একমত না-ও হতে পারে। তাদের পাপ ও পুণ্যের দায়িত্ব তাদেরই। সঙ্ঘ বাঁচাতে আসবে না।’’ এর পরই সংরক্ষণের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘এক বার এ প্রসঙ্গে বলেছিলাম, হইচই হয়েছে। কী এসে গিয়েছে তাতে? আমরা জনপ্রিয়তা চাই না। সংরক্ষণ নিয়ে কেউ জানতে চেয়েছেন বলে বলছি। সংরক্ষণের পক্ষের এবং বিপক্ষের লোকেরা সম্প্রীতির পরিবেশে আলোচনা করলেই এক মিনিটে সুরাহা হবে।’’

সংরক্ষণের বিষয়টি বরাবরই স্পর্শকাতর। এ বারও ভাগবতের মন্তব্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। মায়াবতীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সংরক্ষণ মানবতাবাদী সাংবিধানিক ব্যবস্থা। এটিকে লঙ্ঘন করা অন্যায়। সঙ্ঘ নিজের সংরক্ষণ-বিরোধী মানসিকতা ছাড়ুক।’’ আরজেডি-র মনোজ ঝা বলেন, ‘‘আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা করছে সঙ্ঘ।’’ আর কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার কথায়, ‘‘সংবিধানে দেওয়া দলিত-পিছিয়ে পড়া মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি-আরএসএস। ফের গায়ের জোরে সংবিধান বদলাবে।’’

Advertisement

বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপি নিজেদের ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’ বললেও গরিব-দলিত-আদিবাসীদের ক্ষমতা খর্ব করে উচ্চবর্ণের দাপট প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাঁদের বক্তব্য, ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে হিন্দুদের জনসংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ। তাঁদের মধ্যে তথাকথিত উচ্চবর্ণ ২৬ শতাংশ, দলিত ২২.২ শতাংশ, আদিবাসী ৯ শতাংশ এবং ওবিসি প্রায় ৪৩ শতাংশ। ফলে সংরক্ষণ নীতি পর্যালোচনার কথা বলে আরএসএস কাদের সুবিধা করতে চাইছে?

ভাগবতের মন্তব্যে অস্বস্তি বাড়লেও প্রকাশ্যে চুপ বিজেপি। ঘরোয়া মহলে নেতাদের বক্তব্য, এ বারে জিতে প্রধানমন্ত্রী প্রথম দিনই বলেছিলেন, ‘‘দেশে একটাই জাত— গরিব।’’ জাতপাতের সমীকরণ মুছে দেওয়ার উপর জোর দিতে চেয়েছেন তিনি। আরএসএস-ও বহু দিন ধরে জাতপাত মুছে অভিন্ন হিন্দু ছাতার তলায় আনতে চাইছে সকলকে। বর্তমান সংরক্ষণ ব্যবস্থায় বরং তাঁদের উপরে বেশি জোর দেওয়া উচিত, যাঁরা সুযোগ পান না। সম্ভ্রান্তেরা সংরক্ষণের সুবিধা পেলে কী লাভ?

আরএসএস-ও পরে বিবৃতি দিয়ে বলে, বিতর্ক অনাবশ্যক। সম্প্রীতির পরিবেশে আলোচনার গুরুত্ব বোঝাতে সংরক্ষণের মতো সংবেদনশীল বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছিল। তফসিলি জাতি, জনজাতি, ওবিসি ও আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির সংরক্ষণকে পূর্ণ সমর্থন করে সঙ্ঘ। রাতে সঙ্ঘের ওই বিবৃতিকে অস্ত্র করে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী লেখেন, ‘‘আরএসএস আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথা বলছে! কাশ্মীরে সেটা করা হচ্ছে না কেন? নাকি কাশ্মীরে সমস্যাই নেই?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন