অসমে কাজ হারাবেন কম্পিউটার শিক্ষকরা

জুন মাসে কর্মহীন হতে চলেছেন রাজ্যের হাজার তিনেক কম্পিউটার শিক্ষক। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি স্কুলগুলি অধিগ্রহণের জন্য ২ মার্চ নতুন বিল আনতে চলেছে রাজ্য সরকার। তারই জেরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আজ বিধানসভায় এই তথ্য দেন শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩০
Share:

জুন মাসে কর্মহীন হতে চলেছেন রাজ্যের হাজার তিনেক কম্পিউটার শিক্ষক। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি স্কুলগুলি অধিগ্রহণের জন্য ২ মার্চ নতুন বিল আনতে চলেছে রাজ্য সরকার। তারই জেরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আজ বিধানসভায় এই তথ্য দেন শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

Advertisement

অসমে ৩ হাজার ৫৩২টি স্কুলে কম্পিউটার ক্লাস চলে। অসম সরকারের ‘রাজীব গাঁধী কম্পিউটার লিডারশিপ প্রোগ্রাম’ ও কেন্দ্রের কম্পিউটার শিক্ষা প্রসার সংক্রান্ত প্রকল্পে স্কুলগুলিতে কম্পিউটার শিক্ষার কাজ চলছে। হিমন্ত জানান, ২০১৭ সালে প্রকল্পগুলি শেষ হচ্ছে। তাই কম্পিউটার শিক্ষকদের চাকরিও থাকবে না। ৩০ জুন পর্যন্ত রয়েছে প্রকল্পগুলির মেয়াদ।

হিমন্ত জানান, আগের প্রকল্প শেষ হওয়ার পরে ভারত সরকার নতুন করে ৫০০ স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষা শুরু করার অনুমোদন দিয়েছে। তাই কর্মহীন সাড়ে তিন হাজার শিক্ষকের মধ্যে ৫০০ জনকে ওই সব স্কুলে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘কাজ হারাতে চলা শিক্ষকদের জন্য পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু তিন হাজার শিক্ষককে চাকরি দিতে হলে অন্তত ১০ হাজার টাকা মাসিক বেতনের হিসেবে বছরে ৩৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত লাগবে। অতিরিক্ত এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়।’’ তিনি জানান, সপ্তম বেতন কমিশন লাগু হওয়া ও স্কুল অধিগ্রহণ আইন পাশ হওয়ার আগে পরিস্থিতি বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। রাজ্যের সব স্কুলে কম্পিউটার দেওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, প্রথম পর্যায়ে বাছাই করা স্কুলে ১০টি করে কম্পিউটার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক কম্পিউটার চুরি হয়েছে। তা রক্ষা করতে নৈশ চৌকিদার মোতায়েনের টাকা সরকারের নেই। অনেক কম্পিউটার খারাপও হয়েছে। তাই এ বার ভাবা হচ্ছে পাঁচটি স্কুলের মধ্যবর্তী স্থানে কম্পিউটার সেন্টার খোলা হবে। যেখানে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীরা তা শিখতে আসবে। সেখানে অন্যান্য দক্ষতাবৃদ্ধির প্রশিক্ষণও দেওয়া হতে পারে।

Advertisement

ইউডিএফ বিধায়ক আমিনূল ইসলাম শিক্ষার অধিকার আইনের কথা তুলে ব্যক্তিগত স্কুলগুলি অধিগ্রহণের দাবি তুললে হিমন্ত জানান, আগের অধিগ্রহণ আইন যখন ২০১২ সালে গ্রহণ করা হয়েছিল, তখন মানবিকতার স্বার্থে ইচ্ছাকৃত ভাবেই রাজ্য সরকার শিক্ষা অধিকার আইন, শিক্ষকতা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের যোগ্যতা সংক্রান্ত ইউজিসি আইন ও অন্য ৬টি আইনকে পাশ কাটিয়েছিল। কিন্তু তার পরও যে সব স্কুল একেবারেই অধিগ্রহণের অযোগ্য ছিল, সেখানকার শিক্ষকরা আদালতের দ্বারস্থ হন। বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন হয়ে পড়ে। আদালত এতগুলি আইন অবজ্ঞা করে অধিগ্রহণ আইন পাশ করার যৌক্তিকতা নিয়ে রাজ্য সরকারের জবাবদিহি চায়।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, তিনি দায়িত্ব ছাড়ার পরে আগের সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ওই সংক্রান্ত সব স্পষ্টীকরণ আদালতে জমা দেন। তারপরেই আগের আইন নস্যাৎ করে আদালত। ‘মানবিকতা’ কথা বদলে বলা হয় যোগ্যতার ভিত্তিতে স্কুল অধিগ্রহণ করতে হবে। যোগ্যতার ভিত্তিতে দেখতে গেলে ২০১৩ সাল থেকে অধিগৃহীত স্কুলের অনেকগুলিও যোগ্যতামানে উত্তীর্ণ হবে না। আগের মতো কেন্দ্রীয় আইনগুলি অগ্রাহ্য করে রাজ্য আইন পাশ করলেও তা রাজ্যপাল মানবেন না। তাই সরকারিকরণের আগে স্কুলগুলিকে নির্দিষ্ট মানে পৌঁছতে হবে। ২ বছরের মধ্যে শিক্ষকদের টেট পাশ করতে হবে। ছোট স্কুল হলে তিনটি স্কুল একত্র করে দিতে হবে।

হিমন্ত জানান, এ নিয়ে তিনি বিধানসভায় প্রথমে শ্বেতপত্র দেবেন। ২ মার্চ পেশ করা হবে নতুন বিল। তিনি জানান, সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ মানতে হলে বর্তমানে অধিগ্রহণ করা স্কুলগুলির জন্য ১ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা, আগের আইনে অধিগ্রহণ হতে বাকি থাকা স্কুলগুলির জন্য ৮৯৭ কোটি টাকা এবং নতুন করে অধিগ্রহণ করা স্কুলের জন্য আরও প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা লাগবে। এত টাকা রাজ্য সরকার কোথা থেকে জোগাড় করবে তাও ভাবতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন