ভোটের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে জোড়া আক্রমণ শানালেন নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রী আজ অভিযোগ করলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ‘অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি’-তে কাজ করছে। তাঁর এই মন্তব্যের পরেই ‘সোনা-কাণ্ড’ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকার বলল তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীকে বিমানবন্দরে আটক করার পরে শুল্ক দফতরের কাজে রাজ্য পুলিশ হস্তক্ষেপ করেছে। শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে ‘সাংবিধানিক অরাজকতা’ চলছে।
এত দিন ‘সোনা-কাণ্ড’ নিয়ে রাজনৈতিক স্তরে বিজেপি নেতারা আক্রমণ করছিলেন। আজ সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর সামনে কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল বলেন, রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুল্ক দফতর কলকাতা বিমানবন্দরে আটক করার পরে রাজ্য পুলিশ শুল্ক কর্তাদের হুমকি দিয়ে তাঁকে জোর করে বের করে নিয়ে যায়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সরাসরি অভিষেকের নাম করেননি। তবে এর আগে সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিষেক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দু’গ্রাম সোনা থাকার প্রমাণ দিতে পারলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। মেহতা এ দিন একাধিকবার দাবি করেন, এ বিষয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ রয়েছে।
কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাসভবনে সিবিআই কর্তাদের হেনস্থার পরে রাজ্যের মুখ্যসচিব, পুলিশের ডিজি ও রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেছিল সিবিআই। তার সঙ্গে সোনা-কাণ্ডকে একই বন্ধনীতে এনে মেহতার অভিযোগ, রাজ্যে নিযুক্ত কেন্দ্রীয় সংস্থার অফিসাররা আতঙ্কে ভুগছেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁদের হামলার শিকার হতে হচ্ছে।
অভিযোগ শুনে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, আপনারা আমাদের কাছে কী চাইছেন? সলিসিটর জেনারেল বলেন, ‘‘আমি শুধু আদালতের নজরে গোটা বিষয়টা আনতে চাইছি।’’ রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি মন্তব্য করেন, মেহতা সংবাদমাধ্যমে হেডলাইন তৈরি করতে চাইছেন। প্রধান বিচারপতি মেহতাকে বলেন, ‘‘আপনারা যদি আমাদের থেকে পদক্ষেপ চান, তা হলে সরকারি ভাবে আবেদন করতে হবে।’’ মেহতা তাতে রাজি হয়ে যান।
সারদা-রোজ ভ্যালি কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত ঘিরে এমনিতেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে তিক্ততা তুঙ্গে উঠেছে। আজ এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, বাংলায় সিবিআই কেন কাজ করতে পারছে না? কেনই বা আইপিএস অফিসাররা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ধর্নায় বসে পড়ছেন? এত তিক্ততা কেন?
মোদী বলেন, ‘‘বিষয়টি তিক্ততার নয়। বিষয়টি ওখানকার সরকারের চালচলনের, নেতৃত্বের চালচলনের। ওঁরা অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি নিয়েছেন। যে কোনও গণতান্ত্রিক দেশের জন্য এটা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়।’’
এ দিন সুপ্রিম কোর্টে সারদা-মামলার শুনানি ছিল। রাজ্য পুলিশের মতো দুই মোবাইল পরিষেবা সংস্থাও অভিযুক্তদের ‘কল ডেটা রেকর্ডস’ দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে সিবিআই। সেই শুনানির সময়ই সলিসিটর জেনারেল আচমকা ‘সোনা-কাণ্ড’-র প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
মেহতা বলেন, শুল্ক দফতর কলকাতা বিমানবন্দরে রুজিরার সাতটি ব্যাগ তল্লাশির জন্য আটক করেছিল। হঠাৎ পুলিশ এসে কাজ বন্ধ করতে বলে। কারা রুজিরাকে আটক করেছেন, তা জানতে চাওয়া হয়। ক্রমে পুলিশের ভিড় বাড়তে থাকে। শুল্ক দফতরের কর্তাদের ঘিরে ফেলে হুমকি দেওয়া হয়, মহিলাকে না ছাড়লে তাঁদেরই গ্রেফতার করা হবে। শেষে শুল্ক দফতরের সম্মতি ছাড়াই পুলিশ ওই মহিলাকে বের করে নিয়ে যায়।