মোদী লড়ছেন চিনেও, জমিতে রাহুল

গিয়েছিলেন বেজিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে। সেখানেও তিনি আজ বললেন, ‘‘জমি অধিগ্রহণ যাতে বৃদ্ধির পথে অন্তরায় না হয়, তা সুনিশ্চিত করব। আবার কৃষকদের ওপর তা যাতে বোঝা না হয় তা-ও দেখব।’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আশ্বাসে বেজিংয়ের বিনিয়োগকারীরা কতটা উৎসাহী হলেন, সে প্রশ্ন আলাদা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০৩:০৪
Share:

তেলেঙ্গনার আদিলাবাদে এক আত্মঘাতী কৃষকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন রাহুল গাঁধী। শুক্রবার পিটিআইয়ের ছবি।

গিয়েছিলেন বেজিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে। সেখানেও তিনি আজ বললেন, ‘‘জমি অধিগ্রহণ যাতে বৃদ্ধির পথে অন্তরায় না হয়, তা সুনিশ্চিত করব। আবার কৃষকদের ওপর তা যাতে বোঝা না হয় তা-ও দেখব।’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আশ্বাসে বেজিংয়ের বিনিয়োগকারীরা কতটা উৎসাহী হলেন, সে প্রশ্ন আলাদা। তবে সন্দেহ নেই, ঘরোয়া রাজনীতিতে কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ নীতির বিরুদ্ধে রাহুল গাঁধীর লড়াইয়ে তা ইন্ধন জোগাল ফের। তেলঙ্গানায় গিয়ে আজও রাহুল তুলোধনা করেছেন মোদীকে। বিঁধেছেন তাঁর দশ লাখি স্যুট নিয়ে। ফের বলেছেন, ‘‘মোদী সরকার আদৌ গরিব ও কৃষকদের কথা ভাবে না।’’ এই সরকার স্রেফ ক’জন পুঁজিপতির স্বার্থে চলে— এমন একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরির অভিযানে নেমেছেন রাহুল।

Advertisement

‘ধারণা তৈরির’ পাল্টা লড়াই চালাচ্ছেন মোদীও। লড়াইটাকে তিনি টেনে নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশের জমিতেও। প্রধানমন্ত্রী আজ জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে বেজিংয়ে যা বলেছেন, তার স্পষ্ট তিনটি দিক রয়েছে।

• দেশি-বিদেশি লগ্নিকারীদের মোদী বার্তা দিতে চেয়েছেন, শিল্প ও পরিকাঠামোর জন্য ভারতে জমি পেতে কোনও অসুবিধা হবে না।

Advertisement

• ঘরোয়া রাজনীতির পরিসরে এই বার্তাও দিতে চেয়েছেন যে, তাঁর সরকার কৃষক-স্বার্থের কথাও ভুলছে না।

• তৃতীয় বার্তাটি ভারতের ভাবমূর্তি নিয়ে। মোদী সরকারের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এই সন্ধিক্ষণে চিন সফরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে এটাও বোঝাতে চাইছেন যে, নয়াদিল্লি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক স্তরে ধারণা এক বছরে কতটা বদলে গিয়েছে। বেজিং আগের তুলনায় কতটাই উষ্ণ!

রাহুল কিন্তু মোদী সরকারকে বেঁধে রাখতে চাইছেন শুধুই জমি বিতর্কে। জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি আসলে উপলক্ষ মাত্র। রাহুলের মূল লক্ষ্য, যতটা সম্ভব দ্রুত মোদী সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাটা কৃষক, গরিব, মধ্যবিত্ত-সহ ৭০% মানুষের মনে গেঁথে দেওয়া। সরকার বিরোধী প্রচারে রাহুল যে কিছুটা হলেও সফল হচ্ছেন, তা বিজেপি নেতারাও স্বীকার করে নিয়েছেন। বিজেপি-র এক নেতার কথায়, প্রধানমন্ত্রী চাইছেন, সরকারের বর্ষপূতিতে বিতর্ক হোক এর সফল্য নিয়ে। কিন্তু মূল বিতর্কটা ঘুরপাক খাচ্ছে জমি ও কৃষকদের দুর্দশাকে ঘিরে। আর সেই কারণেই, দলের নেতাদের দিল্লির বাইরে জেলায় জেলায় ঘুরে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

কংগ্রেসের নেতারা এ নিয়ে বলছেন, মোদী পাঠাতে চাইছেন তাঁর মন্ত্রী ও দলের সাংসদ-নেতাদের। আর রাহুল যাচ্ছেন নিজে। মাস দুই অজ্ঞাতবাসের পরে এ এক অন্য রাহুল। এক বছরে পরিস্থিতিও ঘুরে গিয়েছে অনেক। লোকসভা ভোটের সময় কংগ্রেসের মাথায় ছিল ইউপিএ জমানার ব্যর্থতা ও অজস্র দুর্নীতির অভিযোগের ডালি। ফাঁকা মাঠ পেয়েছিলেন মোদী। রাহুল এখন জমি আঁকড়ে লড়ছেন।

দুর্দশাগ্রস্ত কৃষক পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে রাহুল আজ তেলঙ্গানার আদিলাবাদে ১৫ কিলোমিটার পদযাত্রা করেন। গত কয়েক মাসে এই রাজ্যে একশো জনেরও বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। আজ তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে আর্থিক সাহায্যও দেন রাহুল। এর পর স্থানীয় গ্রামে এক কৃষকসভা থেকে মোদী সরকারের জমি ও ‘কৃষক-বিরোধী’ নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। ভিড়ের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘‘আপনাদের মধ্যে কেউ কি দশ লক্ষ টাকার স্যুট পরেন? কিন্তু মোদীজি পরেন। তাঁরই শুধু ‘অচ্ছে দিন’ এসেছে। আর এসেছে তাঁর ঘনিষ্ঠ পাঁচ-ছ’জন পুঁজিপতির। সরকার শুধু তাঁদের হয়েই কাজ করছে।’’ মোদী সরকারের পাশাপাশি তেলঙ্গানার চন্দ্রশেখর রাও সরকারকেও নিশানা করেন রাহুল। চন্দ্রশেখরকে ‘মিনি-মোদী’ আখ্যা দেন তিনি। আদিলাবাদের সভায় রাহুল বলেন, ‘‘কেন্দ্রে মোদী আর এখানকার মিনি- মোদী এক বছরে ক’জনের কাজের সুযোগ তৈরি করেছেন? ক’জন কাজ পেয়েছেন হাত তুলুন দেখি!’’

তেলঙ্গানার পর আগামী সপ্তাহে রাহুল যাবেন অমেঠী। তার পর মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ের দু’টি জেলা সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। কংগ্রেসের নেতারা এ-ও মনে করছেন, রাহুল রাজ্যে-রাজ্যে ঘুরে জনসংযোগ ও মোদী সরকারকে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ায় কংগ্রেস সম্পর্কে আম-আদমির ধারণাটা ক্রমে বদলাচ্ছে। মূলত এই ভাবনা থেকেই দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানের মেয়াদ এক মাস বাড়িয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। দেশ জুড়ে আজ তা শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন ঠিক হয়েছে, সদস্য অভিযান ১৫ জুন পর্যন্ত চলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন