ডোভালে দশ গোল খেয়ে জয়শঙ্করে ড্র

এই পরিস্থিতিতে অজিতের ডানা ছেঁটে জয়শঙ্করকে বিদেশনীতির বিশেষ উপদেষ্টা করার কথা ভাবা হচ্ছে। তখন শুধু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দেখবেন অজিত ডোভাল। জয়শঙ্কর দেখবেন বিদেশনীতি ও বৈদেশিক নিরাপত্তার বিষয়টি। বিদেশসচিবের পদ থেকে জয়শঙ্কর অবসর নিচ্ছেন ২৯ জানুয়ারি।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৩৭
Share:

অজিত ডোভাল এবং জয়শঙ্কর। ছবি: সংগৃহীত

ডোকলাম নিয়ে শুরুতে যুদ্ধং দেহি মনোভাব নিয়েছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। কিন্তু তাতে কূটনৈতিক জটিলতা আরও বেড়ে যায়। তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে হাল ধরেন বিদেশসচিব জয়শঙ্কর। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রথমেই চিন দশ গোল দিয়ে দিয়েছিল। পরে জয়শঙ্করের নেতৃত্বে কূটনৈতিক পথে খেলাটাকে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া গিয়েছে।’’

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে অজিতের ডানা ছেঁটে জয়শঙ্করকে বিদেশনীতির বিশেষ উপদেষ্টা করার কথা ভাবা হচ্ছে। তখন শুধু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দেখবেন অজিত ডোভাল। জয়শঙ্কর দেখবেন বিদেশনীতি ও বৈদেশিক নিরাপত্তার বিষয়টি। বিদেশসচিবের পদ থেকে জয়শঙ্কর অবসর নিচ্ছেন ২৯ জানুয়ারি। নতুন বিদেশসচিব হবেন বিজয় কেশব গোখলে। বর্তমানে যিনি চিনে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করছেন।
ফলে ফেব্রুয়ারি থেকে গোখলে ও জয়শঙ্কর জুটি বিদেশনীতির ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় ভুমিকা নেবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: কেউ ক্ষুব্ধ কেউ বা দুশ্চিন্তায়

Advertisement

ডোকলাম নিয়ে উত্তেজনা আপাতত কমানো গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আগামিকাল চিন সফরে যাচ্ছেন। ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে চিনা রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সীমান্ত বিতর্ক নিয়ে কথা হবে তাঁর। কিন্তু এ মুহূর্তে সাউথ ব্লকের অন্দরে চলছে অজিত ডোভাল বনাম জয়শঙ্করের বিরাট বিবাদ।

সাউথ ব্লকের একটি সূত্র বলছে, কট্টরবাদী ডোভাল এখনও মনে করেন, তিনি ‘পেশিশক্তি’ প্রদর্শনের নীতি নেওয়াতেই চিনকে কূটনৈতিক বোঝাপড়ায় আসতে বাধ্য করা গিয়েছে। আর জয়শঙ্কর শিবির বলছে, চিনকে চেনা এত সহজ নয়। ভুটান একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। তাকে নিজেদের উপনিবেশ ভেবে একতরফা অতিরিক্ত সেনা পাঠিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তোলা হয়েছিল। পাকিস্তানের সঙ্গে তবু ‘জেমস্ বন্ড’ মনোভাব নেওয়া যায়। চিনের সঙ্গে তা করতে গিয়ে মূল্য চোকাতে হয়েছে অনেকটাই।

প্রথমত, ভুটানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অনেকটাই অবনতি হয়েছে। আগামী দিনে সেটা পুনরুদ্ধার করতে হবে। ভুটানের এক দিকে চিন, অন্য দিকে ভারত। চিন কখনও ভুটানের ভূখণ্ড দখল করলে যদি যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেটা থিম্পুর কাছে কাম্য নয়। ভুটান তাই প্রথম থেকেই দু’পক্ষের সেনা প্রত্যাহারের পক্ষে।

দ্বিতীয়ত, নেপাল, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, এমনকী, বাংলাদেশের সঙ্গেও চিন দ্রুত সম্পর্ক স্থাপন করছে। তৃতীয়ত, ডোকলাম-সঙ্কটের মধ্যেই অশান্ত দার্জিলিঙে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের প্রতি সিকিমের সমর্থন কেন্দ্রের ভ্রূকুটির কারণ হয়ে ওঠে। বেগতিক বুঝে মোদী পথ পাল্টান। তাঁর নির্দেশে চিনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিজয় গোখলেকে নিয়ে কূটনৈতিক দৌত্যে নামেন জয়শঙ্কর। শুরু হয় ‘ট্র্যাক-টু’ কূটনীতি। বারবার আলোচনা করে চিনকে বোঝানো সম্ভব হয়, যে ভারত সেনা প্রত্যাহার করে নেবে। কিন্তু চিন যেন ডোকলামে রাস্তা নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখে।

এই কাজে সফল হতে জয়শঙ্করের কৌশল ছিল, চিন যতই আক্রমণাত্মক হোক না কেন, ভারত প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। এমনকী, চিনা ভিডিওতে যখন ভারতের ভূমিকা নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ শুরু হয়, তখনও মুখে কুলুপ এঁটে ছিল ভারত। প্রথম পর্বে ভারতের সেনাপ্রধান এবং বিভিন্ন মন্ত্রী প্রকাশ্যে চিন সম্পর্কে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করছিলেন। জয়শঙ্করের পরামর্শ মেনে প্রধানমন্ত্রী সকলকে চুপ করতে বলেন। দশ গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচ ড্র হয় শেষ পর্যন্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন