মুকুলকে নিয়ে নরম বিজেপি! গুঞ্জন তৃণমূলে

বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের সাম্প্রতিক তিক্ত সম্পর্কের মধ্যেও দলের রাজ্যসভার সদস্য মুকুল রায় দিল্লিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির বাড়িতে প্রাতরাশ বৈঠক করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক সম্পর্কে বিজেপি খড়্গহস্ত হলেও মুকুলবাবু সম্পর্কে কেন নরম— তা নিয়ে সন্দিগ্ধ তৃণমূলেরই বহু নেতা।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৭ ০৪:১৮
Share:

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি চ্যানেলের আনা অভিযোগকে প্রচারের হাতিয়ার করছে বিজেপি। অথচ একই সময়ে রাজ্যসভার এথিকস কমিটিতে মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে আনা নারদ কেলেঙ্কারির অভিযোগ খারিজ করার আবেদন জানিয়েছে সেই বিজেপি-ই। প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূলের এই নেতার সম্পর্কে কি বিজেপি নেতৃত্ব নরম?

Advertisement

বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের সাম্প্রতিক তিক্ত সম্পর্কের মধ্যেও দলের রাজ্যসভার সদস্য মুকুল রায় দিল্লিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির বাড়িতে প্রাতরাশ বৈঠক করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক সম্পর্কে বিজেপি খড়্গহস্ত হলেও মুকুলবাবু সম্পর্কে কেন নরম— তা নিয়ে সন্দিগ্ধ তৃণমূলেরই বহু নেতা।

নারদ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তরা প্রায় সবাই লোকসভার সদস্য। রাজ্যসভা থেকে অভিযুক্ত এক জনই— মুকুল রায়। লোকসভার এথিকস কমিটির চেয়ারম্যান লালকৃষ্ণ আডবাণী। সেই কমিটির কোনও বৈঠক এখনও হয়নি। উল্টে কমিটির অফিস সচিবের মাধ্যমে আডবাণী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। শুধু ভিডিও ফুটেজ নয়, বিষয়টি নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। তা ছাড়া, কলকাতার আদালতেও বিষয়টি নিয়ে শুনানি চলছে। আদালত এ ব্যাপারে কী অবস্থান নেয়, সেটাও দেখা দরকার।

Advertisement

রাজ্যসভার এথিকস কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেস নেতা কর্ণ সিংহ। সম্প্রতি এই কমিটির বৈঠক হয়েছে। কমিটি সদস্যদের মধ্যে পাঁচ জন উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সংসদ সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিজেপি সদস্যেরা এই বৈঠকে কর্ণ সিংহকে জানিয়েছেন, মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত নয়। ভিডিও ফুটেজে তাঁকে টাকা নিতেও দেখা যায়নি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজ করা হোক।

তৃণমূল সদস্য ডেরেক ও’ব্রায়েনও বৈঠকে বিজেপির বক্তব্য সমর্থন করে বলেন— বস্তুত নারদ মামলায় কোনও দুর্নীতি প্রমাণই হয় না। কর্ণ সিংহ অবশ্য সে দিনই মুকুলবাবুর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ খারিজ করে দেননি। কিন্তু, পরবর্তী বৈঠকের দিন ধার্য করেছেন এক বছর পরে। বিজেপি সূত্র বলছে, রাজ্যসভার বিজেপি দলনেতা অরুণ জেটলি। তিনি নিজেও মনে করেন মুকুলবাবুর বিরুদ্ধে এই তদন্ত চলার কোনও কারণ নেই। উল্টে এই বৈঠকের কিছু দিনের মধ্যেই মুকুল যে ভাবে অরুণের সঙ্গে বৈঠক করলেন, তা নিয়ে বেশ জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

মুকুলবাবুর বিরুদ্ধে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বিষয়ে অভিযোগ ওঠার পরই মুকুল বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে দেন। আর এক তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বসু তো রাজ্যসভা থেকে ইস্তফাই দিয়ে দেন।

বিজেপি সূত্রের দাবি, কেন্দ্র এ বার শীঘ্রই মমতার ভাইপো অভিষেকের বিরুদ্ধে আর্থিক তদন্ত শুরু করবে। যে ভাবে সুশীল মোদীর আনা অভিযোগের ভিত্তিতে লালুর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছিল, বাংলাতেও সে ভাবেই এগোতে চায় বিজেপি।

মুকুলকে নিয়ে বিজেপির রণকৌশলটি কী?

বিজেপি সূত্রের খবর, মুকুলকে দিয়ে তৃণমূলের একটা অংশকে ভাঙিয়ে আনতে চায় তারা। এর আগেও এক বার এই চেষ্টা হয়েছিল। নতুন একটি অরাজনৈতিক মঞ্চ খুলেছিলেন মুকুল। কিন্তু মমতা তাঁকে দলের কিছু দায়িত্ব দেওয়ায় মুকুল সে মঞ্চ গুটিয়ে ফেলেন। কিন্তু বিজেপি ঘনিষ্ঠতা মুকুল না-কমানোয় একে একে সব দায়িত্বই আবার তাঁর হাত থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। সম্প্রতি ত্রিপুরায় যে ভাবে তৃণমুলের বিধায়করা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, ঘনিষ্ঠ মহলে তার জন্যও মুকুলকে দায়ী করেছেন দলনেত্রী। এই মুহূর্তে ‘পদহীন’ মুকুল ৯ অগস্ট ফের সেই মঞ্চকে ভাসিয়ে তুলতে নেমেছেন। তবে মুকুল নিজে সেখানে থাকবেন কি না, এখনও স্পষ্ট নয়। ওই দিনই তৃণমূল আবার ‘বিজেপি ভারত ছাড়ো’ কর্মসূচি নিয়েছে।

মুকুলের কথায়, স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। এ নিয়ে কথা উঠতে পারে না। আর তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন— দাদা যদি দল ছাড়েনও, লুকিয়ে চুরিয়ে সে কাজ করবেন না। প্রচারের আলো নিয়েই যাবেন।

মমতা এখন মুকুল সম্পর্কে কী অবস্থান নেন, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন