জাতীয়তাবাদী আবেগে ভর করে নিজের সরকারের কাজের বিবরণ দিয়ে কার্যত ভোটের প্রচারই চালালেন নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
কাশ্মীরে সিআরপি জওয়ানদের মৃত্যুর আবহে কংগ্রেস-বিজেপি ‘যুদ্ধবিরতি’ ছিল গত কাল। আজ মহারাষ্ট্র সফরে গিয়ে জাতীয়তাবাদী আবেগে ভর করে নিজের সরকারের কাজের বিবরণ দিয়ে কার্যত ভোটের প্রচারই চালালেন নরেন্দ্র মোদী। তবে কংগ্রেস বা কোনও বিরোধীকে সরাসরি আক্রমণ করলেন না তিনি। ছত্তীসগঢ়ে রাহুল গাঁধী অবশ্য ফের নেমে পড়লেন আক্রমণে। অন্তর্বর্তী বাজেটে কৃষকদের জন্য ছিটেফোঁটা বরাদ্দ করে বিতর্কিত শিল্পপতিদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার নিজের ঝুলি উপুড় করেছে বলে অভিযোগও তুললেন। তবে নিয়মিত ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানের বদলে আজ নিজের সুর কিছুটা নিচু তারেই রাখলেন কংগ্রেস সভাপতি।
গত কাল বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন উপলক্ষে নাম না-করে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মোদী যে কথাগুলো বলেছিলেন, আজ মহারাষ্ট্রের ধুলে জেলার জনসভায় প্রায় তারই পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি। রাজ্যের বুলদানা জেলার নিহত জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, শত্রুকে কোথায়, কখন, কতটা তীব্র জবাব দেওয়া হবে— নিরাপত্তা বাহিনীকে তা স্থির করার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া আছে। মোদীর কথায়, ‘‘স্বজনহারা প্রতিটি পরিবারকে বলতে চাই, আপনাদের চোখের জলের বদলা নেব। আমাদের সেনাদের নিশানা করে যারা গুলি-বোমা ছোড়ে, যারা সেই গুলি-বোমা জোগান দেয়— কাউকেই ছেড়ে দেব না।’’
যবৎমল জেলায় গিয়ে অবশ্য পুরোদস্তুর লোকসভা ভোটের প্রচারই করেছেন মোদী। কখনও যাযাবর জনজাতির ভাষায় কথা বলেছেন, কখনও মরাঠিতে। সরকারি নানা প্রকল্পের কথা তুলে বলেছেন, ‘‘২০১৪-য় আপনারা যদি ভোট দেওয়ার সময়ে ভুল করতেন, তা হলে আপনাদের আর অবস্থা বদলাত না।’’ সঙ্গে জানিয়েছেন, ২০১৪-য় এখানেই এসেছিলেন ‘চায় পে চর্চা’ করতে। চাষিদের সেই সময়ে দেওয়া নানা প্রতিশ্রুতি পালনেরই চেষ্টা করেছেন তিনি। ধুলে-তে মোদী বলেছিলেন, ‘‘এটা শোকের সময়। সংযমেরও।’’ মহারাষ্ট্রের দাভাড়ি-তে যদিও কৃষক ও যুবকদের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগ তুলে মোদীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কংগ্রেস।
আর ছত্তীসগঢ়ের জগদলপুরের এক সভায় সরব হয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি নিজে। আজ সেখানে রাহুল অভিযোগ করেন— অনিল অম্বানী, নীরব মোদী, মেহুল চোক্সী, বিজয় মাল্য, ললিত মোদীদের লক্ষ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। আর কৃষকদের জন্য দৈনিক বরাদ্দ মাত্র সাড়ে তিন টাকা। অন্তর্বর্তী বাজেটে ঘোষিত ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি যোজনা’ প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করে কংগ্রেস সভাপতির প্রশ্ন, ‘‘চাষিদের জন্য বার্ষিক ৬ হাজার টাকা সাহায্য শুনে বিজেপির সাংসদেরা টেবিল চাপড়াচ্ছিলেন। এ কি তামাশা?’’
রাহুলের বক্তব্য, প্রত্যেক দেশবাসীর অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখেননি মোদী। কিন্তু কংগ্রেসে ক্ষমতায় এলে গরিবদের ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করে সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দেবে। নোটবন্দি যদি কালো টাকার বিরুদ্ধেই লড়াই হয়, তা হলে সৎ লোকেদের কেন লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।