জঙ্গি ডেরা থেকে রহস্যমুক্তি বোনের, দিদি হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী!

তাঁর বোন রুবাইয়াকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল জঙ্গিরা। জঙ্গিদের দেওয়া শর্ত অক্ষরে অক্ষরে মেনে নেওয়ায়, রুবাইয়াকে কয়েক দিনের মধ্যে ছেড়েও দেওয়া হয়। তার পর থেকে জল যত গড়িয়েছে ঝিলম দিয়ে, ততই রহস্য গাঢ় হয়েছে সেই অপহরণ ঘিরে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:২০
Share:

সেই সময়। জঙ্গি ডেরা থেকে মুক্তির পর বাবা মুফতির বুকে রুবাইয়া। তাঁকে ঘিরে দিদি মেহবুবা।

তাঁর বোন রুবাইয়াকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল জঙ্গিরা। জঙ্গিদের দেওয়া শর্ত অক্ষরে অক্ষরে মেনে নেওয়ায়, রুবাইয়াকে কয়েক দিনের মধ্যে ছেড়েও দেওয়া হয়। তার পর থেকে জল যত গড়িয়েছে ঝিলম দিয়ে, ততই রহস্য গাঢ় হয়েছে সেই অপহরণ ঘিরে। সত্যিই অপহরণ ছিল? নাকি জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নাটক সাজানো হয়েছিল? প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। রুবাইয়া এখন কাশ্মীরের বাইরে প্রায় লুকিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু দিদি মেহবুবা আর কয়েক দিনের মধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন।

Advertisement

১৯৮৯ সাল। দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দে তখন টালমাটাল সময়। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ। কাশ্মীরি নেতা মুফতি মহম্মদ সইদ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। তার বছর দু’য়েক আগেই কংগ্রেস ছেড়ে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহদের জনতা দলে এসেছেন মুফতি। ভিপি ক্যাবিনেটের হাত ধরে তিনি হলেন দেশের প্রথম মুসলিম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পাঁচ দিন কাটার আগেই মুফতি মহম্মদ সইদের ছোট মেয়ে রুবাইয়া সইদকে অপহরণ করল জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ)। শর্ত দেওয়া হল, ওই জঙ্গি সংগঠনের পাঁচ জনকে জেল থেকে মুক্তি দিতে হবে। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী তখন মুফতির প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ফারুক আবদুল্লা। তিনি জানালেন, জঙ্গিদের কোনও শর্ত মানার প্রয়োজন নেই। মুফতি জনপ্রিয় নেতা। জম্মু-কাশ্মীর থেকে তিনি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে বসেছেন। জনমতের কথা মাথায় রেখে তাঁর মেয়ে রুবাইয়ার কোনও ক্ষতি করার সাহস পাবে না জেকেএলএফ। কিন্তু মুফতি নাছোড়। তাঁর বড় মেয়ে মেহবুবা মুফতিও নাছোড়। জঙ্গিদের শর্ত অবিলম্বে মেনে নিয়ে রুবাইয়াকে ছাড়াতে হবে। তাই হল শেষমেষ।

পরে ফারুক আবদুল্লা জানিয়েছিলেন, জেকেএলএফ-এর দাবি মতো পাঁচ জঙ্গিকে জেল থেকে মুক্তি না দিলে রাজ্য সরকারকে বরখাস্ত করা হবে বলে তাঁকে হুমকি দিয়েছিলেন ভিপি, মুফতিরা। ফারুক আবদুল্লার এই স্বীকারোক্তির আগে থেকেই অবশ্য প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল রুবাইয়া অপহরণ কাণ্ড নিয়ে। রুবাইয়ার অপহরণ কী ঘটতে দেওয়া হয়েছিল ইচ্ছাকৃত? জেকেএলএফ-কে সাহায্য করার জন্যই কি অপহৃত হওয়ার নাটক? মুফতি মহম্মদ সইদ এবং তাঁর বড় মেয়ে মেহবুবা বার বার এই সব প্রশ্নকে নস্যাৎ করেছেন। তাঁদের গায়ে কালি ছেটানোর জন্য অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। রহস্যজনকভাবে রুবাইয়াকে লোকচক্ষুর আড়ালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাশ্মীর থেকে বহু দূরে দক্ষিণ চেন্নাইতে থাকেন রুবাইয়া। এড়িয়ে চলেন মিডিয়ার সংস্রব। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি মুফতি ও মেহবুবার নরম মনোভাবের কথা এতে চাপা থাকেনি। উপত্যকায় তো বটেই, গোটা দেশেই কারও অজানা নয়।

Advertisement

আরও পড়ুন:

কেন কাশ্মীরের মানুষ এখানে পৌঁছলেন

মুফতি ১৯৯১ সালে আবার কংগ্রেসে ফেরেন। ১৯৯৬ সালে মেহবুবা কংগ্রেসের টিকিটে বিজবেহারা কেন্দ্র থেকে প্রথম বার জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় নির্বাচিত হন। বিরোধী দলনেত্রী হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তাও পান। তবে জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতি যায়নি। ১৯৯৯ সালে মুফতি-মেহবুবা ফের কংগ্রেস ছাড়েন। নিজেদের দল জম্মু-কাশ্মীর পিপল’স ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গঠন করেন।

মেহবুবাদের দল বিজেপি’র সঙ্গে জোট বেঁধে এখন জম্মু-কাশ্মীরের মসনদে। মুফতি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। ৭ জানুয়ারি দিল্লির হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন মেহবুবা মুফতি। কাশ্মীরিয়তের প্রশ্নে বাবার চেয়েও কট্টরবাদী হিসেবে পরিচিত মেহবুবা। স্বাভাবিকভাবেই বিচ্ছিন্নতাবাদে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আজও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পাশাপাশি আইএস, আল কায়েদা-র নিশানাতেও এখন ভারত। কাশ্মীরে আইএস-এর পতাকা উড়তে দেখা যাচ্ছে মাঝেমধ্যে। লাগোয়া পঞ্জাবেও বাড়বাড়ন্ত সন্ত্রাসবাদী গতিবিধির। এমন একটা সময়ে মেহবুবা মুফতি বসছেন শ্রীনগরের মসনদে। এর ফল নিয়ে চিন্তিত উপত্যকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন