বিরোধ ভুলে একসঙ্গে ময়দানে দুই বৌমা

এক জন স্বভাবগত ভাবে লাজুক, অন্তর্মুখী। অন্য জন তুলনায় ঝাঁঝালো। জনসভায় চাঁচাছোলা ভাষায় প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতেই অভ্যস্ত। প্রথম জন ডিম্পল যাদব। অখিলেশ যাদবের স্ত্রী। লোকসভাতেও যথেষ্ট লাজুক। ঠোঁটে সব সময় স্মিত হাসি। সংখ্যালঘুর হয়ে সওয়াল করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৭
Share:

ভোট প্রচারে অপর্ণা ও ডিম্পল। — ফাইল চিত্র

এক জন স্বভাবগত ভাবে লাজুক, অন্তর্মুখী। অন্য জন তুলনায় ঝাঁঝালো। জনসভায় চাঁচাছোলা ভাষায় প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতেই অভ্যস্ত।

Advertisement

প্রথম জন ডিম্পল যাদব। অখিলেশ যাদবের স্ত্রী। লোকসভাতেও যথেষ্ট লাজুক। ঠোঁটে সব সময় স্মিত হাসি। সংখ্যালঘুর হয়ে সওয়াল করেন।

দ্বিতীয় জন অপর্ণা যাদব। অখিলেশের সৎ ভাই প্রতীকের স্ত্রী। প্রকাশ্যে গো-মাংস খাওয়ার বিরোধিতা করেন। সর্বদাই প্রতিবাদী মুখ। শ্বশুরমশাই মুলায়ম সিংহ যখন ধর্ষণ প্রশ্নে পুরুষদের আড়াল করতে চেয়েছিলেন, তখন তাঁর বিরোধিতা করতেও পিছপা হননি।

Advertisement

সমাজবাদী পার্টির শিবিরে চালু কথাই হল, ডিম্পল যদি উত্তর হন তো অপর্ণা দক্ষিণ। কিন্তু এখন দুই জা একত্রে উত্তরপ্রদেশের রণাঙ্গনে নেমেছেন দলের প্রচারকে ধারালো করতে। স্বভাবের পার্থক্যের পাশাপাশি যাদব বংশের পারিবারিক রাজনীতিতেও অতীতের আড়ষ্টতা মুছে ফেলেছেন দুই বৌমা। শ্বশুরমশাইকে সঙ্গে নিয়ে একযোগে আক্রমণ করছেন প্রতিপক্ষকে। এই প্রথম প্রচারে একেবারে বিপরীত চরিত্রের দু’জনকে একই ফ্রেমে দেখছেন উত্তরপ্রদেশের মানুষ।

সম্প্রতি লখনউ ক্যান্টনমেন্ট অর্থাৎ অপর্ণার নির্বাচনী ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে স্বভাবসুলভ নরম স্বরে আওয়াজ তুলেছেন ডিম্পল, ‘‘অপর্ণাকো বিধায়ক চুনিয়ে।’’ স্বামীর জন্য প্রচারটিও সেরেছেন সেই সঙ্গে, ‘‘বিধায়ক চুননে কে সাথ সাথ অগলা মুখ্যমন্ত্রী কৌন হোগা ইয়েভি চুননা হ্যায়।’’ তাঁর পাশে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে জয়ের জন্য মরিয়া অপর্ণা ‘কংগ্রেস পার্টি জিন্দাবাদ’ বলতেও কসুর করেননি! আর দুই পুত্রবধূকে পাশে নিয়ে শ্বশুরমশাই হাসিমুখে বলছেন, ‘‘আমাদের পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে পুত্রবধূকে জেতান। ও আপনাদেরও পুত্রবধূ এবং বোন।’’

রীতা বহুগুণা জোশীর মতো পোড় খাওয়া নেত্রীর জিতে আসা এই আসনে এ যাবৎ কোনও সমাজবাদী প্রার্থী জিততে পারেননি অবশ্য। সম্প্রতি বিজেপিতে যাওয়া রীতাকে হারানো যে কঠিন, সেটা বিলক্ষণ জানেন অপর্ণা। এটা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে একটা বড় চ্যালেঞ্জও বটে। আর তাই অখিলেশ, ডিম্পল ও মুলায়মকে সঙ্গে নিয়ে পুরোদমে ঝাঁপিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন:

মুখ্যমন্ত্রীর রোষে সাসপেন্ড ৬ বছর, কী আছে কপালে? জানতে চান সেই ডাক্তার

কিন্তু এমন সুখী পরিবারের ছবিটা হালেরই। মুলায়মের দ্বিতীয় স্ত্রী সাধনা বরাবরই চেয়েছেন, তাঁর ছেলে প্রতীক (অপর্ণার স্বামী) অখিলেশের মতোই রাজ্যপাটের ভাগ নিক। সেই মতো ২০১২ সালে বিধানসভা নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন প্রতীক। কিন্তু সেই পদক্ষেপে তীব্র আপত্তি জানান সৎভাই অখিলেশ। ছোটভাই রাজনৈতিক লড়াইতে নামলে পারিবারিক সংঘাত বৃদ্ধি পাবে, এই যুক্তি দেখিয়ে এবং মুলায়মকে বুঝিয়ে প্রতীককে নিরস্ত করান তিনি। তার পর থেকেই রাজনীতিতে বিশেষ মাথা গলাতে দেখা যায়নি জিমন্যাসিয়াম এবং ফেরারি-অডি-বিএমডব্লিউয়ের শৌখিনতায় মেতে থাকা প্রতীককে।

কিন্তু মায়ের মন মানেনি! উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে ‘কৈকেয়ী’ বলে পরিচিত সাধনা ছেলের ভাগ বুঝে নিতে মরিয়া। তাঁর স্পষ্ট কথা, বড় ছেলের মতো ছোট ছেলেরও সমান অধিকার রয়েছে লখনউয়ের তখ্‌তে। ছেলে না হলে ছেলের বউ বসবে ওই আসনে! প্রতীকের সঙ্গে অপর্ণার বিয়ের পর তাঁর না-মেটা স্বপ্নকে বাস্তব করতে মাঠে নামেন তিনি।

সৎপুত্র অখিলেশ একাই ছড়ি ঘোরাবেন, এটা কখনওই মেনে নেননি সাধনা। আর তাই সপা শিবিরে পারিবারিক সংঘাত শুরু হওয়ার বহু আগেই মুলায়মকে বুঝিয়ে লখনউ ক্যান্টনমেন্ট আসনটি অপর্ণার জন্য নিশ্চিত করিয়ে নিয়েছিলেন। বাবার ইচ্ছাকে কদর করে ওই টিকিটে অন্য কোনও প্রার্থী ঘোষণা করার পথে হাঁটেননি অখিলেশও। উল্টে গত কাল ডিম্পল এবং আজ খোদ অখিলেশ নিজে ওই কেন্দ্রে পথে নামলেন। ভেতরে ফাটল যাই থাক, প্রচার ময়দানে ফ্যামিলি অ্যালবাম সম্পূর্ণ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন