দক্ষিণ শ্রীনগরের হাফফো গ্রামে বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে পুলিশের হাতিয়ার কাঁদানে গ্যাস। রবিবার। ছবি: পিটিআই
দক্ষিণ কাশ্মীরে ত্রালের বাসিন্দা হিজবুল মুজাহিদিন নেতা বুরহান ওয়ানি খতম হওয়ার পরে বেশ কয়েক মাস অশান্ত ছিল কাশ্মীর। এ বার সেই ত্রালেই বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে খতম হল বুরহানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আকিব ভাট-সহ দুই জঙ্গি। নিহত হয়েছেন জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের কনস্টেবল মনজুর আহমেদও।
নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গি দমনে চালানো এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ পুরোপুরি সফল বলে দাবি সেনাকর্তাদের। বাহিনীর তরফে হতাহতের সংখ্যাও খুব কম হয়েছে বলে দাবি তাঁদের। কিন্তু ত্রালে এই অভিযান ফের উপত্যকায় অশান্তি ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একাংশের।
ত্রালের হাফফো গ্রামে এক দর্জির বাড়িতে হিজবুল মুজাহিদিনের চার-পাঁচ জন শীর্ষ নেতা লুকিয়ে রয়েছে বলে জানতে পেরেছিলেন গোয়েন্দারা। গতকাল সন্ধে সাতটা নাগাদ বাড়িটি ঘিরে ফেলেন জওয়ানরা। শুরু হয় গুলির লড়াই।
পরিস্থিতি বুঝে বাড়িটি বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বাহিনীর কর্তারা। দায়িত্ব পড়ে জঙ্গি দমন অভিযানে দক্ষ জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের কনস্টেবল মনজুর আহমেদের উপরে। জঙ্গিদের গুলি উপেক্ষা করে বাড়ির সামনে বিস্ফোরক রেখে আসেন তিনি। বিস্ফোরণে বাড়ির অর্ধেক ভেঙে যায়। তার পরে ফের বাড়ির দিকে এগোতে যান মনজুর। নিষেধ করেন সহকর্মীরা। কিন্তু তাতে কান দেননি বছর তেত্রিশের কনস্টেবল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জঙ্গিদের গুলি খতম করে দেয় তাঁকে। গুলির লড়াইয়ে আহত হয়েছেন সেনার মেজর আর রেসি।
কনস্টেবল মনজুর আহমেদ
রাতেই এক জঙ্গির দেহ উদ্ধার করেন জওয়ানরা। আজ ভোর সাড়ে ছ’টায় শেষ হয় অভিযান। সেনা জানায়, দুই জঙ্গি খতম হয়েছে। তার মধ্যে এক জন বুরহানের সহযোগী আকিব ভাট। অন্য জন পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের সদস্য সইফ-উল-লাহ। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, আকিব ভাটকে বুরহানের সঙ্গে ফেসবুকের ছবিতে দেখা গিয়েছে। ‘পোস্টার বয়’ বুরহানের ঘনিষ্ঠদের অন্যতম ছিল সে। আজ ভোরে বাবাকে শেষ বারের মতো ফোন করেছিল আকিব।
জঙ্গি দমন অভিযানে বাধা দিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বিক্ষোভ এখন দক্ষিণ কাশ্মীরে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বারও বাহিনীকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন বেশ কিছু বাসিন্দা। সিআরপিএফের এক জওয়ানের ইনস্যাস রাইফেল কেড়ে নেওয়া হয়। পরে অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ। জারি হয় কার্ফু।
শ্রীনগরের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে আজ মনজুরকে শেষ বিদায় জানান সহকর্মীরা। হাজির ছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী আলতাফ বুখারি এবং বাহিনী ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা।
মনজুরের স্ত্রী দ্বিতীয় বারের জন্য সন্তানসম্ভবা হয়েছেন। সেই কারণেই সম্প্রতি ছুটি চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় সন্তানের মুখ আর দেখা হল না তাঁর।