কনস্টেবলের সেই বিলাসবহুল বাংলো। ছবি: সংগৃহীত।
সুদৃশ্য দোতলা বাড়ি। সামনে নানা ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো। সাত হাজার বর্গফুটের ওই বাড়ির অন্দরমহল দেখলে অনেকেরই চোখ কপালে উঠবে। নানা রঙের, নানা ধরনের আলোয় আলোকিত গোটা বাড়ি। সেই বাড়ির মালিক লখনউয়ের এক পুলিশ কনস্টেবল। নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ চক্রে নাম জড়াতেই তাঁকে বরখাস্ত করে পুলিশ বিভাগ। সেই ঘটনার তদন্তে তাঁর বাড়িতে পৌঁছোয় ইডির দল। বরখাস্ত হওয়া ওই কনস্টেবলের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয় বহু মূল্যবান এবং বিলাসবহুল জিনিস।
মাদকদ্রব্য হিসাবে নিষিদ্ধ কোডিনযুক্ত কাশির সিরাপ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় হাজার কোটি টাকার এই নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ পাচারের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়। সেই ঘটনার তদন্তে গ্রেফতার করা হয় অমিতকুমার সিংহ নামে এক জনৈককে। তাঁকে জেরা করেই উঠে আসে পুলিশ কনস্টেবল অলোকপ্রতাপ সিংহের নাম।
তদন্তে জানা যায়, কাশির সিরাপ পাচারচক্রের অন্যতম মাথা অলোক। উত্তরপ্রদেশ এবং ঝাড়খণ্ডে কাশির সিরাপের পাইকারি ব্যবসা চালাত এই চক্র। সেখান থেকেই দেশের অন্যত্র এমনকি সীমান্ত পেরিয়ে নেপাল এবং বাংলাদেশেও পৌঁছে যেত ওই নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ। পুলিশ এবং রাজনীতি মহলে নিজের পরিচিতিকে এই পাচার চক্রে কাজে লাগিয়েছিলেন অলোক! দাবি তদন্তকারীদের।
এই চক্রের মূল মাথা শুভম জয়সওয়াল। বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হতেই দুবাইয়ে পালিয়ে যান তিনি। তবে তাঁর বাবা ভোলানাথ জয়সওয়ালকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত সাড়ে তিন লক্ষ নিষিদ্ধ কাশির সিরাপের বোতল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য আনুমানিক সাড়ে চার কোটি টাকা। এখনও ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি তদন্ত করছে ইডি।
সেই তদন্তের সূত্র ধরে অলোকের বাড়িতে হানা দেয় ইডির দল। বাজেয়াপ্ত করা জিনিসের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ডের ব্যাগ, ঘড়ি। এ ছাড়াও বেশ কিছু দামি বৈদ্যুতিন জিনিসও উদ্ধার করা হয়েছে অলোকের বাড়ি থেকে। তাঁর বাড়িতে অন্দরসজ্জা কাজ করতে খরচ হয়েছে দেড় থেকে দু’কোটি টাকা। জমি বাদ দিয়ে বাড়িটি তৈরি করতে অলোক খরচ করেছিলেন অন্তত পাঁচ কোটি টাকা।
অলোক মূলত চান্দৌলির বাসিন্দা। ২০ বছর আগে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন অলোক। ২০০৬ সালে সোনা লুটের একটি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তখন তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তবে আদালত ওই মামলায় তাঁকে মুক্তি দিলে চাকরিতে পুনর্বহাল করে পুলিশ বিভাগ। কিন্তু ২০১৯ সালে দুর্নীতির অভিযোগে আবার তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। গত ২ ডিসেম্বর অলোককে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি লখনউয়ের জেলে বন্দি।