Monsoon Session 2020

জোড়া কৃষি বিল নিয়ে তুলকালাম বিরোধীদের, রণক্ষেত্র রাজ্যসভা

লোকসভার পরে রবিবার রাজ্যসভায় কৃষি ক্ষেত্রের দু’টি বিল নিয়ে বিতর্কে প্রায় সব বিরোধী দলই দাবি তুলেছিল, এই বিলগুলি সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৩৮
Share:

কৃষি বিল পাশ হওয়া নিয়ে সংসদ ভবন চত্বরে বিক্ষোভ কংগ্রেস, তৃণমূল ও ডিএমকের। রবিবার। ছবি: পিটিআই।

এডিএমকে, জেডি-ইউ ও ওয়াইএসআর কংগ্রেস ছাড়া কৃষি সংস্কারের জোড়া বিলে আর কেউই বিজেপির পাশে দাঁড়ায়নি। ভোটাভুটি হলে সরকার হেরে যাবে বা সামান্য ব্যবধানে জিতবে, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল বিজেপি শিবিরে। তাই ঝুঁকি না-নিয়ে ধ্বনিভোটের মাধ্যমেই মোদী সরকার রাজ্যসভায় কৃষি বিল পাশ করাল। আর তার প্রতিবাদেই রণক্ষেত্রের চেহারা নিল রাজ্যসভা।

Advertisement

লোকসভার পরে রবিবার রাজ্যসভায় কৃষি ক্ষেত্রের দু’টি বিল নিয়ে বিতর্কে প্রায় সব বিরোধী দলই দাবি তুলেছিল, এই বিলগুলি সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক। কিন্তু ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করে ফেলা মোদী সরকার চলতি অধিবেশনেই বিল পাশ করাতে অনড় মনোভাব নেয়। বিল পাশ হওয়ার সময় তৃণমূল কংগ্রেসের ডেরেক ও’ব্রায়েন ভোটাভুটির দাবি তোলেন। স্লোগান, হইহট্টগোলের মধ্যে কে বিলের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ বলছেন, কে ‘না’ বলছেন, তা বোঝার উপায় ছিল না। ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ বিলের পক্ষেই সায় রয়েছে জানিয়ে ধ্বনিভোটে বিল পাশ করাচ্ছেন দেখে শুরু হয় গন্ডগোল।

তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন রাজ্যসভা পরিচালনার ‘রুল বুক’ নিয়ে ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশের সামনে ছুটে যান। সভাপতির আসনে উঠে পড়ার চেষ্টা করায় মার্শালের সঙ্গে তাঁর ধস্তাধস্তি হল। ডেরেক চিৎকার করে বললেন, ‘এ হতে পারে না।’ বাকি বিরোধী দলের সাংসদরাও ছুটে আসেন। বিলের কপি ছিঁড়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। হরিবংশের টেবিলের নথিও ছেঁড়া হয় বলে সরকারের অভিযোগ। তাঁর টেবিলের তিনটি মাইক্রোফোন ভেঙে দেওয়া হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: উমর কোনও অন্যায় করেনি, বলছেন মা সাবিহা

আরও পড়ুন: বিদেশি অনুদানে রাশ টানতে নয়া সংশোধনী

রাজ্যসভায় ধুন্ধুমার

• কৃষি সংস্কারের দু’টি বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি বিরোধীদের
• একই দাবি বিজেডি, টিআরএস-এরও। বিলের বিরোধিতা অকালিরও
• বেলা ১টার পরেও বিল পাশের জন্য অধিবেশন চালু, প্রতিবাদ গুলাম নবি, ডেরেক ও’ব্রায়েনের
• ধ্বনিভোটে বিল পাশ করানো শুরু
• ভোটাভুটির দাবি তোলেন ডেরেক
• ডেপুটি চেয়ারম্যানের আসনের সামনে ডেরেক, মার্শালের সঙ্গে ধস্তাধস্তি
• বিরোধী শিবির ওয়েলে নেমে এল, বিলের কপি ছিঁড়ে মাইক ভাঙা হল
• রাজ্যসভা টিভিতে অধিবেশন সম্প্রচারে শব্দ বন্ধ করে দেওয়া হয়
• সভা মুলতুবি দশ মিনিট
• ডেপুটি চেয়ারম্যানের আসন মার্শাল দিয়ে ঘিরে সভা শুরু, হট্টগোলের মধ্যেই বিল পাশ
• কর্মীদের টেবিলে উঠে প্রতিবাদ কংগ্রেসের রাজীব সতাভ, আপ-এর সঞ্জয় সিংহদের। মার্শালরা পাঁজাকোলা করে নামালেন
• টিভিতে গন্ডগোল না দেখানোয় কক্ষের মধ্যেই ভিডিয়ো তুলে প্রচার
• ডেপুটি চেয়ারম্যানের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব
• রাষ্ট্রপতির কাছে বিলে সই না-করার আর্জি অকালির, অন্য বিরোধীরাও নালিশ জানাতে যাবেন

এর পরে রাজ্যসভার অধিবেশন দশ মিনিটের জন্য মুলতুবি করে দেওয়া হয়। তার মধ্যেই রাজ্যসভার নিরাপত্তাকর্মী বা মার্শালরা হরিবংশের টেবিল ঘিরে ফেলেন। সিলেক্ট কমিটিতে বিল পাঠানোর দাবি, বিল পাশে আপত্তি সত্ত্বেও ধ্বনি ভোটে বিল পাশ করানো হয়। মার্শালদের টপকে সচিবালয়ের কর্মীদের টেবিলে উঠে পড়েন আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ, কংগ্রেসের রাজীব সতাভ। মার্শালরা তাঁদের পাঁজাকোলা করে নামিয়ে আনার চেষ্টা করলে আরেক প্রস্থ ধস্তাধস্তি হয়। কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধী নেতাদের যুক্তি, একজন সাংসদও যদি ভোটাভুটি বা ‘ডিভিশন’ চান, তা সভাপতিকে মেনে নিতে হয়। কিন্তু ডেপুটি চেয়ারম্যান তাতে কান দেননি। সংসদের ইতিহাসে এ এক কালো দিন। কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল বলেন, ‘‘গণতন্ত্রকে রাজ্যসভায় হত্যা করা হল।’’ অধিবেশন শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও রাজ্যসভার মধ্যেই ধর্ণায় বসে পড়েন বিরোধীরা।

ডেরেকের বক্তব্য:

বিল পাশের পরে রাজনাথ সিংহের নেতৃত্বে মোদী সরকারের আধ ডজন মন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে বিরোধীদের আচরণের নিন্দা করেছেন। রাজনাথ বলেন, ‘‘এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক, লজ্জাজনক। সংসদ চালানো শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়। চেয়ারম্যানের আসনে চলে যাওয়া, আসনের উপরে চড়ে রুলবুক ছেঁড়া, অন্য কাগজ ছেঁড়া, টেবিলে উঠে পড়া, সংসদীয় ইতিহাসে লোকসভা বা রাজ্যসভায় এমন ঘটনা ঘটেনি।’’ উল্টো দিকে ডেরেকের যুক্তি, ‘‘সরকার পক্ষ জানত যে ভোটাভুটি হলে হেরে যাবে। সেই কারণেই তারা ধ্বনিভোটে বিল পাশ করিয়েছে।’’

রাজ্যসভার অধিবেশনের পরে চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়়ডুর সঙ্গে হরিবংশ, সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর বৈঠক হয়। সূত্রের খবর, চেয়ারম্যান বেশ কয়েক জন সাংসদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন। কে সভাপতির আসনের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন, কারা বিল ছিঁড়েছেন, মাইক্রোফোন ভেঙেছেন এবং টেবিলের উপরে উঠে পড়েছেন, তা নিশ্চিত করতে রাজ্যসভা টিভি-র ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রবীণ সাংসদরা বলেছেন, শেষ বার মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে রাজ্যসভায় এমন গণ্ডগোল হয়েছিল।

উল্টো দিকে ১২টি বিরোধী দল হরিবংশের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল বলেন,, ‘‘উনি গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু ওঁর আচরণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই ধাক্কা দিয়েছে। তাই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে।’’ হরিবংশের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ, প্রথমে
তিনি সকলের সায় না থাকলেও বেলা ১টার নির্ধারিত সময়ের পরেও রাজ্যসভা চালিয়ে যান। যাতে বিল পাশ হতে পারে। তার পরে ভোটাভুটিতে সায় দেননি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়াকেও বলতে সময় দেওয়া হয়নি। কিন্তু রাজনাথের যুক্তি, ‘‘ডেপুটি চেয়ারম্যানের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা নিন্দনীয়। উনি বারবার সাংসদদের নিজের আসনে যেতে বলেছেন। কিন্তু বিরোধীরা ওয়েলে নেমে এসেছিলেন। তার মধ্যে কী ভাবে ভোটাভুটি সম্ভব?’’ সরকারের মন্ত্রীদের অভিযোগ, বিরোধীরা স্বাস্থ্যবিধিও মানেননি।

কৃষি সংস্কারের বিলের বিরোধিতা করেই অকালি দলের হরসিমরত কউর ইস্তফা দিয়েছেন মোদী সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে। কৃষি পণ্য ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়ন বিল ও কৃষকদের চুক্তি চাষে সুরক্ষা ও ফসলের মূল্য নিশ্চিতকরণ বিল সংসদে পাশ হয়ে গেলেও অকালি দলের নেতা সুখবীর সিংহ বাদল রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ করেছেন, তিনি যেন বিলে সই না করেন। অকালি দলের সাংসদ নরেশ গুজরাল রাজ্যসভায় সরকারকে সাবধান করে বলেছেন, কৃষি বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এই স্ফূলিঙ্গ দাবানলের চেহারা নিতে পারে।

বস্তুত রবিবারও পঞ্জাব, হরিয়ানায় বিভিন্ন সংগঠন রাস্তায় নেমে কৃষি বিলের প্রতিবাদ করেছে। আম্বালা-চণ্ডীগড়, পঞ্চকুলা, জিন্দ, ফতেহাবাদ, রোহতক, পানিপথ, পাটিয়ালার মতো জায়গায় জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়ক অবরোধ হয়েছে। অম্বালায় সাদোপুর সীমান্তে যুব কংগ্রেস রাস্তা অবরোধ করে ট্রাক্টরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অবশ্য একে ‘ঐতিহাসিক মূহূর্ত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে সঙ্ঘপরিবারের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ, ভারতীয় কিষাণ সঙ্ঘও বিলের বিরোধিতা করেছে। তাদের দাবি, চাষিদের এমএসপি নিশ্চিত করা হোক। বেসরকারি সংস্থাগুলি এমএসপি-র থেকে কম দামে ফসল কিনবে না, তা বিলেই বলে দেওয়া হোক। যদিও সে সম্ভাবনা উড়িয়ে রাজনাথের জবাব, ‘‘এমন কোনও প্রস্তাব বিলে নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন