Supreme Court of India

মুখতারকে জেলেই খুনের ছক, শীর্ষ আদালতে নালিশ

গত ১৫ এপ্রিল মেডিক্যাল পরীক্ষা করতে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রয়াগরাজ জেলা হাসপাতাল চত্বরে পুলিশের সামনেই আততায়ীদের গুলিতে খুন হন গ্যাংস্টার-রাজনীতিক আতিক আহমেদ এবং তাঁর ভাই আশরফ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৬
Share:

সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

বান্দা জেলে গ্যাংস্টার থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা মুখতার আনসারির নিরাপত্তা বাড়িয়ে তাঁর সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে বলে আজ সুপ্রিম কোর্টে জানাল উত্তরপ্রদেশ সরকার। জেলের ভিতরে তাঁর বাবা খুন হয়ে যেতে পারেন পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে শীর্ষ আদালতের রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন মুখতারের ছেলে উমর।

Advertisement

উমরের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল আজ আদালতে জানান, বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণানন্দ রাইকে খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মুখতার। তিনি বলেন, ‘‘ওই মামলায় অভিযুক্ত আট জনের মধ্যে চার জনকে ইতিমধ্যেই গুলি করে খুন করে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মুখতারের জীবনেরও গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে।’’ তিনি জানান, মামলার এক অভিযুক্ত কোর্টে পেশ হওয়ার সময় আদালত চত্বরেই গুলিতে খুন হয়েছিলেন।

পঞ্জাবের জেল থেকে মুখতারকে রাজ্যে নিয়ে আসতে চেয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারের করা আর্জি ২০২১ সালে মঞ্জুর করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আজ সরকারের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কে এম নটরাজ দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই মুখতারকে বান্দা জেলে পাঠানো হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের বাইরের জেলে স্থানান্তরের ব্যাপারে রাজ্যের অবস্থান জানতে কোর্টের কাছে কিছু সময় চান তিনি। আদালত মামলাটির পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে আগামী ১৬ জানুয়ারি।

Advertisement

মউ কেন্দ্রের একাধিক বারের প্রাক্তন বিধায়ক সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টির মুখতার। উমর পিটিশনে উল্লেখ করেছেন, তাঁর বাবা এমন একটি দলের সঙ্গে যুক্ত যারা ‘‘রাজনৈতিক এবং আদর্শগত’’ জায়গা থেকে রাজ্যের শাসক দল বিজেপির বিরোধী। সেই জন্য তাঁদের পরিবার সরকারের নিপীড়নের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগও করেছেন। বলা হয়েছে, ‘‘আবেদনকারীর পরিবারের বিরুদ্ধে রাজ্য ক্রমাগত শত্রুভাবাপন্ন অবস্থান নিয়ে চলছে। বিশেষ করে আবেদনকারীর বাবার সঙ্গে। সম্প্রতি আবেদনকারীর বাবা নির্ভরযোগ্য জায়গা থেকে জানতে পেরেছেন, জেলের ভিতরে তাঁর প্রাণের গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে। তাঁকে জেলের ভিতরে গুপ্তহত্যা করার ষড়যন্ত্র চলছে। তাতে সরকারি স্তরের অনেকেও জড়িত।’’ মুখতারকে যাতে শুধু মাত্র ভিডিয়ো কনফারেন্সে শুনানিতে হাজির করা হয়, সেই আবেদনও জানানো হয়েছে ওই পিটিশনে। দাবি করা হয়েছে, মুখতার এমন অনেক ফৌজদারি মামলার সাক্ষী, যেগুলিতে বিজেপির নেতারা অভিযুক্ত। বন্দির পরিবারের আশঙ্কা, লঘু কোনও মামলায় ভাড়াটে খুনিদের ওই জেলে ঢুকিয়ে খুন করানো হতে পারে মুখতারকে। গত ৩০ নভেম্বর তাঁকে সরাসরি খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও এ দিন আদালতে দাবি করা হয়েছে।

গত ১৫ এপ্রিল মেডিক্যাল পরীক্ষা করতে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রয়াগরাজ জেলা হাসপাতাল চত্বরে পুলিশের সামনেই আততায়ীদের গুলিতে খুন হন গ্যাংস্টার-রাজনীতিক আতিক আহমেদ এবং তাঁর ভাই আশরফ। ২০০৫ সালে তৎকালীন ইলাহাবাদ পশ্চিমের বহুজন সমাজ পার্টির বিধায়ক রাজু পাল খুনের ঘটনার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন উমেশ পাল। পরে তিনিও খুন হয়ে যান। সেই মামলাতেই বিচারাধীন বন্দি ছিলেন আতিক ও আশরফ। পিটিশনে উঠে এসেছে সেই প্রসঙ্গও। উমর দাবি করেছেন, সম্পূর্ণ পুলিশি নিরাপত্তায় সরকারি হাসপাতাল চত্বরে যে ভাবে ওই ঘটনা ঘটেছে, তাতে তাঁর বাবার নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা আরও জোরালো হচ্ছে।

আবেদনে বলা হয়েছে, মুখতারের নিরাপত্তার আর্জি নিয়ে তার স্ত্রী এর আগে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই সূত্রে গত মে মাসে হাই কোর্টে মুখতারের নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশও দিয়েছিল। অভিযোগ করা হয়েছে, ৩ মে-র সেই নির্দেশের পরেও ১৮ মে মুখতার যে ব্যারাকে বন্দি রয়েছেন, সেখানে সন্দেহজনক ও অজ্ঞাতপরিচয় কয়েক জন বহিরাগতকে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। পর পর এমন কিছু ঘটনায় আবেদনকারী তাঁর বাবার জীবনের সুরক্ষা নিয়ে ভীষণই উদ্বিগ্ন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আজ কোর্টে সিব্বল বলেন, ‘‘আতিক আহমেদের মামলাতেও আমি এই কোর্টে এসেছিলাম। সে বারও রাজ্য একই কথা বলেছিল। তার পরেও প্রকাশ্যেই খুন হয়েছেন তিনি।’’

ইলাহাবাদ হাই কোর্টের দেওয়া নিরাপত্তার নির্দেশের উল্লেখ করে বিচারপতি করোল এ দিন বলেন, ‘‘তার পর থেকে পরিবর্তনটা কী হয়েছে?’’ সিব্বল বলেন, ‘‘৮ জুন, এই নির্দেশের পরেও, আর এক জন সহ-অভিযুক্ত খুন হয়েছেন। এবং সেটা আদালত চত্বরেই।’’ অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এই ব্যাপারে নোটিস জারির বিরোধিতা করেন। বেঞ্চ বলেছে, মামলাকারীর বাবার কোনও অনিষ্ট যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তা হলে নোটিস দেওয়া হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন