এ বার গোমাতাদের কানে ট্যাগ পরাচ্ছে মোদী সরকার

বারকোড দেওয়া সেই নম্বর কানে ‘ট্যাগ’ করে দেওয়াও হচ্ছে। গোমাতাদের সেই নম্বর বয়ে বেড়াতে হবে জীবনভর। কারণ, ওদের গোয়ালে নম্বর গুছিয়ে রাখবে কে? তবে এই প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ আর ‘না’ বলেনি।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৫১
Share:

কানে ট্যাগ করা নম্বর। —নিজস্ব চিত্র

নম্বরে যায় চেনা। মানুষের পর ভারতে নম্বর পাচ্ছে গরুও। নরেন্দ্র মোদীর সরকার দেশের প্রতিটি গরুকে নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করতে নেমেছে।

Advertisement

বারকোড দেওয়া সেই নম্বর কানে ‘ট্যাগ’ করে দেওয়াও হচ্ছে। গোমাতাদের সেই নম্বর বয়ে বেড়াতে হবে জীবনভর। কারণ, ওদের গোয়ালে নম্বর গুছিয়ে রাখবে কে? তবে এই প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ আর ‘না’ বলেনি। কারণ, কৃত্রিম প্রজননের তথ্যপঞ্জির সঙ্গে এই ‘নম্বর প্রদান’ কর্মসূচি যুক্ত করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় প্রাণীসম্পদ বিকাশ মন্ত্রক। অর্থ বরাদ্দও দিল্লির। বার কোডযুক্ত নম্বর দিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে সায় দিয়েছে রাজ্য প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর। পশ্চিমবঙ্গ গোসম্পদ বিকাশ সংস্থার তত্ত্বাবধানে চলছে সেই কাজ।

দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘গরুর আধার কার্ড বলে যা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। কৃত্রিম প্রজননের জন্য যে সব গরু চিহ্নিত হয়, তাদের ওই নম্বর দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই কাজ হচ্ছে বলে এত হইচই। রাজ্যজুড়ে প্রাণী সুমারিও শুরু হয়েছে। সেই তথ্যও ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হবে। এ নিয়ে অপপ্রচার বন্ধ হওয়া দরকার।’’

Advertisement

প্রজনন

২০১৬-১৭
• রাজ্যে কৃত্রিম প্রজনন হয় ১ লক্ষ ৯২ হাজার ১৪৮ টি গরুর
• বাচ্চা জন্মায় ৭০ হাজার ২১১টি ২০১৭-১৮
• রাজ্যে প্রজননক্ষণ গরুর সংখ্যা ৬৪. ২১ লক্ষ
• কৃত্রিম প্রজননের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ ২ লক্ষ

সরকারি সূত্রের খবর, আগেও কৃত্রিম প্রজনন হওয়ার পর গরুর কান ফুটিয়ে ট্যাগ লাগানো হত। তবে তাতে নম্বর থাকত না। সেই পদ্ধতি এখন আধুনিক হয়েছে। রাজ্যের ছ’হাজারের বেশি গো-প্রজনন কেন্দ্রে পালকরা তাঁদের গরু নিয়ে আসেন। পশ্চিমবঙ্গে ৩৪৪টি ব্লকে ৩৫৩৬ জন প্রাণীবন্ধুও একই কাজ করেন। কৃত্রিম পদ্ধতিতে গরুর দেহে বীর্যপ্রবেশ করানোর পর ওই গরুর কী হল, তা দেখার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। এখন তা দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: অ্যাপে টুপি-টিশার্টও এখন বেচছেন নমো

প্রাণী সম্পদ দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, কৃত্রিম প্রজননের পর গরুর কানে একটি বারকোড যুক্ত কার্ড পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই তথ্য চলে যায় রাজ্য এবং দিল্লির কেন্দ্রীয় সার্ভারে। ২১ দিনের মাথায় ওই গরুর কথা জানতে চেয়ে মেসেজ আসে প্রজনন প্রকল্পের কর্মী বা চিকিৎসকের কাছে। জানতে চাওয়া হয়, প্রজনন সফল কি না। তিন মাস পর আবার একটি মেসেজ পাঠায় কেন্দ্রীয় সার্ভার। জানতে চাওয়া হয়, গরুটি গর্ভবতী হয়েছে কি না। ২৭৫ দিন পর শেষ মেসেজে জানতে চাওয়া হয়, বাচ্চা জন্মালো কি না, জন্মালে তা এঁড়ে না বকনা। কৃত্রিম প্রজনন যাতে সফল হয়, সেজন্য এই উদ্যোগ বলে জানাচ্ছেন প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের কর্তারা। তাঁদের মতে, আগে কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ার পর সেভাবে ফলোআপ হত না। এখন বারকোড দিয়ে চিহ্নিতকরণের ফলে তা সম্ভব হচ্ছে। আগে রঙ বা শিং দেখে গরু চেনা হত, এখন হচ্ছে নম্বরে।

আরও পড়ুন: অযোধ্যা মামলা এ বার কোন পথে ঠিক করতে বসছেন প্রধান বিচারপতি

এটা কি শুধুমাত্র কৃত্রিম প্রজননের জন্যই করা হচ্ছে?

এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বাস্তবে দেশে গরুর সংখ্যা কত, তা এই পদ্ধতিতে ধরা পড়ে যাচ্ছে। গ্রামস্তরে গরুর সংখ্যা এবং দুধের উৎপাদন নিয়েও স্পষ্ট ধারণা তৈরি হচ্ছে। সেই কারণে চলতি মাসে প্রাণী সুমারিও ডিজিটাল পদ্ধতিতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন