Narendra Modi

Narendra Modi: ‘কৃষকবন্ধু বাজেট’, প্রচারের দিশা দিতে ক্লাস নিলেন মোদী

বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, সংস্কারমুখী কৃষি আইন  চাপিয়ে দিতে গিয়ে  জনভিত্তিতে ধস নেমেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৪৮
Share:

রাজ্যসভায় বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার। পিটিআই

ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব-সহ পাঁচ রাজ্যে বাজেট নিয়ে কী ভাবে প্রচার করতে হবে, রীতিমতো ক্লাস নিয়ে তার দিশা ঠিক করে দিলেন শিক্ষক নরেন্দ্র মোদী। গ্রামীণ সমাজ ও কৃষক সমাজের উন্নয়নই যে বাজেটের মূল লক্ষ্য, সেটাই প্রচারে বলার নির্দেশ তাঁর।
গত কাল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট পেশ করলেও বিজেপির অনেকেই সে বাজেটের কোনও অভিমুখ খুঁজে পাননি। আজ দলের জন্য সেই দিক নির্দেশ বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন প্রধানমন্ত্রী। বাজেটের বিভিন্ন দিকগুলি পাঁচ ভোটমুখী রাজ্যে কর্মী-সমর্থকদের কাছে তুলে ধরে কী ভাবে প্রচারে নামতে হবে, তার ব্যাখ্যাও করে দেন তিনি।

বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, সংস্কারমুখী কৃষি আইন চাপিয়ে দিতে গিয়ে জনভিত্তিতে ধস নেমেছে। চাপে পড়ে আইন প্রত্যাহার করলেও, আমজনতার বিশেষ করে কৃষক সমাজের আস্থা যে বিজেপি এখনও ফিরে পায়নি, তা গ্রামীণ ভারতে পা দিয়েই বুঝতে পারছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কৃষিবহুল পঞ্জাব, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বিস্তীর্ণ অংশ, উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যে বিজেপির কৃষিনীতির বিরুদ্ধে সুর স্পষ্ট। এমতাবস্থায় কৃষক সমাজকে বার্তা দিতে তাই বাজেটকেই হাতিয়ার করেছেন মোদী। এই বাজেট যে কৃষিনির্ভর এবং কৃষক সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা ভেবে তৈরি, তা বোঝাতেই আজ শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি।
মোদী বলেন, মূলত গরিব ও মধ্যবিত্তদের কথা ভেবেই বাজেট বানিয়েছে সরকার। বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য হল কৃষিক্ষেত্রকে আরও শক্তিশালী করে তোলা। কৃষি ও কৃষক সমাজের উন্নয়নই যে সরকারের মূল মন্ত্র— ভোট প্রচারে সেটাকেই সামনে আনার কথা বলেন মোদী।

গত কাল বাজেটে একাধিক নদী সংযুক্তিকরণের কথা বলেছিলেন নির্মলা। আজ সেই সিদ্ধান্তের সুফল বোঝাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে চাষিরা সারা বছর চাষের জন্য জল পাবেন। কৃষক পরিবারের সন্তানদের উপার্জন খুঁজতে গ্রামের বাইরে যেতে হবে না। প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হল রাসায়নিকমুক্ত চাষ। কৃষিক্ষেত্রে ড্রোন প্রযুক্তিকে আরও ব্যাপক আকারে ব্যবহার করার উপরে জোর দিয়েছেন মোদী। সেই সঙ্গে কৃষি করিডর গড়ে তোলার কথাও বলেছেন তিনি। গঙ্গা মূলত যে রাজ্যগুলি দিয়ে বয়ে গিয়েছে, সেই পথ ধরে ওই করিডর উত্তরাখণ্ড থেকে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে যাবে।
কৃষি আইন বাতিল হলেও, কৃষকদের অন্যতম দাবি ছিল ফসলের ন্যূনতম দামকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া। সরকার এ নিয়ে এখনও কোনও আশ্বাস দেয়নি। কিন্তু সহায়ক মূল্য দিয়ে ফসল কেনার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে চাল কেনায় সরকার যে গত আর্থিক বছরে রেকর্ড করেছে, সেই বার্তা আজ মনে করাতে ভোলেননি প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, এর ফলে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি ফসলের দাম পৌঁছে গিয়েছে। অন্য দিকে পিএম কিসান প্রকল্পেও চাষিরা সরাসরি টাকা পেয়েছেন। যার ফলে চাষের অনিশ্চিয়তা কেটে গিয়েছে।

Advertisement

মোদী আজ দাবি করেন, বিভিন্ন কারণে কৃষিতে সার আমদানি করার ব্যাপারে চলতি আর্থিক বছরে সমস্যার মুখে পড়েছিল সরকার। কিন্তু কৃষকদের কথা মাথার রেখে বাড়তি দাম দিয়ে তা আমদানি করা হয়। মোদী বলেন, ‘‘এ বছরে তাই সারের ক্ষেত্রে ভর্তুকি ৭৯ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১.০৫ লক্ষ কোটি টাকা করা হয়েছে।’’

কৃষির বিভিন্ন দিক ছাড়াও গ্রামীণ উন্নয়নের বিষয় নিয়েও বক্তৃতা দেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, গ্রামে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া, গ্রামীণ এলাকায় বাড়ি বানানো, বিদ্যুৎ, সড়কের মতো বুনিয়াদি পরিকাঠামো তৈরির পাশাপাশি শহরের সঙ্গে গ্রাম যাতে পাল্লা দিতে পারে তার জন্য ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘আজ কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নের সঙ্গেই গ্রামীণ ভারতের উন্নয়নে সরকার যে দায়বদ্ধ তা নিজের বক্তব্যে স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বুঝিয়ে দিয়েছেন, সরকারের লক্ষ্যই হল কৃষক সমাজকে সমৃদ্ধশালী করার মাধ্যমে গ্রামীণ ভারতের উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন