ফাইল চিত্র।
সুপ্রিম কোর্টে ফের ধাক্কা খেলেন নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা ভোটের আগে ভুয়ো সংঘর্ষের পুরনো কাঁটা নতুন করে চাপে ফেলল প্রধানমন্ত্রীকে। এবং অমিত শাহ-সহ গোটা বিজেপি শিবিরকেও।
মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকা কালে ঘটা ২২টি ভুয়ো সংঘর্ষের তদন্ত রিপোর্ট ‘গোপন’ রাখার জন্য সুপ্রিম কোর্টে চেষ্টার কসুর করেননি গুজরাত সরকারের আইনজীবীরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। সুপ্রিম কোর্ট আজ তাঁদের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে।
২০০২ থেকে ২০০৬-এর মধ্যে খুন করে ভুয়ো সংঘর্ষ বলে চালানোর ২২টি অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চেয়ে মামলা করেছিলেন গীতিকার জাভেদ আখতার ও সাংবাদিক বি জি ভার্গিস। আর্জি মেনে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এইচ এস বেদীর নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি তৈরি হয়। তার রিপোর্ট মামলাকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মাকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত খারিজ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিজেপি নেতৃত্ব ফের সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খাওয়ায় বিরোধীদের কটাক্ষ, প্রধানমন্ত্রীর সময়টা বোধ হয় ভাল যাচ্ছে না। গরিবদের জন্য সংরক্ষণ করে নজর ঘোরাতে চাইলেও, একের পর এক অস্বস্তির উদয় হচ্ছে।
২০০২ থেকে ২০০৬ এর মধ্যে অনেকটা সময় অমিত ছিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গুজরাত সরকারের দাবি ছিল, কোনও ভাবেই ওই তদন্ত রিপোর্ট মামলাকারীদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। তা হলে সেই রিপোর্ট সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাবে। বুঝতে কষ্ট হয় না, গুজরাতের বিজয় রূপাণি সরকার এবং বিজেপির আশঙ্কা ছিল, লোকসভা ভোটের আগে এ নিয়ে নতুন করে হইচই শুরু হলে তাতে মোদী-অমিত বিপাকে পড়তে পারেন।
ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ওই রিপোর্ট যাতে প্রকাশ করা না-হয়, তার জন্য সুপ্রিম কোর্টে গুজরাত সরকারের হয়ে মরিয়া চেষ্টা করছিলেন কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে মোদী যাঁকে গুজরাত থেকে দিল্লিতে নিয়ে এসেছিলেন। সওয়ালের সময়ে কখনও আরও তথ্য জানানোর রয়েছে বলে, কখনও বা শুনানিতে স্থগিতাদেশ চেয়ে রিপোর্ট প্রকাশ বা হস্তান্তর ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা চালান মেহতা। বুধবারও সেই চেষ্টা হয়।
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চে মামলা উঠতেই গুজরাত সরকারের আইনজীবী আর্জি জানান, তুষার মেহতা অন্য এজলাসে সওয়াল করেছেন। তাই পরের সপ্তাহে শুনানি হোক। সেই আর্জি খারিজ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘যদি উনি এক নম্বর কোর্টের মামলাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে অন্য কোর্টে যান, সেটা ওঁর
সিদ্ধান্ত। কিন্তু এখানে ওঁকে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। গুজরাত সরকার বারবার শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানাতে পারে না।’’ গুজরাত সরকারের আপত্তি নিয়ে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘প্রাক্তন বিচারপতি বেদীর উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেই তাঁকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তা হলে সেই রিপোর্ট মামলাকারীদের দেওয়া হবে না কেন?’’
মামলাকারীদের মধ্যে ভার্গিস প্রয়াত হয়েছেন। রিপোর্ট তুলে দেওয়া হবে তাঁর ও জাভেদ আখতারের আইনজীবীদের হাতে। চার সপ্তাহের মধ্যে মামলাকারীদের মতামত জানতে চেয়েছে কোর্ট। প্রধান বিচারপতি আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই ২২টি মামলায় বেদী কমিটির রিপোর্ট গৃহীত হবে, না খারিজ করে দেওয়া হবে— তা নিয়ে কোর্ট এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিহতেরা লস্কর বা জঙ্গি বলে দাবি করে পুলিশ দাবি করেছিল, এরা মোদী-হত্যার ছক কষেছিল। প্রাক্তন বিচারপতি বেদী তদন্ত রিপোর্ট পেশের সময়েই সংবাদমাধ্যমে তার কিছু অংশ ফাঁস হয়। জল্পনা ছড়ায়, পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আঙুল তোলা হয়েছে রিপোর্টে।
এই ২২টি মামলার বাইরে, সোহরাবুদ্দিন ও ইশরাত জহান খুনের তদন্ত করেছিল সিবিআই। সম্প্রতি সোহরাবুদ্দিন মামলায় বিশেষ সিবিআই আদালত অমিত শাহ ও অন্য অভিযুক্তদের রেহাই দিয়েছে। উল্লসিত বিজেপি অভিযোগ তুলেছে, কংগ্রেস যে সিবিআইকে ব্যবহার করছিল, তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। বিজেপির উল্লাসে জল ঢালল আদালত। গোপন রিপোর্টটি আর থাকবে না গোপনে।