দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে বারাণসীর মাঠেই মধ্যাহ্নভোজে বসলেন প্রধানমন্ত্রী। নিজেই সঙ্গে এনেছিলেন টিফিন-বক্স। ছবি-সহ টুইটে বৃহস্পতিবার রাতেই বিজেপি জানায়— ‘‘এমন সাম্য আমাদের দলেই সম্ভব।’’ আর মাঠে উপস্থিত প্রায় ২৬ হাজার কর্মী-নেতার যেন কিছুতেই ঘোর কাটছে না। তবে এক কর্মীর আক্ষেপ, ‘‘আমরা সবাই মোদীজির জন্য টিফিন নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু উনি তো নিজেই নিজেরটা এনেছিলেন। ভাগাভাগি আর হল কোথায়!’’ ছবি: পিটিআই।
ভোট উত্তরপ্রদেশে। আর রামমন্দির নিয়ে তুলকালাম মুম্বইয়ে! শুধু কি রাম? শরিকি দড়ি টানাটানির প্যাঁচে ফেঁসে গিয়েছেন ছত্রপতি শিবাজিও।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাল মুম্বই যাচ্ছেন। আরব সাগরে মরাঠা রাজা ছত্রপতি শিবাজির এক বিশাল মূর্তির শিলান্যাস করতে। যে শিবাজি ছিলেন বালসাহেব ঠাকরের দলের একচ্ছত্র আইকন। তাঁকেই ছিনিয়ে নিয়ে মুম্বইয়ের বুকে শিবসেনার ‘দাদা’ হয়ে উঠতে চাইছে মোদীর দল। সামনে মুম্বই পুরসভার ভোট। তাতেও শরিক শিবসেনার থেকে বেশি আসনের দাবি রেখে চাপ বাড়িয়ে রেখেছে বিজেপি। আর উদ্ধব ঠাকরেকে এ ভাবে প্যাঁচে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে দেখেই তেড়েফুঁড়ে উঠেছে শিবসেনা।
যেমনটি হল গত কাল। মুম্বইয়ের বুকে একটি রেলস্টেশন উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন মন্ত্রী সুরেশ প্রভু। তাঁর সামনেই শিবসেনা এমন হাঙ্গামা শুরু করে যে বক্তৃতা মাঝপথে থামিয়ে পত্রপাঠ বিদায় নিতে হয় প্রভুকে। আগে শিবসেনাতেই ছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদী তাঁকে শিবসেনা থেকে ইস্তফা দিইয়ে রেলমন্ত্রী করে দেন। তা নিয়ে পুরনো তিক্ততা কিছু থাকলেও গত কালের বিরোধ স্টেশনটির নাম ‘রামমন্দির’ রাখার কৃতিত্ব নিয়ে। অযোধ্যা থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে মুম্বইয়ের স্থানীয় একটি রাম মন্দিরের নামেই এই নামকরণ। বিজেপি কর্মীরা সেখানে ‘মোদী-মোদী’ ধ্বনি তুলতেই শিবসেনা নোট বাতিল নিয়ে মোদী-বিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করেন। শিবসেনার ক্ষোভ, মোদী কি রামের থেকেও বড় হয়ে উঠেছে!
উদ্ধবের দল বলছে, এই স্টেশনের নাম রামমন্দির রাখতে শিবসেনাই মুম্বই পুরসভায় উদ্যোগী হয়েছিল। বিজেপির যদিও দাবি, তারাই রেল মন্ত্রকে তদ্বির করে রামের নামে স্টেশনের নাম রেখেছে। ফলে এক দিকে শিবাজির রাজনৈতিক ‘উত্তরাধিকার’ নিয়ে যেমন কাড়াকাড়ি চলছে শরিকে-শরিকে। তেমনই রামের কৃতিত্ব নিয়েও দড়ি টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে দু’দলে।
সন্দেহ নেই, মহারাষ্ট্রে এই লড়াই আসলে বড় লড়াইয়ের অঙ্গ মাত্র। ক’দিন আগেই খোদ মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস হুঙ্কার ছেড়েছেন, ২০১৭-র গোড়ায় মুম্বই পুরসভার ভোটে তাঁদের ৫০ ভাগ আসন চাই। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, দু’বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুম্বইয়ে শিবসেনার থেকে একটি আসন বেশি পেয়েছে বিজেপি। ফলে বিজেপির ন্যায্য পাওনাও বেশি।
উদ্ধবও পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করে যাচ্ছেন বিজেপির সঙ্গে। আসন আধাআধি ভাগ করে ভোটের আগেই বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করতে রাজি নন তিনি। বিশেষ করে মুম্বই পুরসভায় যেখানে শিবসেনার দাপটই বরাবর বেশি। জোট না ভাঙলেও জমি ছাড়তে রাজি নন শিবসেনা-প্রধান। নোট বাতিল নিয়ে আগেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। ৩০ ডিসেম্বরের পর মানুষের ভোগান্তি দূর না হলে বিজেপির বিরুদ্ধেই বড় জেহাদে নামার হুঙ্কারও দিয়ে রেখেছেন উদ্ধব।
এমন এক দ্বৈরথের আবহে কাল শিবাজি মূর্তির শিলান্যাসে যাচ্ছেন মোদী। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, উদ্ধব যাবেন ওই অনুষ্ঠানে। বিজেপি সূত্রের মতে, শিবাজির এত বড় মূর্তি— যা কি না ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’র থেকেও উঁচু হবে, তার শিলান্যাস উদ্ধব এড়িয়ে যাবেন এটি সম্ভব নয়। কিন্তু শিবসেনা-প্রধান বুঝতে পারছেন, ছত্রপতির ছত্রচ্ছায়াও বুঝি এ বার হাতছাড়া হতে বসেছে। গত বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই মোদীর দল শিবাজি-মূর্তি নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে। আগামিকাল মুম্বইয়ের অনুষ্ঠানে মোদী অবশ্যই এ কথা মনে করিয়ে দেবেন যে, শিবাজিকে নিয়ে কথা রেখেছেন তাঁরা। বুঝিয়ে দিতে চাইবেন, মরাঠা-গর্ব শিবাজি আসলে তাঁদেরই!