চিন্তা গাঁধী পরিবারই, তীব্র আক্রমণে মোদী

লোকসভা ভোটে প্রচারের অভিমুখ কোন দিকে যাবে, ২০১৪ সালে তা ঠিক করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। পাঁচ বছর পরে সেই তিনিই কার্যত বাধ্য হচ্ছেন রাহুল গাঁধীর পদাঙ্ক অনুসরণ করতে! 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:২২
Share:

লোকসভা ভোটে প্রচারের অভিমুখ কোন দিকে যাবে, ২০১৪ সালে তা ঠিক করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। পাঁচ বছর পরে সেই তিনিই কার্যত বাধ্য হচ্ছেন রাহুল গাঁধীর পদাঙ্ক অনুসরণ করতে!

Advertisement

নতুন বছরের প্রথম দিনে এক সংবাদ সংস্থাকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়ে লোকসভা ভোটের ঘণ্টা বাজিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু একই সঙ্গে এ-ও বোঝা গেল যে, কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধীদের যে জোট ক্রমশ দানা বাঁধছে, সেটাই গলার কাঁটা হয়ে উঠছে তাঁর। তাই এ দিন মোদীর ঘোষণা, লোকসভা ভোট হবে জোট বনাম জনতার। আর জনতার আশীর্বাদ রয়েছে তাঁর সঙ্গেই।

কিন্তু কোন পথে হাঁটবে লোকসভা ভোটের প্রচার? এ দিন মোদীর সাক্ষাৎকার দেখার পরে অনেকেরই অভিমত, এ বার প্রচারের মূল সুরটি আর মোদী বেঁধে দিচ্ছেন না। সেটা ঠিক করে দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতিই। যার মধ্যে রয়েছে রাফাল দুর্নীতি, চাষিদের দুর্দশা, কৃষিঋণ মকুব। তাই এ দিনের সাক্ষাৎকারে গাঁধী পরিবারকেই আক্রমণের মূল লক্ষ্য করেছেন মোদী। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলার দিকে ইঙ্গিত করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘যে পরিবার চার প্রজন্ম ধরে দেশ চালিয়েছে, তারা এখন জামিনে রয়েছে। তা-ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে। এটি একটি বড় বিষয়। কিন্তু একটি গোষ্ঠী একে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।’’

Advertisement

গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে কংগ্রেস-মুক্ত ভারত গড়ার কথা বলছেন মোদী। কিন্তু পাঁচ রাজ্যে হারের পরে সেই স্লোগান অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে। এ দিন মোদীর ব্যাখ্যা, ‘‘কংগ্রেস একটি মানসিকতা। যে মানসিকতায় জড়িয়ে আছে দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র, স্বজনপোষণ। কংগ্রেস-মুক্ত ভারতের অর্থ, সেই মানসিকতা থেকে মুক্তি।’’

আরও পড়ুন: সব বিতর্কের ‘জবাব’ নিয়ে খোলামেলা সাক্ষাৎকারে হাজির এক অচেনা মোদী

কিন্তু রাফাল যুদ্ধ-বিমান কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেই তো গত প্রায় এক বছর ধরে মোদীকে লাগাতার বিঁধছেন রাহুল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কেন্দ্রকে ক্লিনচিট দেওয়া হলেও শীর্ষ আদালতে বন্ধ খামে যে তথ্য সরকার জমা দিয়েছে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ফলে রাফাল ঘিরে ধোঁয়াশা কাটেনি।

এই অবস্থায় রাফাল নিয়ে ‘বন্ধু’ অনিল অম্বানীকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার যে অভিযোগ মোদীর বিরুদ্ধে তোলেন রাহুল, আজ তার উত্তর দিতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। মোদীর অবশ্য যুক্তি, এ অভিযোগ ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে নয়, সরকারের বিরুদ্ধে। আর কারও (রাহুল) যদি মিথ্যা বলার রোগ থাকে, তা হলে কেন বারবার সে ফাঁদে পা দেবেন তিনি?

কিন্তু ঘটনা হল, রাহুলের পথে হেঁটেই পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে মোদীকে। তাঁর অস্ত্র অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ড চুক্তি। যে কপ্টার কেনা নিয়ে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগের বিচারের জন্য দেশে আনা হয়েছে ক্রিশ্চিয়ান মিশেলকে। জেরায় মিশেল গাঁধী পরিবারের নাম করেছেন বলে ইতিমধ্যেই আদালতে দাবি করেছে ইডি। আজ মোদীর বক্তব্য, মিশেলকে বাঁচাতে কংগ্রেস যে ভাবে আইনজীবী পাঠিয়েছে, সেটি ‘চিন্তার বিষয়’।

আরও পড়ুন: ‘গণতন্ত্র কোথায় রাজ্যে’, মোদীর খোঁচা ওড়াল তৃণমূল

কংগ্রেসের মুখপাত্রের পাল্টা দাবি, ‘‘দেড় ঘণ্টা সাক্ষাৎকার দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আসলে লোকসভা ভোটে নতুন অভিমুখ ঠিক করতে চাইছিলেন। কিন্তু রাহুল গাঁধী গত কয়েক বছর তাঁকে শান্তিতে ঘুমোতে দিচ্ছেন না। নতুন অভিমুখ তৈরি করা দূরস্থান, রাহুলের অভিযোগের জবাব দিতে আর তাঁর কৌশলে হারের পর দলের কর্মীদের চাঙ্গা করার মন্ত্র দিতেই ব্যস্ত থাকতে হল তাঁকে।’’

পাঁচ রাজ্যের হারকে মোদী অবশ্য আজ খাটো করে দেখানোরই চেষ্টা করছেন। তাঁর যুক্তি, তেলঙ্গানা আর মিজোরামে বিজেপি জিতবে, এমন দাবি তিনি কোনও দিন করেননি। ছত্তীসগঢ়ে তাঁদের হার হয়েছে বটে। কিন্তু সেখানে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ঢেউ ছিল। আর মধ্যপ্রদেশ আর রাজস্থানে তো ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হয়েছে। তবে মোদী আজ বুক ঠুকে বলতে পারেননি যে মোদী-ঝড় বজায় আছে। শুধু বলেছেন, ‘‘এর অর্থ বিরোধীরা মানছেন যে, কোনও এক সময় মোদী-ঝড় কিংবা মোদী-জাদু ছিল।’’

বিজেপি নেতারাও বলছেন, পাঁচ বছর আগে মনমোহন জমানার দুর্নীতি, নীতিপঙ্গুত্বের আবহে মোদী এক নতুন প্রতিশ্রুতির ঝুলি ফিরি করে মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। এখন মেয়াদ শেষ হতে চললেও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। তার উপর মহাজোট যে ভাবে দানা বাঁধছে, তাতে লোকসভার লড়াই আদৌ মসৃণ নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন